বাবা-মায়ের সবচাইতে প্রিয় হলো নিজের সন্তান। আর সন্তানকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বাবা-মা সব কিছুই করতে পারেন। তাই ছোটবেলা থেকেই চেষ্টার কোনো কমতি থাকে না কোনো কিছুর। পড়াশোনা, খেলাধুলা, আদব-কায়দা শেখানো, সামাজিকতা শেখানোসহ খুঁটিনাটি সব বিষয়েই খেয়াল রাখেন তারা। কিন্তু আপনি কি খেয়াল করছেন যে আপনার সন্তান বয়সের সাথে সাথে সবার সাথে মিশতে শিখছে কিনা?
সবার শেখার ক্ষমতা একরকম না। আর তাই কিছু শিশু একটু দেরীতে শিখে। বিশেষ করে একক পরিবারে কর্মজীবি বাবা-মায়ের সন্তানদের সবার সাথে মিশতে সমস্যা হওয়া, সমবয়সী শিশুদের সাথে খেলতে না চাওয়া, কথা কম বলা, বাসায় মেহমান এলে পালিয়ে যাওয়াসহ আরো নানা রকম সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে শিশুর প্রয়োজন বাবা-মায়ের সহযোগিতা। অনেক ক্ষেত্রে বাবা মায়েরা সন্তানকে এসব কারণে বকা দেন কিংবা অন্য শিশুর সাথে তুলনা করেন। এতে সন্তানের আত্মবিশ্বাস আরো কমে যায় এবং সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেন। জেনে নিন এক্ষেত্রে কি করা উচিত সেই সম্পর্কে।
[picture]
- খেলনা ছাড়া কিছু খেলা খেলুন সন্তানের সাথে। যেমন ছোঁয়াছুঁয়ি, কানামাছি, ইচিং-বিচিং, লুকোচুরি ইত্যাদি। এই ধরণের খেলাগুলো নিয়মিত খেললে আপনার সন্তান আপনার সাথে আই কন্টাক্ট করতে পারবে সহজেই এবং আপনি কি বলছেন সেটা অনুসরণ করতে পারবে। আপনার সাথে সহজভাবে খেলতে পারলে কাছের আত্মীয়দের কিংবা বন্ধুদের বলুন তার সাথে এভাবে খেলার জন্য। ধীরে ধীরে সহজভাবে মিশতে শিখে ফেলবে আপনার সন্তান।
- প্রতিদিন হয়তো কাজের ব্যস্ততায় খোলা যায়গায় বেড়াতে যাওয়া হয় না সন্তানকে নিয়ে। কিন্তু আপনার সন্তানকে নিয়ে সপ্তাহে অন্তত একটা দিন বেড়িয়ে আসুন খোলা মাঠে কিংবা পার্কে। দৌড়ানো, সাইকেলিং কিংবা সন্তানের হাত ধরে হেটে বেড়ান কিছুক্ষণ। অনেক মানুষের জনসমাগমে নিয়ে যান সন্তানকে। এতে আপনার সন্তান অপরিচিত মানুষ দেখলে ভীতিগ্রস্ত হবে না এবং নিজেকে সহজভাবে মেলে ধরতে পারবে।
- আপনার সন্তানের একটি পছন্দের সময় নির্বাচন করুন। সেটা গোসল, খাওয়া কিংবা ব্রাশ করা যেটাই হোক না কেন, সেই সময়টাতে তাড়াহুড়া করবেন না। ধীরে সুস্থে সন্তানের সাথে কথা বলার পাশাপাশি কাজটি করুন।
- একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করবেন না কিংবা প্রশ্নের উত্তরের জন্য তাড়া দিবেন না। সন্তানকে সময় দিন প্রশ্নটা বুঝে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করার জন্য। একই প্রশ্ন একটানা অনেকবার জিজ্ঞেস না করে প্রয়োজনে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে তারপর আবার জিজ্ঞেস করুন।
- ছড়া এবং গানগুলো কম্পিউটারে না ছেড়ে নিজেই গেয়ে শোনান সন্তানকে। সন্তানকে কম্পিউটার বা মোবাইল আসক্ত করবেন না কোনোভাবেই। এতে সে নিজেকে আরো বেশি গুটিয়ে ফেলবে।
- প্রতিটি বাক্য বলার পরে কিছুক্ষণ বিরতি দিন। এরপর খেয়াল করুন আপনার সন্তান বাক্যের প্রেক্ষিতে সাড়া দিচ্ছে কিনা। সাড়া দেয়ার পরে পরবর্তী বাক্য শুরু করুন।
- আপনার সন্তানের পছন্দের খেলা কোনটি সেটা খেয়াল করুন। পছন্দের খেলাটা সন্তানের সাথে আপনিও খেলুন এবং খেলার সময় সন্তানের সাথে খেলার ব্যাপারে কথা বলুন। যেমন বল খেলার সময় বলটা সন্তানের পছন্দ হয়েছে কিনা, বলটা কোন রঙের, বলটা দিয়ে কীভাবে খেলতে হয় এইসব বিষয়ে গল্প করুন সন্তানের সাথে।
আপনার সন্তান যদি এরপরেও আপনার কথা মন দিয়ে না শোনে, অন্যমনষ্ক থাকে, খেলাধুলা কম করে, আতঙ্কগ্রস্থ থাকে কিংবা অন্য যেকোনো অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে অবশ্যই অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন।ভালো থাকুন।
ছবি – ইয়াসির আরাফাত
লিখেছেন – নুসরাত শারমিন