রূপ সচেতন মেয়েদের জন্য বর্তমানে সেনসেটিভ ত্বক একটি বিশাল সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। এটি বর্তমানে খুব কমন একটি সমস্যা। অনেকে আছেন যারা ত্বকের একেবারেই যত্ন নেন না এবং অনেক রাফ বা ক্ষতিকারক প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন। এর ফলে ত্বকে সাময়িক সমস্যা হয়। কিন্তু তারা মনে করে থাকেন যে, তাদের ত্বক সেনসেটিভ। যারা ত্বক পরিষ্কার না করে ত্বককে সেনসেটিভ মনে করে থাকেন তাদের জন্য আমার এই আর্টিকেল না। কারণ ত্বক যত্ন বা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা হবেই। আমার আজকের লেখাটি তাদের জন্য যাদের ত্বক সঠিকভাবে পরিষ্কার বা যত্ন নেয়ার পরেও, অল্প কিছু উত্তেজক পর্দাথের সংস্পর্শে আসলে বিভিন্ন ধরণের রিঅ্যাকশন বা সমস্যা তৈরী করে। এই ত্বক যাদের তারা অনেক হতাশায় ভুগে থাকেন কেননা, রূপচর্চা শান্তিমত করতে পারেন না এবং সবসময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন।
সেনসেটিভ ত্বক কী?
সেনসেটিভ ত্বককে সংজ্ঞায়িত করা অনেক কঠিন। ডার্মাটোলজিস্ট, সায়েন্টিস্ট ও যারা এই ত্বকের ভুক্তভোগী তাদের, সবারই দৃষ্টিভঙ্গী ভিন্ন ভিন্ন এই সেনসেটিভ ত্বকের প্রতি। তবে সাধারণ কথায় বলা যায়, সেনসেটিভ ত্বক হচ্ছে তাই যা খুব সহজে উত্তেজিত হয় এবং যা ত্বকে হালকা থেকে খুব গভীর আকার ধারণ করে এবং ত্বকে বিভিন্ন এলার্জি বা র্যাশ-এর জন্ম দেয়।
সেনসেটিভ ত্বকের উপসর্গগুলো কী?
সেনসেটিভ ত্বকের উপসর্গ একেক জনের জন্য একেক রকম। তারপরও কিছু কমন উপসর্গ বলা হলো :
০১. যদি অনেক ধরণের কসমেটিক-এ ত্বক খুব সেনসেটিভ থাকে, বিশেষ করে যেগুলো খুব সুগন্ধিযুক্ত সেগুলোতে এলার্জি থাকে।
০২. সূর্যের আলোতে, বাতাসে গেলে বা তাপমাত্রার তারতম্য হলে বা খুব চাপে থাকলে যদি ত্বকে র্যাশ বা লাল লাল গোটা ওঠে।
০৩. ত্বকের যত্ন নেওয়ার সময় যদি কোন উপকরণ র্যাশ বা এলার্জি সৃষ্টি করে।
০৪. ত্বকের নীচে যদি ভেঙ্গে যাওয়া রক্তনালী দেখা যায়।
০৫. ত্বকের গঠনটি যদি খুব পাতলা হয় এবং
০৬. মুখের পোর-গুলো পাতলা হলে।
উপরের এইগুলো থাকলে বুঝবেন যে, আপনার ত্বক সেনসেটিভ।
সেনসেটিভ ত্বকের যত্ন কিভাবে নিতে হয়?
অনেকে তাদের সেনসেটিভ ত্বক নিয়ে হতাশায় ভুগেন। এই ত্বকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন তাই অনেকে ডাক্তারও দেখাতে চান না। কিন্তু এটা ঠিক না। আপনার উচিত্ হবে সবার প্রথমে একজন ভালো ডার্মাটোলজিস্ট বা ডাক্তারকে দেখানো। কারণ অনেক সময় শরীর অনেক অসুখের জন্য এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। যদি কোন রোগ না থাকে তখন ডাক্তার সেনসেটিভ ত্বকের উপযোগী বিভিন্ন টিট্রমেন্ট দিবেন যা ত্বকের উপযোগী। আপনার ত্বক ঠিক কোন কারণে সেনসেটিভ, কী করলে বেশি হয়, কোন খাবার খেলে হয় কিনা এসব কিছু মনে রাখবেন এবং ডাক্তারকে প্রত্যেকটি কথাই বলতে হবে।
এছাড়াও যেসব প্রোডাক্ট বা জিনিসে আপনার ত্বক ইরিটে্টেড হয়, সেগুলো এড়িয়ে চলুন টিট্রমেন্ট নেয়ার সময় এবং আপনার ত্বকের জন্য তৈরী নামি ব্যান্ড-এর বিভিন্ন প্রোডাক্ট ট্রাই করে দেখুন ও আপনার উপযোগী প্রোডাক্ট-টি চয়েস করুন। অনেক স্কিন ডিজিজ, সেনসেটিভ ত্বকের সাথে যুক্ত থাকে। যেমন– আর্টিকেরিয়া(urticaria), ডার্মাটোগ্রাফিজম(dermatographisms), রোসাসিয়া(rosacea)। যাদের ত্বক অতিরিক্ত সেনসেটিভ তাদের সাধারণত এই চর্মরোগগুলো থাকে। তাই চিকিত্সা করাবেন।
সেনসেটিভ ত্বকের যত্ন
০১. লেবু ও পানি দিয়ে তৈরী শরবত খাবেন।
০২. সানস্ক্রীন অবশ্যই ব্যবহার করবেন। কারণ সূর্যের আলো আপনার শত্রু। তবে নন কমেডোজেনিক এসপিএফ প্যারাবেন ও ফ্র্যাগনেন্স ফ্রী সানস্ক্রীন ব্যবহার করুন। নামিদামি ব্রান্ডগুলো সেনসেটিভ ত্বকের জন্য বিভিন্ন সানস্ক্রীন তৈরি করে থাকে। আপনি আপনার পছন্দমত ও ত্বকে মানিয়ে যায় এমন একটি কিনে নিবেন। তাই ৫০ পর্যন্ত এসপিএফ ব্যবহার করুন। এটি আপনাকে ইউভি রে থেকে ৯৭% পর্যন্ত প্রটেকশন দিবে।
০৩. আপনার ত্বকে সহনশীল প্রোডাক্ট-টি চয়েস করুন। এজন্য বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করে দেখুন কোনটি মানায়। সুগন্ধি সেনসেটিভ ত্বকের জন্য একটি খারাপ জিনিস। এটি এলার্জি সৃষ্টি করে। তাই বেশি সুগন্ধিযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না। আর যেই প্রোডাক্টই চয়েস করুন না কেন তাতে যেন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইমফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকে।
০৪. অ্যান্টি-ইমফ্ল্যামেটরি গুণসমৃদ্ধ খাবার যেমন– হলুদ, আদা, দারুচিনি খাবেন তরকারিতে। কারণ, এগুলো ত্বকের প্রদাহ হতে দেয় না এবং বলিরেখা ও দাগ না পরতে সাহায্য করে।
০৫. চিনি ও অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরী স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। মুখ ধুয়ে মশ্চারাইজার দিবেন।
সেনসেটিভ ত্বকে যা কখনোই করবেন না
০১.অতিরিক্ত স্ক্রাব দিয়ে মুখ ঘষবেন না। প্রতি ৮ থেকে ১৪ দিনে একবার স্ক্রাব করবেন।
০২.গরম পানি দিয়ে মুখ ধোবেন না।
০৩.পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ কোন প্রোডাক্ট ত্বকে ব্যবহার করবেন না। কারণ এটি ত্বকে প্রলেপ তৈরী করে এবং মুখের ক্ষত সারাতে দেয় না ও পুষ্টি পায় না ত্বক।
০৪. একি সময়ে অনেক ধরণের প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না বা প্রাকৃতিক কোন উপাদান ইচ্ছে মতো লাগাবেন না।
যদি নতুন কোন প্রোডাক্ট বা প্যাক ত্বকে লাগাতে চান তাহলে প্রথমে সেই প্রোডাক্টটি বা প্যাকটি আগে কানের পেছনে একটু লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন। এরপর পর্যবেক্ষণ করুন। ২৪ ঘন্টায় যদি ওই জায়গায় র্যাশ, এলার্জি বা লালচে হয়ে যায় তাহলে তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
তাহলে সেনসেটিভ ত্বকের অধিকারিণী যারা, তারা একটু খেয়াল করে ত্বকের যত্ন নিন। সচেতন হোন ত্বকের প্রতি আর থাকুন আত্নবিশ্বাসী!
ছবিঃ সাটারস্টক