রমজান মাসে সুস্থ ও এনার্জেটিক থাকার ৬টি উপায়!

রমজান মাসে সুস্থ ও এনার্জেটিক থাকার ৬টি উপায়!

roza

প্রত্যেক মুসলমান রমজান মাসে রোজা পালন করেন, যা এক মাস ব্যাপী চলে। এটি ফরয ইবাদত। এই সময়ে রোজাদার ব্যক্তি সিয়াম সাধনা করে, আল্লাহর হুকুম পালন করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করে থাকেন। রোজা রাখলে শারীরিক ও মানসিকভাবে রোজাদার উপকৃত হয়ে থাকলেও কিছু মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকতে পারে। এখন আপনাদের জানিয়ে দিবো রমজান মাসে সাধারণত কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে এবং এর থেকে সমাধানের উপায়, যাতে আপনি এই পবিত্র মাসে সুস্থ এবং এনার্জেটিক থাকতে পারেন।

রমজান মাসে স্বাস্থ্য সমস্যা

পানি শূন্যতা (Dehydration)

এই সময় সবচেয়ে বেশি যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো দেখা যায়, তার মধ্যে প্রধান হলো পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন। আপনি যদি রোজা ভাংগার পর পর্যাপ্ত পানি পান না করেন, তবে সারাদিন আপনার শরীর থেকে ঘাম এবং প্রস্রাবের ফলে যে পরিমাণ পানি বের হয়েছে, সেটা পূরণ হবে না। যার ফলে শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে যাবে। এতে করে মুখ শুকিয়ে যাবে, তৃষ্ণা, ক্লান্তি এবং মাথাব্যথার মতো লক্ষণ দেহে প্রকাশ পাবে।

রমজান মাসে স্বাস্থ্য সমস্যা

মাথাব্যথা, মাইগ্রেন

রমজানে আরেকটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হল মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন। এগুলো ডিহাইড্রেশন, পরিমিত ক্যাফেইন (চা/কফি) না নেওয়া অথবা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে হতে পারে। উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, আলো, শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং বমি বমি ভাব।

লো ব্লাড সুগার (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)

আপনি যখন রোজা রাখেন, তখন আপনার দেহে শক্তি তৈরির জন্য গ্লুকোজ (চিনি) ফুরিয়ে যেতে পারে, ফলাফল রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়। একে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথা ঘোরা, দূর্বলতা, বিভ্রান্তি এবং বিরক্তি।

কোষ্ঠকাঠিন্য

কেউ কেউ রমজানে খাদ্যাভ্যাস এবং পানি গ্রহণের পরিবর্তনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যায় ভুগতে পারে। মল ত্যাগ করতে অসুবিধা এবং পেটে ব্যথা হওয়া এর লক্ষণ।

বদহজম

ইফতারের সময় ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খাওয়ার ফলে বদহজম হতে পারে। সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে বুকে জ্বালাপোড়া, পেটে অস্বস্তি এবং বমি বমি ভাব।

বদহজম

রমজান মাসে সুস্থ থাকার টিপস

১) হাইড্রেটেড থাকুন

ইফতারের সময় প্রচুর পানি, ফলের শরবত, অন্যান্য তরল যেমন- ডাবের পানি, ভেষজ চা, দুধ খেতে পারেন। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ সেগুলো ডিহাইড্রেশন এর কারণ হতে পারে।

২) পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন

ফাইবার, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার বেছে নিন, যেমন হোল গ্রেইন, ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ। এই খাবারগুলো আপনাকে সারাদিন পূর্ণ ও প্রাণবন্ত রাখবে।

৩) চিনিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন

চিনি, প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট বা আল্ট্রা প্রসেস ফুড খাওয়ার ফলে ব্লাড সুগার বেড়ে যায়, যা ক্ষুধা বৃদ্ধি ও ক্লান্তির কারণ হতে পারে। রমজান মাসে এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন এবং খাওয়ার সময় স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো বেছে নিন।

৪) ধীরে ধীরে খাবার খেতে হবে

খাওয়ার সময় আপনি তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে নিন এবং প্রতিটি খাবারের স্বাদ বোঝার চেষ্টা করুন। খুব তাড়াতাড়ি করে খাওয়া হজমের সমস্যা এবং অতিরিক্ত খাওয়ার কারণ হতে পারে।

৫) নিয়মিত ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম রোজাদারদের এনার্জি লেভেল ঠিক রাখবে এবং মন ভালো রাখতেও সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে ঘরে বসে ইয়োগা করতে পারেন। তবে, রোজা রাখা অবস্থায় ভারি ওয়ার্কআউট এড়িয়ে চলুন, যা আপনাকে কাহিল করতে পারে।

৬) পর্যাপ্ত ঘুমান

ঘুম আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনে দিনের বেলা বিশ্রাম নেওয়ার কথাও বিবেচনা করুন।

রমজানে কারা স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষভাবে সচেতন থাকবেন?

গর্ভবতী নারী: রমজানে রোজা রাখার আগে হবু মায়েদের তাদের চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। গর্ভবতী নারী পরে রোজা কাযা করতে পারেন, যদি রোজা রাখা বাঞ্ছনীয় না হয় বা সদকা করা হয়।

ডায়াবেটিস রোগী: ডায়াবেটিস রোগীদের রমজানে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত এবং প্রয়োজনে তাদের মেডিসিন এবং ইনসুলিনের ডোজ সামঞ্জস্য করা উচিত। যদি রক্তে গ্লুকোজ খুব কমে যায় তবে অবিলম্বে তাদের রোজা ভাঙ্গতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তি: উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদের রমজানে অত্যধিক লবণ খাওয়া এড়াতে হবে, কারণ এটি রক্তচাপ বাড়াতে পারে।

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা: গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রমজান মাসে রোজা রাখার আগে তাদের চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। তারা পরে রোজা কাযা করতে পারে বা রোজা রাখা বাঞ্ছনীয় না হলে সদকা করতে পারে।

রোজা মানুষের শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্য ও আধ্যাত্মিক প্রতিফলনের জন্য বেশ উপকারী। এই পবিত্র মাসে আপনাদের সকলের স্বাস্থ্য ভালো থাকুক। মনে রাখবেন, সচেতনতাই সুস্থতার প্রথম ধাপ।

লিখেছেন- মাহমুদা আক্তার রোজী
ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট অ্যান্ড জেরোন্টোলজিস্ট, এক্সট্রা মাইল এইজ কেয়ার

ছবি- সাটারস্টক

1 I like it
0 I don't like it
পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort