হাই হিল ফ্যাশান সচেতন নারীদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই কথা অনস্বীকার্য যে হাই হিল পরলে অনেক বেশি স্মার্ট এবং ট্রেণ্ডী দেখায়। তবে সত্যি কথা কি জানেন, নিয়মিত মিষ্টি খাওয়া যেমন স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ, তেমনি নিয়মিত হাই হিল পরাটাও স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। মিষ্টি খাবার যেমন শুধুমাত্র উৎসবের জন্য রেখে দেওয়া ভালো, তেমনি শুধু বিশেষ কোনো কারণেই হাই হিল পরাটা উত্তম।
[picture]
গোড়ালির জন্য মারাত্মক ক্ষতি
পায়ের জন্য যে হাই হিল বেশ ক্ষতিকর, এটা জানা কথা। হাই হিল পরার কারণে গোড়ালিতে বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
গোড়ালি মচকে যাওয়া থেকে শুরু করে হাড়ে চিড় ধরার ঘটনাও অস্বাভাবিক নয়। শুধু তাই নয়, পায়ের বুড়ো আঙ্গুল এবং অন্যান্য আঙ্গুলের বিকৃতি ঘটার পেছনেও দায়ী হতে পারে হাই হিল নিয়মিত পরার অভ্যাস। এটা তখনই বেশি হতে দেখা যায় যখন পায়ের জন্য হাই হিল জুতোটা বেশি টাইট হয়ে থাকে।
হাই হিলের উপকারিতা
হাই হিলের সব যে শুধু অপকারিতা তা নয়। এর কিছু উপকারিতাও আছে। যেমন কম উচ্চতার মেয়েদের মনের ইচ্ছা পূরণ করে দেয় বিনা কোন ঝামেলা ছাড়াই। এছাড়া শুধু খাটো নয় দেখবেন লম্বা মেয়েদের মাঝেও হাই হিল পরার একটি প্রবণতা আছে। এর একটি কারণ হল এটি আপনাকে একটি স্টাইলিশ লুক দিবে। এছাড়া হাই হিল আপনার বডি পসচারকে আকর্ষণীয় করে তোলে। এমনকি আমাদের মধ্যে যারা পাশ্চাত্য দেশের আদলের কাপড় পরেন তাদের পোশাককে কমপ্লিমেন্ট করতে হাই হিলের তো জুড়ি নেই।
নিচু হিলের উপকারিতা
আপনার কাছে যদি ৪ ইঞ্চি এবং ২ ইঞ্চি হিল পরার অপশন থাকে এবং আপনি যদি হয়ে থাকেন ফ্যাশন সচেতন, তাহলে হয়তো আপনি ৪ ইঞ্চি হিল পরতে চাইবেন। আসলে কিন্তু কম উচ্চতার হিলটাই আপনার জন্য ভালো। এতে আপনার পায়ের সামনের দিকটা সুস্থ থাকে। শুধু তাই নয়, হিলটা যদি হয় স্টিলেটোর মতো চিকণ, তাহলে সেটা বেশি ক্ষতি করবে। এর চাইতে একটু মোটা হিলের জুতা পরুন, তাতে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকবে, সহজে পা ফসকাবে না, মচকাবেও না।
খুব বেশি হাই হিলের কারণে বেশ গুরুতর কিছু শারীরিক সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে, যেমন প্ল্যান্টার ফ্যাসিটিস এবং একিলিস টেন্ডনাইটিস। শুধু তাই নয়, মর্টন’স নিউরোমা নামের একটি স্নায়বিক রোগও হতে পারে নিয়মিত হাই হিল পরার দোষে। হাই হিল পরতে পরতে যদি পায়ের ব্যাথা কয়েক দিনের বেশি সময় ধরে কষ্ট দেয়, তাহলে ডাক্তার দেখানোটা জরুরী।
হাই হিল পরার কারণে পুরো শরীরের ভার আপনার পিঠের দিক টায় পড়ে। যার কারণে আপনার ব্যাক পেইন অনুভূত হতে পারে। তবে ব্যায়াম বা ইয়োগা আপনাকে এই ধরনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
লেগ স্প্রাইনের সাথে আমারা অনেকেই হয়ত পরিচিত। মহিলাদের মাঝে এর প্রধান কারণ হাই হিল। যদি কারও হাই হিল পরার অভ্যাস না থেকে থাকে তবে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই যখন হিল পরবেন চেষ্টা করবেন ধীরে হাঁটার এবং এক্সট্রা যত্ন নিয়ে হাঁটবেন।
এক জোড়া “পারফেক্ট” জুতোর খোঁজ
পায়ের এতো সব সমস্যা এড়ানোর জন্য দুটো কাজ করা যায়। হয় জুতো পরা একেবারেই ছেড়ে দিতে হবে, অথবা নির্বাচন করতে হবে আরামদায়ক এবং স্বাস্থ্যকর জুতো। এখনকার ব্যস্ত সময়ে যেহেতু জুতো পরা বাদ দিয়ে বাসায় বসে থাকার কোনো উপায় নেই সুতরাং আমাদের দরকার নিজেদের পায়ের জন্য “পারফেক্ট” জুতো নির্বাচন। যেহেতু অনেক শখ করে জুতো কিনে থাকেন নারীরা, সুতরাং এই জুতো যাতে পায়ের ক্ষতি না করে তার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া জরুরী। আসুন দেখে নেওয়া যাক সঠিক জুতো নির্বাচনের কিছু টিপস:
- আমাদের পায়ের মাপ সব সময়ে এক নাও থাকতে পারে। তাই প্রতিবার জুতো কেনার আগে পায়ের মাপ নিয়ে নিন।
- একেক ব্র্যান্ডের জুতোর মাপ একেক রকম হয় সুতরাং জুতোর সাথে পা ঠিক খাপ খাচ্ছে কিনা দেখে নিন।
- জুতো পায়ে দিয়ে দেখার জন্য উঠে দাঁড়ান এবং হেঁটে দেখুন।
- একজোড়া জুতো পায়ে দিয়ে যদি মনে হয় সেগুলো বেশি টাইট, তার পরেও অনেকে কিনে ফেলেন এই মনে করে যে পরতে পরতে জুতো ঢিলে হয়ে যাবে। এই কাজটা করলে পায়ের সমস্যা হবার সম্ভাবনা বেশি এবং বেশিরভাগ জুতো আসলে ঢিলে হয় না।
- জুতো কিনতে যাওয়ার জন্য সবচাইতে ভালো সময় হলো বিকেল বেলা। এ সময়ে পায়ের আয়তন সবচাইতে বেশি থাকে।
- হিল যদি কিনতেই হয় তাহলে পায়ের আঙ্গুল বের হয়ে থাকে এমন হিল কিনুন অথবা সিলিকন হিল কাপ ব্যবহার করুন যাতে পায়ের ওপর হিলের ক্ষতিকর প্রভাব কম পড়ে।
তবে একেবারেই হিল পরবেন না সেকথা আমি বলছি না। শুধু মাত্র উপরের টিপসগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন আর খুব বেশি প্রয়োজন না হলে হাই হিল এড়িয়ে চলাই ভালো।
ছবি – লাইকসলল ডট কম
লিখেছেন – রোজেন