আমরা ঘুমের মাঝে বিভিন্ন রকম স্বপ্ন দেখি। কোনটা দেখে মন ভালো হয়ে যায় আবার কোনটা দেখে ভয় পাই, মন খারাপ করে বসে থাকি। এই স্বপ্ন নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন কুসংস্কার। যেমন ছোট বেলায় অনেক কেই বলতে শুনতাম ঘুমিয়ে পড়লে নাকি ডাইনি বুড়ি এসে জাদু করে আমাদের স্বপ্নের মাধ্যমে ভয় দেখায়। কিন্তু আসলেই কি তাই? না। ভালো খারাপ যে স্বপ্নই আমরা দেখি না কেন, কোন টির পেছনেই রূপকথার সেই ডাইনি বুড়ির হাত নেই। তাহলে কেন আমরা স্বপ্ন দেখি? এর ফলাফল কী। প্রচলিত তথ্য গুলো আসলে কত টুকু সঠিক?? চলুন তাহলে স্বপ্ন সম্পর্কে ভুল এবং সঠিক তথ্যগুলো জেনে নিই।
০১ স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করা যায়ঃ
আপনি চাইলেই আপনার স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। স্বপ্ন আমরা এমনি এমনি দেখি না। আসলে আমরা সারা দিন যা করি, বা যেটা নিয়ে খুব বেশি ভাবি সেটাই আমরা স্বপ্নে দেখি। তাই আপনি ঘুমোতে যাবার আগে যদি কোন একটা বিষয় বা ঘটনার উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ আনতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনি সেই বিষয়ক স্বপ্নই দেখছেন। যেমন কেউ কোন কারণে ভয় পেলে সে কয়েকদিন ঐ ব্যাপারেই স্বপ্ন দেখতে থাকে। যেহেতু সব সময় তার মাথায় ভয়ের ব্যাপারটা কাজ করে তাই ঘুমের মাঝেও সেই চিন্তাটা স্বপ্ন রূপে দেখা দেয়। আবার অনেকেই স্বপ্নের মাঝেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তারা স্বপ্নের মাঝেই বুঝতে পারেন যে তারা স্বপ্ন দেখছেন এবং স্বপ্নের কাহিনী বদলে দিতে পারেন!! একে বলে “lucid dreaming”
০২ স্বপ্ন কি সবাই দেখে?
অনেকেই বলেন যে তারা স্বপ্ন দেখেন না। কিন্তু এটা ভুল ধারনা। সবাই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু অনেকেই তা ঘুম থেকে উঠে আর মনে করতে পারেনা। তখন তার মনে হয় যে সে হয়ত কখনও কোন স্বপ্নই দেখেনা।
০৩ স্বপ্নে মৃত্যু দেখা মানে কি আয়ু কমে যাওয়া?
স্বপ্নে নিজের বা অন্য কারো মৃত্যু দেখলে কখনই আপনার বা যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন তার আয়ু কমে যাবে না। এরকম স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলে শান্ত পরিবেশে মনে করার চেষ্টা করুন আপনি ঘুমানোর আগে সংবাদ মাধ্যম, বা কোন নাটক, মুভি তে, অথবা বাস্তবে কারো মৃত্যু সংক্রান্ত ঘটনা দেখেছেন কিনা বা শুনেছেন কিনা। কারণ সাধারণত এরকম কারণেই অনেকে মৃত্যু সংক্রান্ত স্বপ্ন দেখেন।
০৪ অফিস বা ক্লাস রুমে খন্ডকালীন স্বপ্নঃ
অফিস বা ক্লাস করার সময় হয়ত খুব অল্প সময়ের জন্য ঝিমুনি এসে গেলো আর এরকম আধা জাগা আধা ঘুমের মধ্যে আপনি খুব ছোট একটা স্বপ্ন দেখে চমকে উঠেন বা ঝিমুনি কেটে গেলো। অনেকেই এর জন্য দোষ দেন অফিসের কাজ বা ক্লাস কে বোরিং বলে। প্রায়ই আমরা বলতে শুনি ‘ক্লাস টা এতো বোরিং, ঝিমুনি এসে যায়।’ না। আসলে শিক্ষক এবং ক্লাস কোনটাই বোরিং নয়। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবেই এমন টা হয়।
০৫ স্বপ্নের মাধ্যমে অন্য জায়গায় যাওয়াঃ
একটি প্রচলিত কুসংস্কার হলো- কেউ অনেক্ষণ একই ভাবে ঘুমাতে থাকলে, নড়া চড়া না করলে বুঝতে হবে যে সে স্বপ্নের মাধ্যমে অন্য কোন জগতে আছে। অর্থাৎ তার শরীর এক স্থানে, মন আরেক স্থানে। যে কাজ জেগে থেকে করা যাচ্ছে না তা ঘুমানোর পর স্বপ্নের মাধ্যমে করা সম্ভব। কিন্তু আসলে বিশেষজ্ঞদের মতে সব মানুষেরই ঘুমানোর সময়ে অন্তত ২ ঘণ্টা তার শরীর প্যারালাইজড হয়ে থাকে। এটা স্বাভাবিক। এই প্যারালাইজড হওয়ার সাথে অন্য কোথাও স্বপ্নের মাধ্যমে চলে যাওয়ার সম্পর্ক নেই।
দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন বা কীভাবে এর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিবেন?
শরীর এবং মন ২ টির কারণেই স্বপ্নের উপর প্রভাব পড়ে। দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পেতে হলে তাই শরীর ও মন ঠিক রাখতে হবে। এর জন্য নীচের নিয়ম গুলো মেনে চলতে পারেন –
০১. ঘুমানোর আগে ভালো কিছু চিন্তা করুন। সেটা হতে পারে আপনার কোন প্রিয় স্মৃতি, প্রিয় কোন কাহিনী বা আপনার প্রিয় মানুষ। ঘুমানোর আগে ভয়ের বা নৃশংস কোন ঘটনা সংক্রান্ত গল্পের বই পড়া , সেরকম মুভি বা সংবাদ দেখা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখুন।
০২. ঘুমানোর আগে আপনি সারা দিনে কয়টা ভালো কাজ করলেন সেই ব্যাপারে ভাবতে থাকুন। ফলে আপনার মন ভালো থাকবে। মনে ভালো চিন্তা আসবে এবং দুঃস্বপ্নের হাত থেকে বেঁচে যাবেন।
০৩. বেশি রাত জাগবেন না।
০৪. মনের মাঝে চেপে রাখা বিভিন্ন কষ্ট, ভয়, ব্যর্থতা, কাজের চাপ, পড়ালেখার চাপ দুঃস্বপ্ন দেখার একটি অন্যতম কারণ। তাই এমন অবস্থায় ডাইরি লেখার অভ্যাস করতে পারেন ফলে মন হালকা হবে। অন্তত ৫ মিনিট লেখার অভ্যাস করুন।
০৫. ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে থেকে সেলফোন ব্যবহার, কম্পিউটার, টিভি বন্ধ করে দিন।
০৬. স্বপ্ন বিশ্লেষণের বই গুলোর উপর নির্ভর না করে নিজে চিন্তা করে দেখুন আপনি কেন দুঃস্বপ্ন দেখছেন। একটি কালো বিড়াল স্বপ্নে দেখা মানেই কি অশুভ কিছু হতে যাচ্ছে?? না। হয়ত কোন নির্জন দুপুরে হঠাৎ কোন কালো বিড়াল দেখে চমকে উঠেছিলেন আর সেই ভয়টি মনের ভেতর রেখে দিয়েছেন যা পরে স্বপ্নে দেখেছেন।
০৭. আপনার খুব বিশ্বস্ত বা কাছের মানুষের সাথে দুঃস্বপ্ন বা যে কোন স্বপ্ন নিয়েই আলোচনা করতে পারেন। এতে কারণ দ্রুত বের হয়ে আসতে পারে।
০৮. অনেকেই ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন দেখেন আর এই ভয়েই ঘুমাতে পারেন না ঠিক মত। এক্ষেত্রে দুঃস্বপ্নের কারণে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আপনি ফোনে তা রেকর্ড করে রাখতে পারেন। আজকাল সব ফোনেই ভয়েস রেকর্ডের সুবিধা রয়েছে। ব্যাপারটা হাস্যকর মনে হলেও করা উচিত। কারণ দুঃস্বপ্ন দেখার পর পর অনেকেই শান্ত ভাবে চিন্তা করতে পারেনা। তাই রেকর্ড করা স্বপ্নের ঘটনা টি ৭/৮ ঘণ্টা পরে বা ২/১ দিন পরে আবার শুনুন। যে স্বপ্নটি ভয়ংকর মনে হয়েছিল সেটাই ৭/৮ ঘণ্টা পরে যখন শুনবেন আপনার নিজের কাছেই ব্যাপারটা এত সিরিয়াস মনে হবে না। হয়ত নিজেকে নিয়েই হাসবেন ভেবে যে ”এটা কী দেখলাম?!” এভাবে কয়েকবার ফোনে দুঃস্বপ্নের বর্ণনা রেকর্ড করে পরে শুনুন। আপনার ভয় কেটে যাবে।
লিখেছেনঃ সাবরিনা
তথ্যসূত্রঃ ওয়েবএমডি.কম , উইকিহাও.কম
ছবিঃ ডিভাইনক্যারোলিন.কম