অফিসের কম্পিউটারে একটানা তাকিয়ে থাকতে থাকতে মাথা ধরে গেছে? ভাবুন তো, চোখ ফেরালেই যদি সবুজ দেখা যেত তাহলে কি কিছুটা আরাম মিলতো না? সবুজ প্রকৃতির মাঝে থাকলে কিন্তু খারাপ লাগা অনেকটাই কমে যায়। যেহেতু কাজের জন্য আমাদের অনেকটা সময় কর্মক্ষেত্রেই কাটাতে হয়, তাই চাইলেই সবুজের কাছে ছুটে যাওয়া যায় না। কিন্তু যদি মনিটরের পাশেই ছোট্ট একটা গাছ রাখা থাকে তাহলে চোখের আরাম মিলবে অনেকটাই। তবে শুধু অফিস কেন আমরা যারা কলেজ কিংবা ভার্সিটিতে পড়ি তাদেরও অনেকটা সময় ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে বসে কাজ করতে হয়। কিন্তু একবারও কি এর সাইড ইফেক্ট এর কথা চিন্তা করি? অবশ্য চিন্তা করেই বা কী হবে! বিভিন্ন কারণে আমাদের স্ক্রিনের সামনে থাকতেই হয়। তাহলে কি কাজ বন্ধ রাখবো? মোটেও না! বরং একটু সচেতন তো হওয়াই যায়। এ জন্য টেবিলে রাখতে পারেন কিছু গাছ।গাছ দিয়ে কম্পিউটার টেবিল ডেকোরেশন এর কয়েকটি আইডিয়াই জানাবো আজ।
নিয়মিত স্ক্রিনের সামনে থাকলে কী কী ক্ষতি হয়?
মাথা ব্যথা
অনেক সময় ধরে স্ক্রিনের সামনে কাজ করার পর মাথা ব্যথা হয়। এ জন্য অনেক সময় আমাদের ঘুম আসে না। কেমন যেন একটা অস্বস্তি লাগে। আমরা যখন ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কাজ করি তখন খুব কাছ থেকে মনিটর দেখি। যার ফলে এগুলো থেকে যে ক্ষতিকর রশ্মি নির্গত হয় তা আমাদের চোখের উপর খুব বাজে প্রভাব ফেলে। ফলে আমাদের মাথা ব্যথা অনুভুত হয়।
ড্রাই আই
সাধারণত কয়েক সেকেন্ড পর পর চোখের পাতা ফেলা হয়। কিন্তু আমরা যখন স্ক্রিনের সামনে কাজ করি, তখন অনেক সময় পর পর চোখের পাতা ফেলি। এর ফলে আমাদের চোখের ভেতর যে ন্যাচারাল পানি থাকে তা শুকিয়ে যায়। এর ফলে চোখ জ্বালা করা বা চুলকানো- এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।
দৃষ্টি শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া
আমরা বেশির ভাগ সময় কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এর ব্রাইটনেস অনেক বেশি দিয়ে কাজ করি। আর সাদা আলো চোখের জন্য খুব একটা ভাল নয়। অনেক সময় আমরা রাতে লাইট অফ করে কম্পিউটার এ বসে কাজ করি যা আমাদের চোখের জন্য খুবি ক্ষতিকর। রেগুলার এই কাজ করতে থাকলে দৃষ্টি শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার মতোও সমস্যা হতে পারে।
গাছ দিয়ে কম্পিউটার টেবিল ডেকোরেশন এর উপায়
বেশ কিছু সমস্যার কথা তো জানা হলো। এই সমস্যাগুলো অনেকটাই কমে যেতে পারে যদি ডেস্কে সবুজের সমাহার থাকে। কিন্তু কী ধরনের গাছ দিয়ে সাজাবেন টেবিল? চলুন এ বিষয়ে এবার কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক-
যেকোনো গাছই অফিসে বা বাসায় রাখা যায় না। বেশিরভাগ অফিস বা বাসা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত থাকে। প্রাকৃতিক আলো-হাওয়াও প্রবেশ করে না তেমন। এ রকম পরিবেশে আকারে ছোট, কিছুটা লতানো আর দেখতে বাহারি—এ রকম গাছগুলোই রাখা হয়। এ ধরনের কিছু গাছ হলো মানিপ্ল্যান্ট, হার্ট লিফ ফিলোডেনড্রন, পিস লিলি, লাকি ব্যাম্বু, অ্যারেকা পাম, পেপেরোমিয়া, অ্যান্থুরিয়াম ইত্যাদি। এছাড়া নানা রকম ক্যাকটাসও রাখা হয়। অনেকে শখের বসে বনসাইও রাখেন।
চলুন তাহলে কয়েকটি গাছ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
হার্ট লিফ ফিলোডেনড্রন
এটি এক ধরনের মানি প্ল্যান্ট জাতীয় লতানো উদ্ভিদ। আকারে ছোট বলে টেবিলের কোণায় এটি বেশ মানানসই। সিরামিক বা প্লাস্টিকের পটে রাখলে বেশ ভালোভাবেই গাছটি বড় হয়। এখন বেশিরভাগ পটের সাথেই প্লেট অ্যাটাচ করা থাকে। এতে পানি ঢাললেও টেবিল ভেজার সম্ভাবনা থাকে না। টেবিলও পরিষ্কার থাকে।
পিস লিলি
গ্রীষ্মের শুরুতে ফুল ফোটে এবং এক সপ্তাহ থাকে। ফুল বিবর্ণ হয়ে এলে বৃন্তসহ ফুল কেটে ফেলতে হয়। যদি ফুল না ফোটে, তবে কিছুটা উজ্জ্বল আলোতে নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু সরাসরি সূর্যালোকে নয়। এর পাতা চকচকে উজ্জ্বল সবুজ। গাছটি কিছুটা বিষাক্ত, তাই ফুল বা পাতা ছাঁটাইয়ের পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
লাকি ব্যাম্বু
অনেকের ধারণা, লাকি ব্যাম্বু সৌভাগ্য আনে, তাই এমন নাম। এই গাছটি মাটি ও পানি দুই জায়গাতেই হয়। যদি মাটিতে রাখেন তাহলে প্রতিদিন পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই। সপ্তাহে ২/৩ দিন পানি দিলেই হবে। আর মাটিতে না রাখলে পানিভর্তি পাত্র বা বোতলেও রাখতে পারেন। নতুন চারা দরকার? মাতৃ গাছের বাড়তি কাণ্ড কেটে পানিতে রাখুন। সপ্তাহ না যেতেই শিকড় গজাবে তাতে।
অ্যারেকা পাম
ডেস্ক, টেবিল, দরজার পাশে এবং সিঁড়ির গোড়ায় দারুণ মানায় অ্যারেকা পাম। আকারে প্রায় সাত ফুট লম্বা হয়, তবে গাছের আকার ছোট রাখতে চাইলে শুধু টবের আকারটা ছোট হলেই চলবে। সপ্তাহে একবার পানি দিলেই যথেষ্ট।
পেপেরোমিয়া
পেপেরোমিয়ার পাতা বেশ উজ্জ্বল। পাতার বেগুনি, সবুজ, লাল রঙের কিনারা, তরমুজের মতো ডোরাকাটা দাগ আর ঢেউখেলানো আকার দেখতে ভালো লাগে। এই গাছ চোখে যেমন প্রশান্তি দিবে, তেমনই ডেস্কে সাজালে দেখতেও ভালো লাগবে।
অ্যান্থুরিয়াম
সাদা, লাল, কমলা, গোলাপি বা বেগুনি রঙের ফুল উপহার দেবে অ্যান্থুরিয়াম। অতি শুষ্ক বা অতি আর্দ্র কোনোটাই এর পছন্দ নয়—চাই এ দুয়ের মাঝামাঝি। অফিসের ডেস্কে বা ঘরের টেবিলে বেশ ভালোভাবেই এটি বড় হয়।
ক্যাকটাস
ক্যাকটাসে খুব বেশি পানি দিলে এর গোড়া পচে যায়। সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন সামান্য পরিমাণ পানি গাছের গোড়ায় দিয়ে দিন। লক্ষ্য রাখুন পানি যেন জমে না থাকে।
বনসাই
টেবিলের কোণায় এরকম একটি বনসাই হলে কিন্তু খুব সুন্দর হয়। বাজারে বিভিন্ন গাছের বনসাই পাওয়া যায়। আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোনোটি কিনে আনতে পারেন।
গাছ দিয়ে কম্পিউটার টেবিল ডেকোরেশনের কয়েকটি আইডিয়া তো জানিয়ে দিলাম। এবার বলুন, আপনি কোন গাছটি বেছে নিচ্ছেন চোখের আরাম ও মানসিক প্রশান্তির জন্য? গবেষণা অনুযায়ী, গাছ কিন্তু স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে। এক কথায়, অফিসের ডেস্কে অল্প কিছু গাছ রাখলেই আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন অনেকটাই। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সবুজের সজীবতায় বাঁচুন।
লিখেছেন – পাপিয়া সুলতানা
ছবিঃ সাটারস্টক