সোজা জটহীন ঝলমলে চুল আমাদের সবারই বেশ পছন্দ। জন্মগতভাবে যাদের চুল সোজা তারা তো অবশ্যই ব্লেসড! কিন্তু যাদের চুল পুরোপুরিভাবে সোজা নয়, বেশ রুক্ষ এবং জট বেঁধে থাকে, তারাই জানেন সিল্কি-স্ট্রেইট চুলের মর্ম কি! আমরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে পার্লারে রিবন্ডিং করাতে চলে যাই, কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করাই, বিভিন্ন রকম এক্সপেন্সিভ হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্রোডাক্টস, হেয়ার সিরাম কিনি, হেয়ার স্ট্রেইটেনিং মেশিন কিনে ফেলি। আমার এক ছোটবোন তো একবার ওর মায়ের সাথে হেয়ার স্ট্রেইটেনিং আয়রন কিনে না দেয়ায় ঝগড়া করে কাপড় ইস্ত্রি করার আয়রন দিয়ে চুল আয়রন করতে গিয়ে হাতই পুড়িয়ে ফেললো! এত কিছুর পরেও কি হয় জানেন তো? বছরখানেকের মাথায় এই হুজুগের খেসারত দিতে বসা লাগে! রুক্ষ, নিষ্প্রাণ, ড্যামেজড চুল, আগাগুলো আয়রন করে করে ফেটে গিয়েছে, চুল মাঝখান থেকে ভেঙে ভেঙে পড়া যাচ্ছে। এবং তারপর যথারীতি হায়-হুতাশ করে আমরা আবার ও অনলাইন আর অফলাইনে ম্যাজিকাল চকচকে প্রোডাক্টের পিছনে একগাদা টাকা খরচ করতে চলে যাই। কি লাভ?
চুলটা গেল কার?
- আপনার!
টাকাটা গেল কার?
- আপনার!
ভুক্তভোগী কে?
- আপনি!
তাহলে কি করবেন? সোজা চুলের দরকার নেই? কিনবো না কোন দামী প্রোডাক্ট? ঈদে, পহেলা বৈশাখে পার্লারগুলোতে রিবন্ডিং এর আকর্ষণীয় মূল্য ছাড় দেখেও দৌড় দিবো না?
[picture]
আমাদের স্বভাব হচ্ছে আমরা মনে করি যা কিছু এক্সপেনসিভ সেটাই বেস্ট। তাই আফটারম্যাথ জেনেও আমরা চুল নিয়ে এত তুলকালাম কাণ্ড করে থাকি। অথচ আমাদের রান্নাঘরে আর ড্রেসিং টেবিলে থাকা খুব সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জিনিস দিয়ে যে ধীর গতিতে, কিন্তু কোন সাইড ইফেক্ট ছাড়াই সিল্কি, স্ট্রেইট, শাইনি আর হেলদি চুল পাওয়া সম্ভব আমরা সেটা অনেকেই জানি না, আর যারা জানি, তারা মানি না।
আমার চুল জন্মগতভাবেই ভীষণ সুন্দর ছিল। স্ট্রেইট, সিল্কি, জটহীন আর অনেক লম্বা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের চারপাশে পলিউশন বেড়েছে, আমরা যা খাই তাতেও ভেজাল, যা মাখি তাতেও ভেজাল। আর আমার সন্তান জন্মদানের পর অধিকাংশ মেয়েদের মতো আমার চুল ও তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। চুল অতিরিক্ত পড়ায় চুলের ভার কমে যায়, এবং নতুন যত চুল গজাচ্ছে সেগুলোর স্ট্রাকচার ও পুরোপুরি স্ট্রেইট না। তো আমি যেটা করা শুরু করলাম সেটা হল চুল ন্যাচারালি সোজা রাখার একদম সনাতন পদ্ধতি। সেটার জন্য আমি যা ব্যবহার করি তা হল নারকেল!
কি অবাক হচ্ছেন? নারকেল দিয়ে আবার চুল কিভাবে সোজা হয়? বলছি, দাঁড়ান!
- ৫০ এম.এল ১০০% পিওর কোকোনাট অয়েল (নারকেল তেল)
- দুই কাপ কোরানো নারকেল
- ছয় টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
- দুই টেবিল চামচ কর্ণফ্লাওয়ার
- তিন টেবিল চামচ লেবুর রস
- ৬০ এম.এল. পানি
আগের রাতে সবগুলো চুলকে সেকশনে সেকশনে ভাগ করে পুরো মাথার স্ক্যাল্পে এবং চুলে, অর্থাৎ আগাগোড়া ভালো করে নারকেল তেল দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। পরদিন সকালে মাইল্ড কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিন। এবার ব্লেন্ডারে দুই কাপ কোরানো নারকেল, ছয় টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল আর ৬০ এম এল পানি দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। বেশ ঘন ক্রিমি স্ট্রাকচারের পেস্ট তৈরি হবে। ঐটা একটা পাতলা কাপড়ে ছেঁকে নিলেই নারকেলের দুধ (Coconut Milk) পেয়ে যাবেন।
এবার আরেকটা পাত্রে কর্ণফ্লাওয়ার আর লেবুর রসের সাথে নারকেলের দুধটা ভালো করে মিশিয়ে নিন। একটা ছোট হাঁড়ি বা ননস্টিক প্যান চুলায় বসিয়ে একদম ধিমে আঁচে ঐ মিশ্রণটা আস্তে আস্তে জ্বাল দিতে থাকুন। বেশ ঘন ক্রিমি স্ট্রাকচারের হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করে মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হবার জন্য রেখে দিন।
এবার গায়ে কোন পুরাতন তোয়ালে পেঁচিয়ে পুরো মাথার চুলকে কয়েক ভাগে ভাগ করে ধীরে ধীরে আগাগোড়া পুরো চুলে লাগিয়ে নিন। লাগানো শেষ হলে চুল সোজা করে আঁচড়ে নিন এবং ঐ অবস্থাতেই রেখে দিন, কমপক্ষে এক ঘণ্টার জন্য। এ সময় চুল বাঁধবেন না, চেষ্টা করবেন সোজা অবস্থায় রাখতে। তারপর বেশি করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল শুকিয়ে গেলে আবার আগাগোড়া নারকেল তেল মেখে ঘুমিয়ে যান। পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন। চুল আঁচড়ে কি দেখতে পাচ্ছেন?
সিল্কি, স্ট্রেইট, জটহীন, ঝলমলে চুল! সপ্তাহে অন্ততপক্ষে দুই-তিন দিন নিয়মিত প্যাকটি ব্যবহার করেই দেখুন। তিন-ছয় মাসের মধ্যে আপনার অবাধ্য চুলগুলো বাধ্য হয়ে উঠবে for sure. পার্লারে আর মার্কেটে দৌড়াতে ও হবে না। আর হেয়ার স্ট্রেইটেনিং আয়রন দিয়ে চুলকে রেগুলার বেসিসে তন্দুরি ও বানাতে হবে না। শুধু প্রয়োজন একটু সময় আর ধৈর্য! দিনশেষে কিন্তু চুলের বেস্ট ফ্রেন্ড তেলই। তেল বিনা কোন সাইড ইফেক্টে প্যাকটির ১০০% ইফেক্টিভিটির জন্য চুলকে প্রস্তুত করবে। তাই দিনশেষে কিন্তু ন্যাচারাল প্রোডাক্ট-গুলোই আপনার চুল আর ত্বকের বেস্ট ফ্রেন্ড।
Stay Beautiful, Stay Gorgeous.
লিখেছেন – ফারহানা প্রীতি