কার্লি ফ্যাশানের যুগ চললেও এখনও অনেকেই স্ট্রেইট চুল এর ভক্ত আছেন যারা এখনও রিবনডিং করার জন্য পার্লারে ছুটে যাচ্ছেন বা স্ট্রেইটনার দিয়ে চুল সোজা করছেন। এক ঘেয়েমি কোঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো স্টাইল আপনার লুকটাকে বোরিং করে তুলছে। তাই যদি এমনটি হয় কোন রকম কেমিকেল বা হিট ছাড়াই আপনি পেয়ে যাচ্ছেন আপনার মনের মত হেয়ার স্টাইল তাহলে কেমন হয় বলুনতো? সহজলভ্য ঘরোয়া উপাদান যা আপনার হাতের কাছেই আছে! এই উপাদানগুলোকে কাজে লাগিয়ে আজ দেখাবো কিভাবে আপনি প্রাকৃতিকভাবে সোজা চুল পেতে পারেন!
প্রাকৃতিকভাবে সোজা চুল পাবার উপায়সমূহ
(১) নারকেল দুধ এবং লেবু
তাজা নারকেল দুধে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটিকে কয়েক ঘণ্টার জন্য ফ্রিজে সংরক্ষন করুন। একটি ঘন ক্রিমি লেয়ার দেখা যাবে পাত্রের উপরে। এই লেয়ারটাই দরকার চুল সোজা করার জন্য। পুরো চুলে এটি লাগিয়ে নিন এমনকি স্কাল্পেও লাগাবেন। ১৫-২০ মিনিট ধরে চুল টিকে স্টিম করুন। সব শেষে ধুয়ে ফেলুন সমস্ত চুল। এভাবে নিয়মিত করতে থাকলে আপনি ধীরে ধীরে দেখবেন আপনার চুল সোজা হতে শুরু করেছে।
(২) সেলেরি
কয়েকটি ফ্রেশ সেলেরি পাতা ক্রাশ করে নিন এবং পানিতে মিশিয়ে দিন। এরপর পানির ভেতর হাত দিয়ে পাতাগুলো আরও ভালো ভাবে কঁচলে নিন যেন পাতার নির্যাস পানিতে মিশে যায়। তারপর মিশ্রণটি বোতলে সংরক্ষণ করে রাখুন ১ দিন। এতে করে পাতার ভেতর চুল সোজা করার যে যে উপাদান আছে সব ভালো ভাবে ডেভেলপ করে।
প্রতিদিন গোসলের আগে স্ক্যাল্পে এই সলিউশন লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন তারপর শাম্পু করে ফেলুন। যারা বিদেশে থাকেন তাদের জন্য এই উপাদানটি খুঁজে পাওয়া কোন ব্যাপার না। কিন্তু আমার বাংলাদেশের সাজগোজ পাঠকদের হয়ত একটু সমস্যা হতে পারে। তাই আপনাদের অনুরোধ করবো আপনারা অন্য টিপস গুলো অনুসরন করুন।
(৩) দুধের পুষ্টি
আমরা সবাই জানি দুধ ময়েশরাইজারের কাজ করে আর এটিই চুল সোজা করার জন্য সহায়ক। ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নেয়া দুধ নিন আধা কাপ এবং আধা কাপ পানি দুধের সাথে মিশিয়ে নিন। এবার একটা স্প্রে বোতলে মিশ্রণটি ভরে সমস্ত চুলে স্প্রে করুন। তারপর আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
(৪) ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েল এ আছে চুলের গ্রোথ আর চুল সোজা করার গুনাগুণ। এই তেল চুলের স্কাল্পে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করুন, তারপর চিরুনি দিয়ে চুল বরাবর আঁচড়াতে থাকুন। যখন চুল আঁচড়াবেন তখন ব্লো ড্রাই করুন হাই হিটে। ব্লো ড্রাই করার পর চুলে যেন তেলতেলে ভাব না থাকে, চুল হতে হবে শুষ্ক। তারপর একটি ভেজা তোয়ালে দিয়ে চুল জড়িয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা ধরে। এটা চুলকে অতিরিক্ত হিট থেকে রক্ষা করবে আর স্ট্রেইটনেস বজায় থাকবে।
(৫) মধু এবং দুধ
এই কম্বিশন শুধু ত্বকের জন্য নয় চুলের জন্য-ও ম্যাজিকের মত কাজ করে। এক চামচ মধুর সাথে এক কাপ দুধ মেশান। সঙ্গে কয়েকটি স্ত্রাবেরও ক্রাশ করে দিন। এই পেস্ট ২-৩ ঘণ্টা চুলে লাগিয়ে রাখুন, তারপর ভালো মানের শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে সপ্তাহে ২-৩ দিন করুন সিল্কি , স্টেইট চুলের জন্য।
(৬) মুলতানি মাটি, ডিম ও চালের গুঁড়োর মিশ্রণ
ফুলারস আর্থ তো আমরা সবাই চিনি। কিন্তু এতো দিন জানতাম এটি ত্বকের ডীপ ক্লিনজিং এর জন্য ব্যবহার করা হয় কিন্তু এটি চুলের যত্নেও অনন্য। এক কাপ মুলতানি মাটির সাথে একটি ডিমের সাদা অংশ, দুই চামচ চালের গুঁড়ো আর পানি মেশান।
মিশ্রণটি অনেক পাতলা হতে হবে যাতে সমস্ত চুল কোট করা যায়। চুলে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রাখুন আর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে থাকুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এটি করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার কোঁকড়া চুল কেমন সোজা হয়ে আসছে।
(৭) বানানা হেয়ার প্যাক
• দুটি ম্যাশড কলার সাথে দুই টেবিল চামচ মধু, দই এবং অলিভ অয়েল আর ১টি ডিমের সাদা অংশ মেশান। এই প্যাক পুরো চুলে লাগিয়ে মাথায় একটি শাওয়ার ক্যাপ পরে ফেলুন। তারপর ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবেও আপনার চুল অনেকটা সোজা দেখাবে।
• ৩ তেলের সংমিশ্রণ – উষ্ণ গরম অলিভ অয়েল, নারকেল তেল আর ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে আধা কাপ মিশ্রণ তৈরি করুন। এর সাথে আধা কাপ অ্যালোভেরা জেল মেশান, তারপর ৬ ফোঁটা এসেন্সিয়াল অয়েল মেশান। চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ১-২ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।
অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে বা দুটি ফিজিক্যাল শপ যা যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত সেখান থেকেও গিয়ে কিনতে পারেন।
অনেকদিন যাবত চুল সোজা করার জন্য আমাদের দেশের নারীরা কেমিক্যাল বা হিটের সাহায্য নিয়ে আসছেন। উপরে দেয়া টিপসগুলো ফলো করুন অবশ্যই উপকার পাবেন সঙ্গে বোনাস হিসেবে থাকবে আপনার চুলের নিরাপত্তার গ্যারান্টি। তবে যথেষ্ট ধৈর্য ধরতে হবে।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক