অফিস, ক্লাস অথবা দৈনন্দিন কাজের ব্যস্ততায় যারা আমার মতো চুলের যত্ন করার সময় পান না এবং যেটুকু সময় পান তাও মাথায় প্যাক লাগিয়ে বসে থাকতে করতে ইচ্ছা করে না, তাদের একমাত্র সম্বল হল তেল। তেল আমাদের মাথার স্কাল্পে পুষ্টি যোগায় এবং হেয়ার গ্রোথকে প্রোমোট করতে সাহায্য করে। এছাড়া তেল চুলের ভেতরে ঢুকে চুলের ড্যামেজ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। যার ফলে চুল পড়া এবং ভাঙা কমে যায়। যেমন আমার চুল টিকেই আছে এখন হেয়ার অয়েলের গুণে। কিন্তু খাঁটি তেল না ব্যবহার করতে পারলে কিন্তু চুলের কোনো উন্নতিই হবে না।
অনেকেই বাজার থেকে হুট করে তেল কিনে আনেন এবং ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয় না। উল্টো টাকাগুলো জলে যায়। ইউটিউব এ অনেক ম্যাজিক হেয়ার অয়েলের রেসিপি আছে, কিন্তু দেখা যায় একজন ব্যবহার করে উপকার পাচ্ছে অন্য জনের কোনো উপকারই হচ্ছে না। তেল কতটা খাঁটি তার উপরেও কিন্তু এইসব বিষয় নির্ভর করে।
এখন অনেকেই প্রশ্ন করবেন যে, খাঁটি তেল কোথায় পাবো? এবং কীভাবে বুঝবো যে তেলটা খাঁটি?
উপায় তো আছেই! চুলের যত্নে নরমাললি যে তেলগুলো ব্যবহার করা হয়, তা হলো – কোকোনাট অয়েল, আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েল, আর্গান অয়েল। তো এইসকল তেলগুলো খাঁটি কিনা তা কীভাবে বুঝতে পারবেন সেটাই জানাবো আজ। তাহলে চলুন জেনে নিই এমন কিছু সহজ উপায় যা থেকে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন চুলের যত্নে যে তেলটি পরম বিশ্বাসে তুলে নিচ্ছেন তা আসলে কতটুকু খাঁটি।
[picture]
(১) কোকোনাট অয়েল
- আমরা সবাই-ই জানি যে, কোকোনাট অয়েল ঠান্ডায় জমে যায়। পিওর কোকোনাট অয়েল চেনার এই একটি বড় উপায়। এজন্যে কোকোনাট অয়েলকে ৩০ মিনিটের জন্যে ফ্রিজে রেখে দেখতে পারেন যে এটি পুরো জমে গেছে কিনা। পুরোপুরি জমে গেলে বুঝবেন তেলটি খাঁটি।
- পিওর কোকোনাট অয়েল একদম ওয়াটার ক্লিয়ার কালার হয়। যদি আপনি তেলের রঙ এ হালকা হলুদ / গ্রে কালার দেখতে পান তাহলে বুঝবেন এটি কেমিক্যালযুক্ত।
- পিওর কোকোনাট অয়েলে কোনো ধরনের স্ট্রং স্মেল থাকবে না। এতে হালকা ধরনের র (raw) নারিকেলের স্মেল থাকবে।
- শেষ উপায়টি হলো দাম। অবশ্যই এর জন্যে আপনাকে ভালো দাম দিয়ে কিনতে হবে। সস্তা কোকোনাট অয়েল কখনোই পিওর হবে না।
(২) আমন্ড অয়েল
- আমন্ড অয়েল ১০০% খাঁটি কিনা তা বোঝার জন্যে তেমন কোনো পদ্ধতি নেই। তবে খাঁটি আমন্ড অয়েল পেতে বোতলের গায়ে “সার্টিফাইড অরগ্যানিক ” লেখা আছে কিনা চেক করে নিন।
- কেনার সময় দেখে নিবেন অয়েল টি “কোল্ড প্রেশড” পদ্ধতিতে তৈরি কিনা।
(৩) অলিভ অয়েল
- অলিভ অয়েলের ক্ষেত্রেও আপনি করতে পারেন ফ্রিজ টেস্ট। এক্ষেত্রে অলিভ অয়েল একটি পাত্রে নিয়ে ২ ঘন্টার জন্যে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। ২ ঘন্টা পরে যদি দেখেন অলিভ অয়েল জমে শক্ত হয়ে গেছে অথবা লিকুইডই আছে, তাহলে আপনার অলিভ অয়েলটি খাঁটি নয়। যদি দেখেন যে এটি হালকা জমে গেছে অথবা ঘন হয়ে গেছে, তবেই বুঝবেন আপনার তেলটি খাঁটি।
- ২য় আর একটি টেস্ট করতে পারেন। অলিভ অয়েল কোনো পাত্রে নিয়ে এর উপরে আগুন জ্বালিয়ে দেখবেন। যদি অলিভ অয়েল কোনো ধোয়া ছাড়াই পুড়তে শুরু করে তবে আপনার অলিভ অয়েলটি খাঁটি।
(৪) আর্গান অয়েল
- বোতলের গায়ের ইনগ্রিডিয়েন্টস দেখুন। ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্ট যেন লম্বা না হয়। শুধুমাত্র ১০০% আর্গান অয়েল অথবা ১০০ আর্গানিয়া স্পিনোসা কার্ণেল অয়েল লেখা থাকলেই সেটা খাঁটি ধরা যায়।
- পিওর আর্গান অয়েলে খুবই বাজে ধরনের একটা স্মেল থাকে। যদি আপনার আর্গান অয়েলে খুবই সুন্দর অথবা কোনো স্মেলই না থাকে, তবে আপনার আর্গান অয়েল টি ১০০% পিওর নয়।
- পিওর আর্গান অয়েলের টেক্সচার খুবই স্মুদ এবং সিল্কি। খাঁটি আর্গান অয়েল কখনো স্টিকি বা খুবই ওয়াটারি হয় না।
এইতো জেনে নিলেন, কীভাবে তেলের বিশুদ্ধতা যাচাই করবেন। আশা করছি এখন থেকে চুলের যত্নে খাঁটি তেলটি চিনে নিতে পারবেন। ভালো থাকুন।
ছবি – অর্গানিকফ্যাক্টস ডট নেট, নিউট্রিশন্সফ্যাক্টস ডট অর্গ,
লিখেছেন – জান্নাতুল মৌ