প্রতিটি মেয়ে কম-বেশি তার রূপ নিয়ে সচেতন। নিজেকে কী করে সুন্দর করে উপস্থাপন করা যায় এজন্য অনুষঙ্গ হিসেবে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন প্রসাধনীর। নিজেকে সুন্দর করে তোলার এ উপকরণগুলোর যত্ন বা কতদিন পর্যন্ত সেটা ভালো থাকবে, সে সম্পর্কে জ্ঞান রাখাটা জরুরী। প্রসাধনী সাধারণত আপনি কোথায় সংরক্ষণ করেন? বাথরুম, শোবার ঘর, ফ্রিজে? কস্মেটিক্স যদি সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা না হয় তবে প্যাকেটের গায়ে দেখানো এক্সপায়ার ডেটের আগেই তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সব কস্মেটিক্সই তাপ, আর্দ্রতা এবং সূর্যালোকের সাথে বিক্রিয়া করে। চলুন আজ এ প্রসঙ্গে জেনে নেয়া যাক কিছু টিপস। প্রথমে দেখব কোন প্রসাধনী কোথায় সংরক্ষণ করা উচিত এবং কীভাবে করা উচিত।
-
প্রসাধনী সবসময় বড় বক্সে রাখুন। প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা খোপ ব্যবহার করুন।
-
বিশেষজ্ঞদের মতে ক্রিম ৫-২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা উচিত। এর চেয়ে কম তাপমাত্রায় তা শক্ত হয়ে যেতে পারে। আবার অনেক বেশি তাপমাত্রায় ক্রিম বেশি নরম হয়ে যায়, যা অবশ্যই আপনাদের কাম্য নয়।
-
কোনো প্রসাধনীর ঢাকনা খুলে রাখবেন না এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে তা ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বকে তিল হয়ে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
-
সরাসরি রোদ বা তাপ লাগে এমন জায়গায় প্রসাধনী রাখবেন না। এমনকি ফ্রিজেও রাখবেন না। এতে করে মেয়াদ শেষ হবার আগেই সেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
-
প্রসাধনী ব্যবহারের বিভিন্ন অনুষঙ্গ হিসেবে ব্রাশ, পাফ বা স্পঞ্জ এইসব নিয়মিত পরিষ্কার করবেন এবং না শুকানো পর্যন্ত তা ব্যবহার করবেন না।
-
নিজের ব্যবহার করা পাফ, স্পঞ্জ, তুলি অন্যকে ব্যবহার করতে দেবেন না এবং নিজেও অন্যেরটা ব্যবহার করবেন না। এতে করে কারও স্কিন ডিজিজ থাকলে তা অন্যের দেহে ছড়াবে না।
-
লিপস্টিক ফ্রিজে রাখলে অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। বেস্ট রেজাল্ট পেতে ফ্রিজে ৫ ডিগ্রীর বেশি তাপমাত্রায় রাখা উচিত। শুকিয়ে গেলে বা বাজে গন্ধ বের হলে সেই লিপস্টিক ব্যবহার করবেন না।
-
আই বা লিপ লাইনার পেন্সিল রুম টেম্পারেচারে রাখুন তবে সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখবেন। নিয়মিত শার্প না করলে তাতে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া জন্ম নিতে পারে। সুতরাং নিয়মিত শার্প করে নিতে হবে।
-
ওয়াটার বেজড ফাউন্ডেশন অনেক সময় মেয়াদ শেষ হবার আগেই শুকিয়ে যায়। এ থেকে রেহাই পেতে অ্যালকোহল ফ্রি টোনার কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নেবেন।
-
অয়েল বেজড ফাউন্ডেশন মাঝে মাঝে ঝাঁকিয়ে রাখবেন। এতে করে পুরোটা সমানভাবে মিশে থাকে।
-
যেকোনো পণ্যের গায়ে তা ব্যবহারের ও যত্নের বিশেষ কিছু নির্দেশনা লেখা থাকে। সেটা আগে পড়ে তারপর তা ব্যবহার করবেন।
-
চোখের জন্য যেসব মেক-আপ পণ্য ব্যবহার করা হয় তা সবচেয়ে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। যেমন- মাসকারা, সিল খোলার ৪ মাসের মধ্যে নষ্ট হতে থাকে। মাসকারা জমে গেলে কখনও পানি মিশিয়ে সেটা ব্যবহার করবেন না। তাতে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের ভয় থাকে। এছাড়া কোনো আলাদা পণ্য একসাথে মিশিয়েও ব্যবহার করবেন না।
-
পাউডার রুম টেম্পারেচারে সংরক্ষণ করা সম্ভব।
-
টোন ক্রিমগুলো আলো এবং আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখায় ভালো। তবে চাইলে ফ্রিজেও রাখতে পারেন।
-
ত্বকের যত্নের অন্যান্য প্রসাধনীগুলো ফ্রিজে রাখতে পারেন।
এবার জেনে নিই কোন প্রসাধনী কত দিন ব্যবহার করা উচিত-
১. ক্রিম: ১ বছর ব্যবহার করা যায়।
২. পাউডার: সাধারণত ২ বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকে।
৩. সানস্ক্রিন লোশন: সানস্ক্রিন লোশন ৬ মাস ব্যবহার করতে পারেন।
৪. কন্সিলার: কন্সিলারের মেয়াদ ১২ মাস বা ১ বছর পর্যন্ত হয়।
৫. ফাউন্ডেসন: ফাউন্ডেসনের মেয়াদ সাধারণত এর উপাদানের ওপর নির্ভর করে। যেমন- ওয়াটার বেসড হলে ১২ মাস পর্যন্ত এবং ওয়েল বেসড হলে ১৮ মাস পর্যন্ত নির্ভাবনায় ব্যবহার করতে পারি। পাউডার বেজড পণ্য ২ বছর ভালো থাকে।
৬. আইশ্যাডো: ৩ বছর পর্যন্ত আইশ্যাডোর মেয়াদ থাকে।
৭. মাসকারা: প্রসাধনীর মধ্যে মাসকারার মেয়াদ দ্রুত শেষ হয়। ৪ মাসের মধ্যে ব্যবহার না করতে পারলে, ৪ মাস পর এটিকে ফেলে দিতে হবে।
৮. আইলাইনার: ১২ মাস পর্যন্ত।
৯. লিপলাইনার: ৩ বছর।
১০. শ্যাম্পু: ১ বছর।
১১. লিপস্টিক: লিপস্টিকের মেয়াদ ১ বছর।
১২. নেইলপলিশ: ১২ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে আর ঠিকমত সংরক্ষণ করতে পারলে আরও কিছুদিন ভালো রাখা যায়।
১৩. ব্রাশ:
মেক-আপ ব্রাশ প্রতি ২-৩ মাস পরপর কুসুম গরম সাবান পানিতে বা সামান্য বেবি শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করবেন।
১৪. স্পঞ্জ:
প্রতি সপ্তাহে একবার করে ধুয়ে ১ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।
১৫. ক্রিম ও জেল কিনজারঃ
ফেসিয়াল কিনজার প্রায় ৬ মাস ভালো থাকে আর ফেসিয়াল টোনার নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন ১ বছর পর্যন্ত।
১৬. ব্লাশঅনঃ
এটি ভালো থাকে ৬ মাস পর্যন্ত।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজেদের ত্বক, চোখ, চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় নানা ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি আমরা। তবে প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা মেয়াদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ করি না। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রসাধনী ব্যবহারে সৌন্দর্য বাড়ার পরিবর্তে ত্বকের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
লিখেছেনঃ রোজেন
ছবিঃ লেডিস-মেট.নেট