সাদমান বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। বড় আদরেই মানুষ করেছে তাকে তার বাবা-মা। সকালে উঠেই সে ভার্সিটিতে দৌড় দেয়। ভার্সিটি শেষে বাসায় ফিরে, বিকেলে আবার বের হয় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। রাতে এসে পড়াশোনা আর ফেসবুকেই কেটে যায়।
অন্যদিকে, সাদমান বিয়ের অনেক বছর পরের সন্তান হওয়ায় তার বাবা- মায়ের বয়সটাও বলতে গেলে অনেকই হয়ে গেছে। সাদমান ব্যস্ত তার লাইফ নিয়ে। বাবা-মাকে সে ভালোবাসে না, তা কিন্তু নয়। তবে তাদের ঠিকমতো সময় দেয়া হয় না সাদমানের। এরকম অনেক গল্প রয়েছে আমাদের আশেপাশের পরিবারগুলোতে।
আমরা যখন নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত, তখন এটা মাথায় রাখতে হবে যে, আমাদের বাবা-মাও আস্তে আস্তে বৃদ্ধ হচ্ছে। মানুষের বয়স যতই বাড়ে, সে মনের দিক থেকে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে। আমাদের তো সময় কাটানোর জন্যে কতো বন্ধু বান্ধব, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি রয়েছে। তাঁদের আমরা ছাড়া কে আছে??
[picture]
আমাদের প্রত্যেকটা বিষয় তাঁরা খেয়াল রাখে, আমাদেরও তো উচিত তাঁদের বিষয়গুলো খেয়াল রাখার পাশাপাশি তাদের একটু সময় দেয়া।
হ্যাঁ, আমরা অনেক বেশী ব্যস্ত, কিন্তু আমরা চাইলেই একটু সময় বের করতেই পারি তাদের জন্যে। মা- বাবাকে খুশি রাখা, তাদের সময় দেয়া, তাদের ইচ্ছার প্রাধান্য দেয়া এগুলো আমাদের দায়িত্ব।
- দিনের শেষে বাসায় ফিরে আসার সময় মা-বাবার জন্য সামান্য কিছু নিয়ে আসুন, দেখবেন তারা কতটা খুশি হয়।
- পরিবারের সিদ্ধান্ত এবং ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করুন, তাদের পরামর্শ নিন। এতে তাঁরা আর নিজেদেরকে অসহায় মনে করবে না। তাঁরা ভাবতে পারবে, তাঁদের ইচ্ছা, পরামর্শকে আপনি এখনো কতো প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
- ছুটির দিন সবারই থাকে। তাদের ছুটির দিনে তাদের একটু বেশী সময় দিন। তাদের পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াতে পারেন, তাদের নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন।
- বাবা – মা চান, তাঁদের সন্তান উচু কোনো পর্যায়ে যাক, তবে তাঁরা আপনাকে কখনো একেবারেও হারাতে চান না। আপনি প্রচুর টাকা উপার্জন করে বাবা-মাকে সব দিক দিয়ে খুশি রাখার চেষ্টা করলেন কিন্তু তাদের সময় দিলেন না, এতে তারা কখনোই খুশী থাকবে না। আপনার সান্নিধ্য তাদেরকে অন্যসব কিছু থেকে বেশী খুশী রাখতে পারবে। এতে আপনি নিজেও খুশী থাকতে পারবেন।
- আপনি সারাদিন সময় দিতে না পারলেও মা-বাবাকে একা সময় কাটাতে দিবেন না। এতে তারা মানসিকভাবে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই তাদের ছোটখাটো কাজে উৎসাহিত করতে পারেন।
- অনেক পরিবার আছে, যারা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই চাকুরি করেন। তারা ভেবে পান না কীভাবে সময় দিবেন মা-বাবাকে। দিনের শেষে এসে হলেও একটু সময় দিবেন তাদের। একটু চা করে এনে, মা-বাবার সাথে গল্প করতে পারেন।
- এছাড়া বাইরে থাকলেও দিনে ২/১ বার ফোন করে খোঁজখবর নিতে পারেন।
- তাঁদের বিশেষ দিনগুলো মনে রাখুন এবং ছোটখাটো সারপ্রাইজ দেয়ার চেষ্টা করুন। এতে, তাঁরা যে আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তাঁরা বুঝতে পারবে।
বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে অনেকেই সময় থাকতে বুঝতে চায় না। কিন্তু একটা সময় যখন তাদের খালি চেয়ারটা চোখের সামনে দেখতে হয়, তখন ঠিকই বুঝে যায় যে, তাঁরা কি ছিলো। তাই সময় থাকতেই বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে বুঝা উচিত!
ছবি – সাটারস্টক
আরও পড়ুন-
পিতা-পুত্রের বিরোধ প্রতিকারে মায়ের ভূমিকা