মাঝে মাঝে এমন হয় যে যতই আমরা এক্সারসাইজ করি না কেন বা পছন্দের খাবার এড়িয়ে চলি না কেন ( যা কিনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় তেলেভাজা খাবার অথবা হাই ক্যালরি সুইটস) আরাধ্য সেই ফিট ফিগার আমাদের আর পাওয়া হয় না।
আমাদের উপমহাদেশের নারীরা ন্যাচারালি সুন্দর হবার সাথে সাথে বিশাল এক সংস্কৃতি ও সভ্যতায় অনেক অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু সময় থাকে যখন আপনারা নিজের মনেই চিন্তা করেন যে কেন এত সুন্দর ট্র্যাডিশনাল গেটাপে আমায় মানাচ্ছে না? কেন আমাকে আরেকটু স্লিম দেখাচ্ছে না? আপনাদের এই সমস্যার সমাধানের চিন্তা থেকেই আজকের আর্টিকেল টি লেখা।
ভারতীয় উপমহাদেশের ট্র্যাডিশনাল পোশাকে লেয়ারস এবং ড্রেপস অনেক সুন্দর ভাবে ইনটিগ্রেটেড হবার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই শরীরের কোন সুন্দর অংশ সাজাতে অথবা অনেক সময় মেদ লুকাতে এটি বেশ সহায়ক ভুমিকা পালন করে। এখানে আজ কথা বলব এমন কিছু টিপস নিয়ে যার সাহায্যে আপনারা জানবেন কীভাবে আপনার বডি টাইপ অনুযায়ী ট্র্যাডিশনাল পোশাক চুজ করবেন এবং তাতে নিজেকে সুন্দর ও ফিট ভাবে উপস্থাপন করবেন।
[picture]
- মনে রাখবেন শুরুতেই আপনাকে বুঝে নিতে হবে আপনার বডি টাইপ। আপনার কোন অংশটি আপনি লুকাতে চান। কোথায়ে বেশি মেদ জমে এবং কোন ধরনের পোশাক আপনাকে সবচেয়ে ভালো ফিট করে।
- আপনার শরীরের উপরের অংশে যেমন হাতে, গলায়ে মেদ বেশি জমে তবে ওই অংশে আট সাটো হয়ে থাকে এমন পোশাক পরবেন না। যেমন খুব টাইট ব্লাউজ অথবা হাতা কাটা ব্লাউজ। এক্ষেত্রে চেষ্টা করুন ছোট গলার একটু লম্বা হাতার ব্লাউজ পরতে কারণ তা আপনার কাঁধের ও হাতের মেদ ঢেকে রাখতে পারবে। ঝলমলে সিল্ক বা মখমলের ব্লাউজ এড়িয়ে যান। কামিজের ক্ষেত্রেও একই কথা খেয়াল রাখবেন।
- যদিও জানি আজকাল এদেশে অনেক বেশি ঘেড় দেয়া আনারকলির চল এসেছে, কিন্তু মনে রাখুন বেশি ঘেড় ও ফ্রিল্ দেয়া এসব পোশাক আপনার ফিগারের শেপ বদলে দিতে পারে। আর আমাদের দেশের মেয়েদের এমন পোশাক পরলে অনেক বেশি খাটো লাগে দেখতে। তাই কুঁচি বাদ দিয়ে বেছে নিন কম ঘেড়ের লাইনে্র আনারকলি। যা ফুলে থাকা আনারকলির মত আপনাকে মোটা ও খাটো করে তুলবে না।
দুটোর মধ্যের ব্যাবধান নিজের চোখে দেখে নিন।
ফ্রিলি আনারকলি স্ত্রেইট কাট আনারকলি
- শরীরের উপরের অংশে মেদ বেশি থাকলে গলায় ফ্রিল, কুঁচি এড়িয়ে চলুন। এতে ওই অংশে সহজে চোখ যাবে না।
- এবার বিপরীত দিকে একটু দেখি, যাদের শরীরের নিচের দিকে মেদ বেশি তাদের বেলাতেও কুঁচির একই নিয়ম। আপনারা চুড়িদার বা স্ত্রেইট কাটের পাজামা পরার চেষ্টা করুন ও পাটিয়ালা বা কাবুলি পাজামা এড়িয়ে চলুন।
পাটিয়ালা পাজামা স্ত্রেইট কাট পাজামা
- আপনার থাই যদি ভারী হয় তবে থাই ঢেকে থাকে এমন দৈর্ঘ্যের কামিজ পরুন।
- লম্বা কামিজ পরার সাথে সাথে খেয়াল রাখুন যাতে আপনার কামিজ বাইরের দিকে ফ্রকের মত ছড়িয়ে না যায়। এই রকম কামিজ পরলে আপনার নিচের অংশকে আরও ভারী দেখাবে।
- চেষ্টা করুন শাড়ি, ব্লাউজ বা কামিজ, সালওয়ার ও ওড়না যেন একই রঙের থাকে। এতে আপনাকে আরও লম্বা ও স্লিম লাগবে। আলাদা আলাদা রঙ আপনার শরীর কে অনেক গুলো ভাগ করে ফেলে বলে আপনার হাইট কম মনে হবে। আপনি যদি চান আপনাকে স্লিম লাগুক তবে আপনার টার্গেট হবে নিজের হাইট বেশি এমন ইলিউসন তৈরি করা, যা এক রঙের কাপড়ে সম্ভব। কিন্তু যদি কন্ট্রাস্ট করতেই চান তবে একই কালার ফ্যামিলির রং দিয়ে কন্ট্রাস্ট করুন।
- অবশ্যই ছোট প্রিন্ট পরবেন কারণ বড় প্রিন্ট আপনার শরীরের problem area কে হাইলাইট করে। বিশাল আকারের ফ্লোরাল প্রিন্ট যতই ভালো লাগুক না কেন, ওটা তুলে রাখুন।
ভারী ম্যাটেরিয়ালে বড় print ছোট print
- আমাদের অঞ্চলের মেয়েদের কোমরে মেদ জমার সম্ভাবনা বেশি থাকে, এ কারণে এমন কোন জামা পরবেন না যাতে কোমরের কাছে কাপড়ের পরিমাণ বেশি বা কোমর ডিফাইনড না। এতে মনে হবে পেটে অনাকাঙ্খিত মেদ জমেছে। ফিটিং ঠিক রেখে পোশাক তৈরি করুন।
- ভারী শরীরের অধিকারীরা চিকন পাড় অথবা পাড় ছাড়া পোশাক পরুন। পাড়ের উইদথ যেন দেড় ইঞ্চির বেশি না হয়।
- শাড়ি বা কামিজে যদি stripes পরতে চান তবে vertical stripes বেছে নিন। এতে আপনাকে লম্বা লাগবে এবং আপনাকে যত বেশি লম্বা লাগবে তত বেশি স্লিমও লাগবে। আড়াআড়ি stripes আপনার শরীরের উইদথ বাড়িয়ে দেয় ইলিউসন এর মাধ্যমে। তাই কোন অবস্থাতেই আড়াআড়ি stripes যুক্ত কামিজ, সালওয়ার বা শাড়ি পরবেন না।
- ঝলমলে সিল্কের শাড়ি ভালোবাসেন? তবে স্লিম লাগবার জন্য হালকা সিল্ক বা ক্রেপের শাড়ি পরুন। সূক্ষ্ম কাজ করা ছোট sequin যুক্ত শাড়িতে আপনাকে অনেক স্লিম লাগবে।
- ভারী ম্যাটেরিয়ালের পোশাক বর্জন করুন। আপনি যদি মেদ লুকাতে চান তবে কাতান, বেনারসি আপনার জন্য নয়। বেছে নিন হালকা জর্জেট বা নেট। এড়িয়ে চলুন ফুলে থাকা পাট ভাঙ্গা শাড়ি।
ট্র্যাডিশনাল পোশাকে আনুসাঙ্গিকঃ
- আপনি একটু ভারী শরীরের অধিকারী হলে চেষ্টা করুন চুলটা সবসময় উচু করে বাঁধতে। এতে গলার বা ঘাড়ের মেদ কম বোঝা যায় আর মুখও পাতলা মনে হয়। চুলের ফ্রিজি ভাব দূর করুন কারণ ফ্রিজি চুলে মুখ আরও ভারী দেখায়।
- যদি চান আপনাকে ট্র্যাডিশনাল পোশাকে স্লিম লাগুক তবে আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হচ্ছে হিল জুতা। ট্র্যাডিশনাল পোশাকের সাথে হাই হিল খুবই সুন্দর লাগে। শাড়িতে ঢেকে থাকবার জন্য আপনি যে হিল পরে আছেন এটা সহজে বোঝাও যায় না। আর আপনাকে লাগে লম্বা ও ফিট। একই কথা কামিজের বেলায়ও খাটে।
- ঘাড়ে যদি মেদ বেশি হয় বা যদি গলা আরেকটু লম্বা দেখাক তবে গোলাকৃতি কানের দুল থেকে দূরে থাকুন। লম্বাটে কানের দুল পরার চেষ্টা করুন।
ট্র্যাডিশনাল পোশাক পরতে চাইলে এই টিপস গুল মেনে চলুন এর পাশাপাশি আরও মনে রাখুন যেকোনো লুককে অনেক বেশি গরজিয়াস করে তুলতে পারে আপনার পসচার (posture) । নিজের মেরুদণ্ড সোজা রাখুন, কুঁজো হয়ে দাঁড়াবেন না। এই বদঅভ্যাস পরিহার করুন। সবসময় পেট ভেতরের দিকে টেনে নিয়ে হাঁটার চেষ্টা করুন, এতে posture ভালো লাগবে। আপনি যদি উঁচু হিলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন তবে এর বদলে কিটেন হিল পরতে পারেন। এগুল দেড় বা দুই ইঞ্চি উচু হয়। ব্লাউজ নিজের শরীরের সঠিক মাপে বানান, কারণ অতিরিক্ত টাইট বা লুজ হলে এতে কাঁধের বা পিঠের মেদ আরও বাজে ভাবে বোঝা যাবে। রেডিমেড ব্লাউজ কেনা থেকে বিরত থাকুন। আর সবসময় মনে রাখবেন যে অংশের মেদ ঢাকতে চাচ্ছেন ওখানে কখনই গ্লিটার বা জমকালো কাজ রাখবেন না, এতে চোখ ওখানেই আগে পড়বে। যে পোশাক টা সুন্দর সেটা নয় বরং যে পোশাক আপনাকে করে তোলে সুন্দর সেটাকেই বেছে নিন। ব্যাস এই কয়টি সাধারণ টিপস মেনে চলতে পারলেই এর মাধ্যমে আপনি হয়ে উঠবেন আরো গরজিয়াস, লম্বা ও স্লিম।
লিখেছেনঃ তাবাসসুম মুশতারী মীম
ছবিঃ হোস্টটুপোস্ট.কম