রহিমা বেগম কয়েক দিন ধরে দেখছেন যে, তার বড় মেয়ে মিমি কারো সাথে তেমন কথা বলছে না। যে চটপটে মেয়ে ও! খাওয়া দাওয়াও তেমন করছে না। মুখে কেমন যেন বিষণ্ণ বিষণ্ণ ভাব। তিনি বুঝে পান না, হঠাৎ কী হলো তার আদরের লক্ষ্মী মেয়েটির? জীবনের যে কোন পর্যায়েই যে কেউ আমরা এরূপ ডিপ্রেশন বা হতাশায় ভুগতে পারি। চাহিদার সাথে যখন প্রাপ্তির মিল ঘটে না তখন তৈরী হয় হতাশা যা আমাদের স্বাভাবিক কাজ কর্মে বিঘ্ন ঘটায়। দীর্ঘদিন ধরে মনে চেপে বসা এই হতাশাই এক সময় রূপ নেয় ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন বা ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে। যা আপনার জীবন কে করে তুলবে অস্বাভাবিক ও যন্ত্রণাময়। তাই বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠা সরিয়ে রেখে কীভাবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় তার কিছু অতি প্রয়োজনীয় টিপস জেনে নেয়া যাক……
বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার সিক্রেটস
নিজেকে সময় দিন!
১) প্রত্যেক মানুষেরই কিছু পছন্দের কাজ রয়েছে। তাই বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠতে পছন্দমত কাজে নিজেকে ব্যস্ত রখুন।
২) প্রতিদিনের ব্যস্ত রুটিনে কিছু বিনোদনের সময় রাখুন। সেটা বাড়িতে টেলিভিশন দেখা না হয়ে ঘরের বাইরে হলে ভালো হয়, সেটা হতে পারে মঞ্চ নাটক বা অন্য কিছু যা আপনার মনের খোরাক যোগাবে।
৩) প্রতিদিনের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করুন। এসময় নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দিন সৃষ্টিকর্তার কাছে।দেখবেন অনেক হালকা বোধ করছেন। মহা ক্ষমতাধর কেউ একজন আপনার সাথে আছে এই বোধই আপনার হতাশা কাটিয়ে উঠতে অনেক সাহায্য করবে।
পরিবারের সাথে সময় কাটান!
৪) পরিবারের মানুষের জন্য সময় বের করুন। কারণ আপনার এত শ্রম তো তাদের জন্যই।তাদের সাথে কাটানো সময় আপনাকে আরো ভালো কাজ করতে প্রেরণা যোগাবে এবং কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে আপনার হতাশা।
৫) মনের মধ্যে কথা চেপে রাখবেন না।আপানার বিশ্বস্ত কাছের মানুষের কাছে সব খুলে বলুন এবং খেয়াল রাখুন এই খুলে বলাটা যেন আবার উল্টো চাপের সৃষ্টি না করে।
৬) প্রতিদিনের একই ধরেনের বাঁধা রুটিন হতে বেরিয়ে আসুন। নিজেকে রোবট করে ফেলবেন না।
৭) যার সঙ্গ আপনার ভালো লাগে তার সাথে কিছু ভালো সময় কাটাতে চেষ্টা করুন।দূরত্ব বেশি হলে ফোনেই হতে পারে যোগাযোগ।তবে অতিরিক্ত অবশ্যই নয়।
৮) বন্ধুদের সাথে মাঝে মাঝে গেট-টুগেদার করতে পারেন।যেখানে জম্পেস আড্ডায় উড়িয়ে দিতে পারেন দুঃখ, কষ্ট ও হতাশাকে।
৯) প্রতিদিনের শারীরিক শ্রম বা ব্যায়াম আপনার হতাশা কাটাতে সাহায্য করবে। তাই যান্ত্রিক জীবন হতে বেরিয়ে এসে নিজের কিছু সময় দিন বাগান তৈরীতে বা কোন শারীরিক শ্রমের কাজে।
১০) যোগ ব্যায়াম আপনার মন কে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে।কাজেই আজ থেকেই শুরু করে দিন না যোগ ব্যায়াম!
১১) সময় হাতে নিয়ে মাঝে মাঝে চলে যান প্রকৃতির কাছাকাছি এবং নিজেকে সবুজের অংশ মনে করুন। দেখবেন মন ফুরফুরে হয়ে গিয়েছে।
১২) সবসময় ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করুন এবং আত্মমর্যাদাবোধ বৃদ্ধি করুন।
১৩) সবাইকে বন্ধুত্বের দৃষ্টিতে দেখতে চেষ্টা করুন। সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিঃস্বার্থ হন।
১৪) বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠা তে খাবার মেনুতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার রাখুন। মন খারাপ হলে এক কাপ কফি বা চা আপনার মন চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে। তবে অবশ্যই অতিরিক্ত নয়।
জীবন যেহেতু আপনার একান্ত নিজের তাই একে ভালোবাসুন গভীর ভাবে।আপনার কোন অপ্রাপ্তির জন্য অবশ্যই নিজেকে দোষী করবেন না। দীর্ঘদিনের ডিপ্রেশন যদি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।মনে রাখবেন,ডিপ্রেশন কোন রোগ নয়। সব মানুষের জীবনেই এর উৎপাত রয়েছে।তবে দীর্ঘদিনের ডিপ্রেশন বড় বড় মনোরোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। তাই একে অবহেলা করবেন না।
লিখেছেনঃ সাইফুল্লাহ ফয়সাল