এই শীতে আমার চুল ভালই ড্রাই হয়েছে। এমনিতেও আমার চুল অনেক লম্বা বলে চুলের আগার দিকে একটু আধটু চুল ফাটার সমস্যা এবং ড্যামেজ হয়ে গেলে লালচে হয়ে যাওয়ার ধাঁচ আছে। নিশ্চয়ই পাঠকদের যাদের চুল ড্রাই আর ড্যামেজড তারা জানেন এই লালচে চুল নিয়ে কতো ঝামেলায় পড়তে হয়। তার উপরে চুল খোলা রেখে বাইরে যাওয়ার কথা তো চিন্তাই করা যায় না। মুহূর্তের ভেতরে চুল উস্ক খুস্ক হয়ে পুরো কাকের বাসা হয়ে যায়।
[picture]
তো এই ঝামেলার সমাধানে অনেক রিভিউ পড়ে দেখে আমি জাপানের বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ড শিসেইডোর এই সুবাকি ট্রিমেনট অয়েল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলাম। নিশ্চয়ই পাঠকরা ভাবছেন সুবাকি অয়েলটা আবার কি? বলছি-
সুবাকি/ ক্যামেলিয়া অয়েল আসলে কি?
জাপানের নারীরা প্রাচীনকাল থেকে তাদের অসম্ভব দীর্ঘ ঘন কালো চুলের জন্য বিখ্যাত। তার চেয়েও বিখ্যাত তাদের ট্র্যাডিশনাল কমপ্লিকেটেড হেয়ার স্টাইলস। বিশ্বাস হচ্ছে না? দেখুন কিছু নমুনা-
গেইশাদের এই ট্র্যাডিশনাল হেয়ারস্টাইলগুলো কিন্তু তাদের ন্যাচারাল চুল দিয়েই করা হয়… কোন উইগ নয় এগুলো!! এবং প্রতিদিন এমন কম্পলিকেটেড হেয়ারস্টাইলে চুলের যে পরিমান ড্যামেজ হয় তা হ্যান্ডল করতে জাপানিজ নোবেল এবং এন্টারটেইনাররা সেই প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার করে একদম পিওর ক্যামেলিয়া অয়েল, যা কিনা দুনিয়ার অন্য যেকোনো তেল থেকে বেসি এমলিয়েনট কিন্তু একদম হাল্কা যা চুলকে চিটচিটে করে না একেবারেই। যে কারণে হেয়ার সিরাম হিসেবে ভেজা চুলে এই তেল ইউজ করে যেকোনো হেয়ার স্টাইল করা এবং লম্বা চুলে সেটা সারাদিন ক্যারি করা যায়। সাথে সাথে চুলের বডিতে আদ্রতা ধরে রেখে চুলের স্বাভাবিক রঙ বজায় রাখা এবং এত অত্যাচারের পড়েও চুল ড্যামেজ হতে না দেয়ার ক্ষমটাও এর আছে। আর এই কারণেই জাপানিজ নারীরা চুলের যত্নে সিলিকন এবং কেমিকাল যুক্ত ক্ষতিকর হেয়ার স্টাইলইং প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে সবসময় বেছে নেয় ক্যামেলিয়া অয়েল।
কি খুব বেসি গাজাখুরি লাগছে? জী না… অনেক রিসার্চ পেপার পড়ে এটা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে ড্যামেজড চুলের যত্নে ক্যামেলিয়া অয়েলের কার্যকারিতা প্রমানিত।
আগে আমিও চুলের বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য বাজারের সিলিকন যুক্ত হেয়ার সিরাম, লিভ ইন কন্ডিশনার ইউজ করেছি অনেক… এগুলো ইউজ করার সাথে সাথে চুল অনেক সিল্কি আর স্মুথ লাগে… কিন্তু আপনারাও জানেন আর আমি নিজেও দেখেছি যে লং টার্ম ইউজে এগুলো চুলের ক্ষতি ছাড়া ভালো করে না। উল্টো দেখা যায়, চুল পড়তে শুরু করে কপাল যদি বেশি খারাপ হয়। একদিন সুন্দর লাগার জন্য আমি আমার চুল হারাতে রাজি না। এবং সেই জন্যই সিলিকনে ভরা হেয়ার সিরামের বদলে এবার আমি ক্যামেলিয়া অয়েলই ট্রাই করলাম।
প্রাপ্তিস্তল এবং দামঃ
আপনারা যদি শিসেইডো সুবাকি পারফেকশন ট্রিটমেনট অয়েল ট্রাই করতে চান তবে যেকোনো প্রিঅর্ডার নেয় এমন অনলাইন পেজে অর্ডার করতে পারেন। আর যদি অপেক্ষা না করতে চান তবে স্যাফায়ার এর রাইফেলস স্কয়ার অথবা যমুনা ফিউচার পার্কের শপ থেকে নিজেই কিনে নিতে পারেন। এই প্রোডাক্টের দাম পড়বে ১৯৫০ টাকা … আর যদি ১০০% পিওর কামেলিয়া /সুবাকি অয়েল ট্রাই করতে চান তবে সেটার দাম পড়বে ১৭০০ টাকা।
আমার অভিজ্ঞতাঃ
- এই প্রোডাক্টের প্যাকেজিং এত সুন্দর!! ড্রেসিং টেবিলে সাজিয়ে রাখতেই অনেক বেশি ভালো লাগে। এতে কোন পাম্প ডিসপেনসার দেয়া থাকায় ঝামেলা ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। আমি এই তেলটা দুই ভাবে ব্যবহার করি,
- গোসলের আগে ডিপ কনডিশনার হিসেবে- শ্যাম্পু করার আগের দিন রাতে ৭-৮ ফোঁটা তেল পুরো চুলে লাগিয়ে নেই এবং পরদিন শ্যাম্পু করে ফেলি। এটা খুবই হাল্কা হওয়ায় ১ বার মাত্র শ্যাম্পুতেই পুরো তেল চলে যায়। বলা বাহুল্য আমার চুল কোমরের নিচে পড়ে প্রায়। যাদের চুল ছোট তাদের জন্য পরিমানে অনেক কম লাগবে। শ্যাম্পুর পর চুল শুকালে আগের মত চুল লালচে দেখায় না আর। এবং চুলের উস্কখুস্ক ভাবটাও কমে।
- শ্যাম্পুর পড়ে লিভ ইন হেয়ার সিরাম হিসেবে- এটা আমার ফেবারিট ওয়ে এই অয়েল ইউজ করার। গোসলের পর চুল হাল্কা ভেজা থাকা অবস্থায় আমি ২-৩ ফোঁটা তেল নিয়ে পুরো চুলের বডিতে লাগিয়ে নিই। এবং চুল শুকানোর পর ভালোভাবে আচড়ে নেই। এতে করে সারাদিন চুল সিল্কি থাকে এবং যেকোনো হেয়ারস্টাইল করে বাইরে গেলে চুল নষ্ট হয় না। এবং এই উপায়ে তেল পরিমানেও অনেক কম লাগে। এই তেলটা যদি কেউ ট্রাই করেন তবে ড্রাই ড্যামেজড আর ফ্লাইঅ্যাওয়ে হেয়ারের জন্য আমি সিরিয়াসলি হেয়ার সিরাম হিসেবে এই তেল রেকমেনড করছি।
এক নজরে এই প্রোডাক্টের যে দিকগুলো আমার ভালো লেগেছে-
-একেবারেই জিরো stickiness !!
-শ্যাম্পুর আগে চুলের ডিপ কন্ডিশনার হিসেবে বেশ ভালো। এবং আমাদের জেনারেল ভারী তেলের মত পরিমানে অনেক বেশি শ্যাম্পু ইউজ করার প্রয়োজন পড়ে না।
– ড্রাই, আগা ফাটা, ড্যামেজড, লালচে চুল নিয়ে যারা সমস্যায় আছেন তাদের জন্য একটি মাস্ট হ্যাভ আইটেম।
– আমি আজ পর্যন্ত যত হেয়ার সিরাম ইউজ করেছি সবগুলোর মধ্যে এটাই আমার কাছে বেস্ট লেগেছে, এবং আমি আজ পর্যন্ত কোন সাইড ইফেক্ট পাইনি। ৪০০০-৫০০০ টাকা দামের কেরাটেস হেয়ার সিরামের চেয়েও এটার পার্ফরম্যান্স ভালো…!!
– লম্বা পাতলা চুলে ডিপ কন্ডিশনিং করলে চুল যেমন লেপটে থাকে তেমন কিছু আমি এখনও এই তেল থেকে পাইনি।
– ক্যামেলিয়া অয়েলের ঘ্রান খুবই সুন্দর…!! হেয়ার পারফিউম হিসেবে এটা এঞ্জয় করবেন সিওর…
যা ভালো লাগেনি-
– কাঁচের বোতল!! মানছি shiseido অত্যন্ত হাই এন্ড এবং লাক্সারিয়াস ব্র্যান্ড, কিন্তু এত সুন্দর কাঁচের বোতল থেকে তেল হাতে ঢালতে গেলে একটু ভয় লাগে বৈকি… কখন না জানি হাত থেকে পড়ে যায়।
সো, আমার লাস্ট ভারডিকট হচ্ছে যারা বিভিন্ন কেমিকাল ট্রিটমেনট নিয়ে চুলের বারটা বাজিয়েছেন এখন নিজের ড্যামেজড লালচে পাতলা চুলের যত্ন কীভাবে নেবেন বুঝতে পারছেন না এবং বাজারের তাবৎ হেয়ার সিরাম ট্রাই করেও কোন ফল পাননি তারা এই বিখ্যাত এক্সটিক ক্যামেলিয়া অথবা সুবাকি অয়েলকে একটা চান্স দিতে পারেন। আশা করি ভালো বৈ খারাপ হবে না।
লিখেছেন – তাবাসসুম মুস্তারি মীম