নামীদামী ব্র্যান্ডের মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করেও কি মনে হচ্ছে “মেকআপটা আরেকটু সুন্দরভাবে বসলো না কেন?” মেকআপ করার সময় যারা এমন কমপ্লেইন করে থাকেন, একটু খেয়াল করে দেখুন তো, মেকআপ অ্যাপ্লাই করার জন্য সঠিক প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করেছেন কিনা? এমনটা হতে পারে ব্রাশ আর বিউটি ব্লেন্ডার সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে। তাহলে চলুন জানা যাক, স্মুথ মেকআপ বেইজের জন্য ব্রাশ এবং বিউটি ব্লেন্ডার কখন কোনটা ব্যবহার করতে হবে। বিগেনারদের জন্য মেকআপ পারফেক্টলি সেট করাটা একটু কঠিন, তাই না? এই কাজটি সহজে করতে পারবেন যদি ব্রাশ এবং বিউটি ব্লেন্ডারের সঠিক ব্যবহার আপনি রপ্ত করতে পারেন। দেরি না করে বিস্তারিত জেনে নিন তাহলে।
বিউটি ব্লেন্ডার এবং ব্রাশ
মেকআপ বক্সে থাকতেই হবে এমন বিউটি টুলস হচ্ছে স্পঞ্জ ও মেকআপ ব্রাশ। ব্রাশ এবং বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহারের আদবকেতা ও পরিষ্কার রাখার নিয়ম সবই আজ আমরা জেনে নিবো। এর আগে চলুন বিউটি ব্লেন্ডার এবং ব্রাশ সম্পর্কে দরকারি কিছু তথ্য জেনে নেই।
কখন ব্যবহার করবেন বিউটি ব্লেন্ডার বা স্পঞ্জ?
ফাউন্ডেশন, বিবি ক্রিম, কনসিলার সহজ করে বলতে গেলে, যে লিকুইড প্রোডাক্টগুলোকে আমরা ত্বকের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে চাই সে প্রোডাক্টগুলো বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে অ্যাপ্লাই করা যায়। এর নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এর কাজ। আমরা যারা ব্রাশ দিয়ে পারফেক্টভাবে বেইজ মেকআপ করতে পারি না, তাদের জন্য অল্টারনেটিভ হতে পারে বিউটি ব্লেন্ডার। বিগেনারদের জন্য এটি বেস্ট অপশন! বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে যদি ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করা যায় তাহলে ত্বকে সেটা ভালোভাবে বসে যায়। এছাড়াও বেকিং অর্থাৎ ফাউন্ডেশনের উপরে লুজ পাউডার সেট করার জন্যও বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহার করতে অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
বিউটি ব্লেন্ডারের কোন অংশের কাজ কী?
স্পঞ্জের যে সাইডটি গোল বা রাউন্ড সেটা মূলত গালে মেকআপ অ্যাপ্লাইয়ের জন্য ভালো কাজ করে। আর কিছু বিউটি ব্লেন্ডারে উপরের দিকের কোণা থাকে, যেটা চোখের নিচে এবং নাকের দুইপাশের ব্লেন্ডিং এর জন্য বেশি উপযুক্ত। এছাড়াও মার্কেটে বিভিন্ন শেইপ ও সাইজের বিউটি ব্লেন্ডার পাওয়া যায়। নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন পছন্দের বিউটি ব্লেন্ডার।
স্পঞ্জ বা বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহারের প্রসেস
১) ব্যবহারের শুরুতে বিউটি ব্লেন্ডারটি পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে।
২) বিউটি ব্লেন্ডারটি ভেজানোর পর যখন সাইজে প্রায় ডাবল হয়ে যাবে তখন অতিরিক্ত পানি চেপে বের করে নিতে হবে।
৩) এরপর টিস্যু বা পরিষ্কার টাওয়েল দিয়ে বিউটি ব্লেন্ডারটা একটু চেপে নিলে ব্যবহারের জন্য রেডি।
৪) খেয়াল রাখতে হবে বিউটি ব্লেন্ডার বা স্পঞ্জটি যেন হালকা ভেজা অবস্থায় থাকে। একেবারে শুকনা বা ভেজা ব্লেন্ডারের কোনটাই মেকআপের জন্য উপযুক্ত না।
৫) অল্প করে ফাউন্ডেশন বা বিবি ক্রিম নিয়ে ড্যাব ড্যাব করে অ্যাপ্লাই করতে হবে পুরো স্কিনে, এতে কম পরিমাণে ফাউন্ডেশন নিয়েও ফুল কভারেজ পাওয়া যাবে।
বিউটি ব্লেন্ডার পরিষ্কার করার নিয়ম
যদি আমরা প্রতিবার মেকআপের পরেই বিউটি ব্লেন্ডার ধুয়ে রাখি, তাহলে এই ব্লেন্ডার অনেকদিন ব্যবহার করা যাবে। সেই সাথে ইনফেকশনের ভয়টাও থাকে না। তবে ত্বকের ভালোর জন্য বা হাইজিন মেনটেইন করতে সাধারণত ৩-৬ মাস পরপর বিউটি ব্লেন্ডার বা স্পঞ্জ পরিবর্তন করা উচিত।
১) প্রতিবার ব্যবহারের পরেই পানিতে লিকুইড সোপ বা ক্লেনজার দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে ব্লেন্ডারে লেগে থাকা বাকি প্রোডাক্টগুলোও উঠে যাবে।
২) এরপরে পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
৩) সম্পূর্ণ শুকিয়ে নিলেই পরেরবার মেকআপের জন্য রেডি হয়ে যাবে বিউটি ব্লেন্ডার।
এছাড়াও যাদের বাসায় মাইক্রোওয়েভ ওভেন আছে, তারা চাইলে মাইক্রোওয়েভেও পরিষ্কার করে নিতে পারেন পছন্দের বিউটি ব্লেন্ডারটি। এজন্য প্রথমে একটি বোলে পানিতে কিছুটা হ্যান্ডওয়াশ বা ক্লেনজার মিশিয়ে নিতে হবে, তারপর পানিতে বিউটি ব্লেন্ডার ভিজিয়ে মাইক্রোওয়েভে এক থেকে দেড় মিনিট টাইম সেট করতে হবে। মাইক্রোওয়েভ থেকে বের করার পর একটু ঠান্ডা হলে পরিষ্কার ব্রাশ দিয়ে হালকাভাবে ঘষে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে বিউটি ব্লেন্ডার। এবার পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিলেই রেডি!
মেকআপ ব্রাশ কেন প্রয়োজন?
ত্বকের নির্দিষ্ট স্থানে কোনো প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করতে চাইলে ব্রাশ দিয়ে ইজিলি এই কাজটা করে নেওয়া যায়। আই মেকআপ, কনট্যুরিং, ব্রোঞ্জার, ব্লাশ বা হাইলাইটার ব্যবহার করার জন্য ব্রাশ ব্যবহার করা বেশ সুবিধাজনক। লুজ পাউডার দিয়ে মেকআপ সেটের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে পাউডার ব্রাশ। কনসিলার ব্রাশ দিয়ে খুব সহজেই আপনি ফেইসের কালো দাগ, ডার্ক সার্কেলে কনসিলার লাগিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন সাইজ ও শেইপের ব্রাশ ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন মেকআপ প্রোডাক্টস অ্যাপ্লাইয়ের জন্য। ফ্ললেস ও স্মুথ মেকআপ পেতে কিছু বেসিক মেকআপ ব্রাশ আপনাকে ব্যবহার করতে হবে।
ব্রাশের ব্যবহার
অনেকসময় ব্রাশ দিয়ে মেকআপ মেশাতে যেয়ে আমাদের মনে হয় কেমন যেন আনইভেন হয়ে যাচ্ছে! সাধারণত এই সমস্যাটা বেশি হয় যাদের ড্রাই স্কিন তাদের ক্ষেত্রে। কিন্তু যদি সঠিকভাবে স্কিনকেয়ার স্টেপগুলো ফলো করে এবং স্কিনে ময়েশ্চারাইজার ইউজ করে মেকআপ করা যায় তাহলে এই প্রবলেমটা আর হবে না।
১) যতটুকু প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে চান তার সবটা একবারে ব্রাশে না নিয়ে, অল্প অল্প করে নিয়ে কয়েকবারে ব্যবহার করলে বেশি ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।
২) ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করতে চাইলে ফ্ল্যাট ব্রাশে প্রয়োজনীয় মেকআপ প্রোডাক্টটুকু একবারে নিয়ে প্রথমে ফেইসে ড্যাব ড্যাব করে লাগিয়ে নিন। তারপর ধীরে ধীরে স্মুথ করে মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
৩) ট্রাভেলের সময় বা দ্রুত টাচ আপের ক্ষেত্রে বিউটি ব্লেন্ডার ভেজানো বা রেডি করার চেয়ে ব্রাশ ব্যবহার অনেকের কাছেই সহজ মনে হয়।
৪) চোখের কোণা হাইলাইট করতে স্মল স্ম্যাজ ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। ফেইসে হাইলাইটার বা ব্লাশ ব্যবহার করতে ফ্ল্যাপি ব্রাশগুলো বেছে নিতে পারেন। অনেক সময় আইলাইনার কিংবা লিপস্টিক দিতে গেলে ছড়িয়ে যায়, স্মল কনসিলার ব্রাশ দিয়ে এটা ফিক্স করে নিলেই আপনার প্রবলেম সল্ভ হয়ে যাবে।
মেকআপ ব্রাশ পরিষ্কার করার নিয়ম
বিউটি ব্লেন্ডারের মতো ব্রাশ/ ব্রাশসেটও নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখা উচিত। কীভাবে এই কাজটি সহজেই করা যায় সেটি দেখে নিন।
১) হালকা গরম পানিতে ব্রাশের ব্যবহৃত অংশটুকু ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর কোনো ক্লেনজার দিয়ে বা হাতের তালুতে লিকুইড সোপ নিয়ে আস্তে আস্তে সম্পূর্ন অংশ হালকা ম্যাস্যাজ করে আবার ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
২) এখন কিন্তু মেকআপ ব্রাশ ক্লিনার কিনতে পাওয়া যায়। এতে খাঁজকাটা কিছু অংশ থাকে, যা মেকআপ ব্রাশ থেকে খুব সহজেই ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহার করাও খুব সহজ।
৩) দ্রুত ব্রাশ সেটের পানি ঝরানোর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পরিষ্কার শুকনো তোয়ালের মধ্যে ব্রাশ সেট নিয়ে আস্তে আস্তে চেপে শুকিয়ে নেওয়া।
৪) তারপরে বাতাসে রেখে দিতে হবে যাতে ব্রাশ পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। ভেজা অবস্থায় ব্রাশ ব্যবহার করবেন না।
তাহলে জেনে নিলেন বিউটি ব্লেন্ডার ও ব্রাশ কীভাবে ব্যবহার করা যায় এবং কী করে খুব সহজেই ক্লিন করা যায় সেই সম্পর্কে। লিকুইড প্রোডাক্ট ব্রাশ দিয়ে ফেইসে অ্যাপ্লাই করে বিউটি ব্লেন্ডার বা স্পঞ্জ দিয়ে ব্লেন্ড করলেও ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়। নিজের সাধ্যের মধ্যেই যারা মেকআপ টুলস কিনতে চান, তারা ঘুরে দেখতে পারেন সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ-যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত সম্ভারে, সেখান থেকে কিনতে পারেন আপনার পছন্দের মেকআপ প্রোডাক্টস অথবা অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
লিখেছেন- তাসনিম সরকার তনিমা
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক