টিউমার শব্দটি শুনলে বেশিরভাগ মানুষের মনেই ক্যান্সারের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তবে ইউটেরাসের টিউমার জানলে সে মাত্রা কয়েক গুন বেড়ে যায়। জরায়ু বা ইউটেরাসের মধ্যে বিনাইন (ক্যান্সার নয়) টিউমারকে মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় বলে ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড। এটির উৎপত্তি স্থান জরায়ুর পেশি। কিন্তু জেনে রাখুন, এই টিউমার থেকে ক্যান্সার হয় না। ২০১০ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ মহিলার জরায়ুতে ফাইব্রয়েড আছে। কিন্তু এর সুনির্দিষ্ট উপসর্গ না থাকায় এবং এই রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকায় তা সনাক্ত করা কঠিন ছিল। বর্তমান বিশ্বের নারীরা আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি সচেতন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে তাই এখন রোগও দ্রুত নির্ণয় হচ্ছে। চলুন জেনে নিই জরায়ুতে ফাইব্রয়েড এর উপসর্গ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত।
জরায়ুতে ফাইব্রয়েড এর উপসর্গ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
জরায়ুতে ফাইব্রয়েড আছে বুঝার কিছু উপসর্গ
ইউটেরাসের ফাইব্রয়েডের কোন সুনির্দিষ্ট উপসর্গ নেই। এটি নির্ভর করে ফাইব্রয়েডের অবস্থানের উপর। ফাইব্রয়েডের অবস্থান অনুসারে এটি সাবমিউকোসাল বা ফেলোপিয়ান টিউবের কাছে থাকলে ইনফার্টালিটি, ইউটেরাসের লাইনিং এর উপর থাকলে বেশি ব্লিডিং জাতীয় সমস্যা হতে পারে। ফাইব্রয়েড একটা বড় অথবা অনেকগুলো ছোট ছোট হতে পারে। এটি যত বড় হয় এর উপসর্গ বা সমস্যা তত বাড়ে। এর কিছু উপসর্গ হলো – তলপেটে ভারী ভাব, মৃদু থেকে তীব্র ব্যথা-যন্ত্রণা, পেটে অস্বস্তি, মল-মূত্র ত্যাগের সময় ব্যথা, বারবার বাথরুম পাওয়া ইত্যাদি নানা রকম সমস্যা।
এছাড়া সন্তানহীনতা এবং রেকারিং মিসক্যারেজের সম্ভবনা থাকে। সময় মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে প্রতিমাসে অতিরিক্ত ব্লিডিং হতে হতে আয়রনের অভাব জনিত রোগ অ্যানিমিয়া হতে পারে।
জরায়ুতে ফাইব্রয়েড নির্ণয়ে করণীয়
জরায়ুতে ফাইব্রয়েড রোগটি পুরোপুরি বংশগত না হলেও একই পরিবারে লক্ষ্য করা যায়। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কম, বেশি হলে ইউটেরাসের ফাইব্রয়েডের সম্ভবনা বাড়ে। অধিক ওজনও এই রোগের একটি কারণ। সেক্ষেত্রে সন্দেহ হলে একজন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। পেলভিক এক্সাম, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
ইউটেরাসের ফাইব্রয়েডের চিকিৎসা
ইউটেরাসের ফাইব্রয়েডের নানা রকমের চিকিৎসা আছে। রোগের ধরন ও উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। অনেকের চিকিৎসা প্রয়োজনই হয় না। কারণ যদি কোন কষ্টকর উপসর্গ না থাকে, মেনোপজের পরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কমে যায় এবং ফাইব্রয়েডগুলোও ছোট হয়ে যায়, উপসর্গ এমনিতেই চলে যায়। অনেক ক্ষেত্রে অল্প মাত্রার কন্ট্রাসেপটিভ পিল বা অন্য ওষুধ দিয়েও চিকিৎসা করানো হয়।
কিছু ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে সমস্যা দূর করা যায়। তবে অধিক গুরুতর সমস্যা যাদের, তাদের হিস্ট্রেক্টমি বা ইউটেরাস কেটে বাদ দিতে হয়। অবশ্য ইদানিং পেট না কেটেই ট্রান্সভ্যাজাইনাল বা ল্যাপারোস্কোপিক হিস্ট্রেক্টমি করা হয়।
জরায়ুতে ফাইব্রয়েডের কারণে ইনফার্টিলিটি হলে প্রথমে ল্যাপারোস্কোপিক বা হিস্টেরোস্কোপিক পদ্ধতিতে ফাইব্রয়েডকে কেটে বাদ দিতে হবে। এরপর ইনফার্টালিটির চিকিৎসা শুরু করতে হবে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পরিশেষে, ইউটেরাসের ফাইব্রয়েড একটি সহজ নিরাময় যোগ্য রোগ। ভয় না পেয়ে সঠিক সময়ে সুচিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
ছবিঃ ফিটনেসসুত্রা.কম, সাজগোজ.কম