শরীরে ভিটামিন এ-এর অভাব অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। শুধুমাত্র ভিটামিন এ-এর অভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। যার ফলে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন খুব সহজেই। তাই যারা ভিটামিন এ যুক্ত খাবার কম খায়, তাদের শরীরে ঘাটতি থেকে যায় এবং তাদের এর অভাবজনিত বিভিন্ন রোগ হতে পারে। ভিটামিন এ-এর প্রয়োজনীয়তা, অভাবজনিত রোগ এবং উৎসগুলো জেনে নিন আজকের আর্টিকেল থেকে।
শরীরে ভিটামিন এ-এর প্রয়োজনীয়তা কী?
দৈনিক খাবারে একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর জন্য ভিটামিন এ ৭০০ মাইক্রোগ্রাম থাকা উচিত এবং পূর্ণবয়স্ক পুরুষের জন্য দিনে ৯০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ থাকা দরকার। শরীরের জন্য এই ভিটামিনের কাজগুলো কী কী সেটাই এখন জানবো।
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
- শরীরের কোষ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- প্রজননক্ষমতা চালু রাখে
- ত্বক সতেজ রাখে
- টিউমার ও ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে
- কোষ, ত্বক, দাঁত ও অস্থি গঠনে ভূমিকা রাখে
অভাবজনিত রোগ
শিশুদের শরীরে ভিটামিন এ-এর অভাব থাকলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বিঘ্ন ঘটে। ৯ মাস থেকে ৪ বছরের শিশুদের মধ্যে ভিটামিন এ অভাবজনিত রোগ বেশি দেখা যায়। ক্যারাটোম্যালেসিয়া রোগটিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয় পাঁচ বছরের শিশুরা, যার ফলে কর্ণিয়ায় ক্ষত সৃষ্টি হয়। যদি এই রোগের দ্রুত চিকিত্সা করা না হয় তাহলে অন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ভিটামিন এ সঠিক মাত্রায় শিশুর শরীরে না থাকলে হাম ও ডায়রিয়া দেখা দেয়। এছাড়া আরও কিছু অভাবজনিত রোগ হতে পারে। সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেই চলুন।
১) রাতকানা
ভিটামিন এ-এর অভাবে সব থেকে বেশী যে রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেটি হল ‘রাতকানা রোগ’। রাতকানা রোগ হলে রোগী দিনের বেলায় অর্থাৎ সানলাইটে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে। কিন্তু রাতের বেলায় দেখতে অসুবিধা হয়। অনেকে রাতে একেবারে দেখতে পায় না, আবার অনেকে ভুল দেখে।
২) রক্ত স্বল্পতা
ভিটামিন এ শরীরে কম থাকলে আয়রন ফাংশন ব্যাহত হয়, ফলে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। যার থেকে অ্যানিমিয়া হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।
৩) ত্বকে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইন
শরীরে এই ভিটামিনের অভাব হলে ত্বক রুক্ষ-শুষ্ক হয়ে যায়। কম বয়সে মুখে বলিরেখা দেখা দেয়, বার্ধক্যের ছাপ চলে আসে।
৪) ক্যান্সারের ঝুঁকি
গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে ২১% মানুষের শরীরে টিউমার বা স্কিন ক্যান্সার হয় ভিটামিন এ-এর অভাবে (তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া)
কোন খাবারে পাবেন ভিটামিন এ?
ভিটামিন এ মূলত ক্যারোটিন থেকে তৈরী হয়। ভিটামিন এ তৈরীর উৎস দু’টি, প্রাণীজাত এবং উদ্ভিদজাত।
উদ্ভিদজাত উৎস হল হলুদ ও সবুজ শাকসবজি এবং রঙিন ফলমূল, সাধারণত যে শাকসবজি বা ফলের রঙ যত গাঢ় হয় তাতে ভিটামিন এ বেশি পরিমাণে থাকে। এছাড়া গাজর, মিষ্টি কুমড়ো, পাকা পেঁপে, মাখন, ব্রোকলি, কমলা লেবু, বাদাম, অ্যাভোকাডো, চীজ ইত্যাদিতে ভিটামিন এ থাকে।
প্রাণীজাত উৎস হল মূলত মাংসাশী প্রাণী, মাছের তেল বা তেলযুক্ত মাছ। মাংস, ডিম, কলিজা ইত্যাদি খাবার থেকে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। শিশুর শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব দূর করতে মায়ের বুকের দুধ, ৬ মাস পূর্ণ হলে সবুজ-হলুদ শাকসবজি, ফলমূল, ডিম এগুলো খাওয়াতে হবে।
প্রেগনেন্সিতে ভিটামিন এ-এর প্রয়োজনীয়তা
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে তার নিজের এবং গর্ভের সন্তানের জন্য ভিটামিন এ এর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থায় নারীদের রাতকানা রোগ রোধে আলাদা করে ভিটামিন এ ট্যাবলেট খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহণ করা উচিত নয়। অতিরিক্ত ভিটামিন এ শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে, যেমন হাড় এবং জয়েন্টে পেইন, বমি বমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখা, ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। প্রেগনেন্সিতে ভিটামিন এ-এর চাহিদা পূরণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই যথেষ্ট।
ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারে অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহণ গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বাচ্চার ইমিউনিটি ফাংশন ও গ্রোথের জন্য এই ভিটামিনেরও প্রয়োজন, তাই পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন এ গ্রহণ করা উচিত। এই ব্যাপারে ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে নিতে হবে।
তাহলে ভিটামিন এ-এর প্রয়োজনীয়তা, অভাবজনিত রোগ এবং উৎসগুলো আমরা এতক্ষণে জেনে নিয়েছি। আমাদেরকে অবশ্যই ভিটামিন এ-এর অভাবজনিত এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। সুতরাং প্রতিদিনের খাবারে আমরা এমন কিছু রাখবো যাতে ভিটামিন এ রয়েছে। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
ছবি- সাটারস্টক