জাপানে একটি কথা বেশ প্রচলিত আছে, মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য আসে ভেতর থেকে। জাপানিজরা বিশ্বাস করে সুন্দর ত্বক ও চুলের গোপন রহস্য হলো ব্যালেন্সড ডায়েট, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও প্রোপার সেলফ কেয়ার। ব্যালেন্সড ডায়েট জরুরী, কিন্তু এই ব্যস্ত জীবনে সবসময় কি দরকারি ভিটামিনস, মিনারেলস ফুডের মাধ্যমে ইনটেক সম্ভব? অনেকের ক্ষেত্রে উত্তর হবে ‘না’। পরে দেখা যায় কোনো ভিটামিন বা মিনারেলের অভাবে শারীরিক জটিলতার সাথে সাথে ত্বক ও চুলও রুক্ষ-শুষ্ক হয়ে যায়। এর সমাধান হিসেবে এখন অনেকেই বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন ভিটামিন সাপ্লিমেন্টস! আসলেই কি এগুলো বেনিফিসিয়াল? চলুন জেনে নেই বিস্তারিত।
ভিটামিন সাপ্লিমেন্টস এর বেনিফিট
স্কিন আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অর্গান। আমরা হার্ট, স্টোমাক, কিডনি এসব ইন্টারনাল অর্গান নিয়ে যতটা সচেতন; স্কিনের সুস্থতা নিয়ে কিন্তু অনেকেই ততটা কনসার্নড না। আমরা যেসব খাবার খাই, সেগুলো আমাদের পুরো শরীরকেই প্রভাবিত করে, ত্বক আর চুলও এর ব্যতিক্রম না। তাই যদি সমস্ত পুষ্টি উপাদান ভালোভাবে সঠিক পরিমাণে শরীরের মধ্যে যায়, তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ত্বক উজ্জ্বল, তারুণ্যদীপ্ত থাকবে। সাপ্লিমেন্ট আসলে নিউট্রিয়েন্টস বা ভিটামিনসের ঘাটতি পূরণ করে আপনাকে কিছু বেনিফিটস দেয়, চলুন এখন জেনে নেই-
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ইনফ্ল্যামেশন কমে
- স্কিন হাইড্রেটেড থাকে
- নেইলস, হেয়ার স্ট্রং ও নারিশড থাকে
- ত্বকের প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস প্রিভেন্ট হয়
কোন সাপ্লিমেন্টের কী কাজ?
সাপ্লিমেন্ট হচ্ছে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান যা খাদ্যের পুষ্টির অভাব পূরণ করার জন্য বাইরে থেকে অ্যাড করা হয়। এটি যেমন শরীর সুস্থ রাখার জন্য হতে পারে, তেমনি ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্যও হতে পারে। কিছু ভিটামিনস আমাদের শরীর ও ত্বকের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চলুন কোন সাপ্লিমেন্ট কী কাজ করে, সেটা জেনে নেওয়া যাক।
ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি হাড়ের জন্য উপকারী এই ব্যাপারে তো সবাই জানেন। যাদের মেলানোমা আছে, তাদের জন্য ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট সাজেস্ট করা হয়। এছাড়াও স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে ভিটামিন ডি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে বলে গবেষণায় এসেছে। প্রতিদিন সকালে ১০-১৫ মিনিট রোদে বসে থাকলে ত্বকের নিচে কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। তবে কড়া রোদে বেশিক্ষণ থাকলে ইউভি রশ্মির কারণে সানট্যান, এজিং সাইনস দেখা দিতে পারে। রোদ ছাড়াও ভিটামিন ডি খাবার ও সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে নেওয়া যেতে পারে। ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সি থাকলে ডাক্তার অবশ্যই সাপ্লিমেন্ট সাজেস্ট করবেন।
রেটিনল
ভিটামিন এ সাধারণত রেটিনল সাপ্লিমেন্ট হিসেবে পাওয়া যায়। ভিটামিন এ ত্বকের জন্য অনেকভাবে উপকারী, যেমন এটি কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়িয়ে দিয়ে এজিং সাইনস প্রিভেন্ট করে। একনে প্রতিরোধ করে, সেই সাথে পিগমেন্টেশন লাইট করে। এটি খুব উপকারী একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। তবে প্রেগনেন্সিতে রেটিনল সেইফ না, এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
ভিটামিন সি
ব্রাইটেনিং ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রোপারটিজ থাকায় স্কিনের জন্য অসাধারণ কাজ করে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়, স্কিনটোন ইভেন রাখতে সাহায্য করে, সান ড্যামেজ কমিয়ে আনে। এছাড়াও স্কিন ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে বুস্ট করে। এমন অনেক বেনিফিটই কিন্তু আছে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্টের।
বায়োটিন বা ভিটামিন বি৭
বায়োটিন মূলত ভিটামিন বি-এর একটি ফর্ম। এই উপাদানটি চুলের কেরাটিন প্রোডাকশন ও হেয়ার ফলিকলের গ্রোথ রেট বাড়িয়ে দেয়। যার কারণে চুল পড়া কমে যায়, নতুন চুল গজায়। হেলদি নেইলস এর জন্যও এই উপাদানটি প্রয়োজন। শরীরে ভিটামিন বি ৭-এর ঘাটতি থাকলে রেড র্যাশ দেখা দিতে পারে।
ভিটামিন বি-এর অন্যান্য ফর্ম
ভিটামিন বি (বিশেষ করে ভিটামিন বি৩ ও ভিটামিন বি৫) আমাদের ত্বকে সেরামাইড প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়। সেরামাইড এক ধরনের লিপিড যেটি আমাদের ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে। এছাড়াও সাইটোকিন নামে এক ধরনের কেমিক্যাল প্রোডাকশন করে যেটি আমাদের ত্বকের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমায়, ফলে একনে বা পিম্পলস অনেকটাই কন্ট্রোলে থাকে।
জিংক
জিংক আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মিনারেল। খেয়াল করলে দেখবেন, মিনারেল সানস্ক্রিনে যখন জিংক থাকে তখন সেটি ত্বকের আপার লেয়ারে প্রোটেকশন শিল্ড তৈরি করে, যা ত্বককে সূর্যের ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখে। আর এই ইউভি রশ্মির কারণেই তো ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে। জিংকের অভাবে চুলও পড়ে যেতে পারে। স্কিন ডিজিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিংকের অভাবেই হয়। প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস প্রতিরোধে জিংক বেশ পাওয়ারফুল একটি মিনারেল! এখন নিশ্চয়ই এর গুরুত্বটা বুঝতে পেরেছেন।
কোলাজেন
আমাদের শরীরে মোটামুটি সব কানেক্টিভ টিস্যুতে কোলাজেন থাকে। কোলাজেন কমে গেলে স্কিনে এজিং সাইনস ভিজিবল হতে শুরু করে। কোলাজেন সাপ্লিমেন্ট পাউডার ও ট্যাবলেট হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়। এটি জয়েন্ট পেইন কমায়, হাড়ক্ষয় রোধ করে। ত্বক ও চুলের জন্যও খুবই উপকারী।
সতর্কতা
এতক্ষণ আমরা বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট সম্পর্কে জানলাম। তবে আপনার শরীরে কোন উপাদানটির ঘাটতি আছে, কী কী লক্ষণ দেখা দিচ্ছে, এসব বুঝে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অথবা নিউট্রিশনিস্ট আপনাকে সাপ্লিমেন্ট সাজেস্ট করবেন। কতদিন কন্টিনিউ করতে হবে, ডোজ কেমন হবে- এগুলো ভালোভাবে জেনে নিন। হুটহাট ফার্মেসি থেকে কোনো সাপ্লিমেন্ট কিনে খাওয়া শুরু করবেন না! আর একটা বিষয়, সাপ্লিমেন্ট আপনার শরীরে স্পেসিফিক নিউট্রিয়েন্ট এর চাহিদা পূরণ করবে। রাতারাতি কোনো ম্যাজিকাল চেঞ্জ কিন্তু আনবে না। একটা সময়ে আপনি পজেটিভ চেঞ্জ দেখতে পারবেন অবশ্যই।
হেলদি ও ব্যালেন্সড ডায়েট আমাদেরকে শুধুমাত্র ভেতর থেকে ফিট নয়, বরং বাইরে থেকেও সজীব ও প্রাণবন্ত রাখে। ভিটামিন সাপ্লিমেন্টস ত্বক ও চুলের জন্য আসলেই বেনিফিসিয়াল কিনা, এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই বুজতে পেরেছেন। দুধ, ডিম, শাকসবজি, বাদাম, ফল এগুলো খেলে বেশিরভাগ ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। তারপরও যদি কোনো একটির ঘাটতি দেখা দেয়, তখন ডাক্তার বা নিউট্রিশনিস্টের সাথে কথা বলে সাপ্লিমেন্টস নেওয়া যেতে পারে।
ছবি- সাটারস্টক