ঈদ-উল-ফিতর-এ যেমন তেমন করে খাওয়া-দাওয়ার দিকে খেয়াল রাখা গেলেও কোরবানির ঈদে এটা সম্ভব হয় না। একে তো ডাইনিং টেবিলে মাংসের নানা পদ থাকে, সেই সাথে মিষ্টান্ন! যারা মোটামুটি সারা বছরই হেলদি ডায়েট মেনে চলেন তারাও একটুখানি ওজন বাড়িয়ে ফেলেন এই সময়। সেই সামান্য ফুলে যাওয়া বা একটুখানি পেট বেড়ে যাওয়া কমাতে ঠিক কী কী করবেন সেই জন্যেই আজকের এই লেখা। যারা সাধারণত উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ধরে রাখেন তারা হঠাৎ ওজন বেড়ে গেলে একটু অস্বস্তিতেই পড়েন। জামাটা হয়তো টাইট হয়ে গেলো বা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছে- এরকম সমস্যা প্রায়ই হয়ে থাকে তাদের। ঈদের পরবর্তী সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের উপায় কী তাহলে? আজকের আর্টিকেলে জানাবো খুব সহজেই কীভাবে অতিরিক্ত মেদ কমাবেন সেটা নিয়েই।
ঈদের পরবর্তী সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের উপায় কী?
বেশি বেশি পানি পান করুন
হুট করেই আমাদের একটুখানি ক্ষুধার ভাব হয়, তখনই আমরা হয়তো দুটো বিস্কিট, চা বা মিষ্টি খেয়ে ফেলি। এটা বাদ দিতে হবে। হুটহাট স্ন্যাক্স খাওয়ার অভ্যাসটা কমিয়ে দিন, বিশেষ করে ঈদের সময়টাতে। এর বদলে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিবেন। ফল, শসা, ওটস এগুলোও খাওয়া যেতে পারে। আর এমনিতেও আমরা পানি কম পান করি। তাই পানির চাহিদাটাও পূরণ করা জরুরি।
হাঁটুন
ঈদের সময় মাংস বেশি খেয়ে যারা একটু ওজন বাড়িয়ে ফেলবেন, তাদের বেলায় খুব বেশি এক্সারসাইজ-এর দরকার পড়ে না। এর বদলে নিয়ম করে একটু হাঁটলেই হয়। প্রতিদিন ত্রিশ মিনিট হাঁটলেই এনাফ। লিফট-এর বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। এতে আপনি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবেন। হাঁটতে বোরিং লাগলে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনুন। পোলাও, মাংস আর কোল্ড ড্রিংকস খেলে এক্সট্রা ক্যালরি তো পোড়াতেই হবে, তাই না? হাঁটার বিকল্প নেই, এটা মনে রাখবেন।
চিনি কম খান ও লো ফ্যাট ফুড সিলেক্ট করুন
ওজন কমাতে চাইলে আপনার রেগুলার সুগার ইনটেক কমানো ছাড়া উপায় নেই। আপাতত কোল্ড ড্রিংকস, বাইরের ফ্রুট জুস- সমস্তই বাদ দিন। চায়ে বা কফিতে চিনি একদম নগণ্য পরিমাণ (চিনি না দিলেতো ভালোই) ব্যবহার করুন। অনেকে জিরো ক্যালোরি সুগার ব্যবহার করেন। এটা পরিহার করুন। এই আর্টিফিশিয়াল সুগার ওয়েট গেইন, মেটাবলিক সিনড্রোম, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়াতে ভূমিকা রাখে। আর হ্যাঁ, কেক-পেস্ট্রি থেকে আপাতত ক’দিনের ছুটি নিন! জানি, ঈদের সময়টাতে মন একটু চায় যে কোল্ড ড্রিংকস খেতে, কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে আপনি নিজের অজান্তেই অনেক বড় ভুল করে ফেলবেন। এর বদলে লো ফ্যাট দই, শসার সালাদ, মধু দিয়ে লেবু পানি এগুলো খেতে পারেন।
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখুন। কাপড়ের আলমারিটা গুছিয়ে ফেলুন, ঘর গোছান, পরিবারের সাথে ভালো সময় কাটান। ট্রাস্ট মি, নিজের কাজগুলো নিজের হাতে করে ফেললে ক্যালরি তো পুড়বেই, সেই সাথে আপনিও ফিট থাকবেন! আর অ্যাক্টিভ থাকলে কিন্তু মনটাও ভালো থাকে!
শর্করা কম খান
যেহেতু একটুখানি ওজন বেড়ে যেতে পারে ঈদের পর, তাই প্রতিদিনের খাবার মেন্যু থেকে শর্করার পরিমাণটা একটু কমিয়ে দিন। তবে ভুলেও প্রোটিন বা ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার বাদ দিবেন না। আপনি হয়তো দুটো রুটি খান, তার জায়গায় দেড়টা রুটি খান। মাছ-মাংস ভুনা, তেলতেলে খাবার তো ঈদের সময় খাবেন, পরবর্তী কয়েকদিন একটু বুঝে খাবেন। যাতে ওজন হুরহুর করে না বেড়ে যায়!
সবশেষে বলবো, আশাবাদী থাকুন। কঠিন কোনো ডায়েটে যাবেন না। হাসিখুশি থাকুন, ঠিক মতো ঘুমান। নিয়ম মেনে চললে দেখবেন এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই ওজন অনেকটা কমে যাবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লিখেছেন- মাহবুবা মিমি
ছবি- সাটারস্টক