ঘুম থেকে উঠেই বুঝতে পারলেন আজ অফিসে যেতে কিছুটা দেরি হয়ে যাবে। এ সময় যত দ্রুত সম্ভব নিজের মাঝে ফ্রেশনেস আনতে গোসল করে নিলেন। কিংবা সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাড়ি ফিরে গোসল করে নিলেন। ফ্রেশ হওয়ার জন্য নিয়ম তো মানলেন, কিন্তু গোসল শেষে আমাদের সাধারণ কিছু অভ্যাস চুলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। কেউ চান চুল ভেজা থাকতেই আঁচড়ে পরিপাটি করে নিতে, দ্রুত শুকাতে অথবা স্ট্রেইট করে ফেলতে। তবে বয়স, শ্রেণীভেদে সবাই কিন্তু নিজের চুলের যত্ন নিতে ভালোবাসেন। ঘরে কিংবা বাইরে, চুলের সাজ ঠিক রাখার জন্য চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা জরুরী। এ জন্য সবার আগে ভেজা চুলের যত্ন নিতে হবে। তাই জেনে নিন ভেজা চুলের যত্নে যে ৫টি ভুল কখনোই করবেন না-
ভেজা চুলের যত্নে যে ৫টি ভুল কখনোই করবেন না-
ভেজা চুল আঁচড়ানো
চুল ভেজা থাকা অবস্থায় সেটি আঁচড়ে নেয়ার অভ্যাস কমবেশি সকলেরই আছে। বিশেষ করে ছেলেদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা অনেক বেশি। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, এ সময় আপনার চুল পড়ার হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। এর মূল কারণ, ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া খুব দুর্বল থাকে। এমন সময় চুল আঁচড়ালে চুলের গোড়ায় থাকা গ্রন্থিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে চুল পড়ার হার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আগা ফাটা, চুল ঝরা কিংবা চুল ফ্রিজি হয়ে যাওয়ার মতো দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি ভেজা অবস্থায় আপনার চুলে হাত দেওয়াও উচিত নয়। তাই চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর জন্য আগে ভালোভাবে শুকানোর জন্য অপেক্ষা করে নেয়াই উত্তম।
ভেজা চুল নিয়ে ঘুমানো
আগের সেই পরিস্থিতিটাই ভাবা যাক। সারাদিনের ক্লান্তি ঝাড়তে গোসলের পর বিছানায় শুয়ে আছেন। যে কোনো সময়েই আপনি হয়ত ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। আর এখানেই ঘটবে সমস্যা। মনে রাখবেন, ভেজা চুল নিয়ে কোনোভাবেই ঘুমানো উচিত নয়। কারণ এর ফলেও আপনার চুলের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। ভেজা চুলে ঘুমালে চুল ভেঙে যেতে পারে, এমনকি চুল ড্যামেজও হতে পারে। যদি একান্তই ঘুমানোর আগে চুল ধুয়ে থাকেন তবে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে হলেও অন্তত চুল শুকিয়ে ঘুমানো উচিত। তবে বাতাসে চুল শুকিয়ে ঘুমাতে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
চুল ভেজা অবস্থায় বাঁধা
ভেজা চুল বেঁধে নেয়ার প্রবণতা অনেক নারীর মাঝেই দেখা যায়। খুব দ্রুত কোনো অনুষ্ঠানে যেতে হচ্ছে কিংবা অফিসে যাওয়ার তাড়া; ভেজা অবস্থাতেই চুল বেঁধে ফেলেন অনেকে। চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে, এই অভ্যাসটাও ত্যাগ করা দরকার। কারণটা ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া খুব দুর্বল থাকে। তাই ভেজা চুল বেঁধে রাখলে চুল শুকিয়ে যাওয়ার পর চুলের গোড়ার গ্রন্থিগুলোর উপর চাপ বাড়ে। ভেজা চুলে বেণী কিংবা ঝুঁটিও করা উচিত নয়। এতে চুলে গিঁট লাগার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
তোয়ালে দিয়ে ঘষা
কমবেশি আমাদের সকলেরই ধারণা থাকে, তোয়ালে দিয়ে যত জোর দিয়ে ঘষা যায়, চুল তত দ্রুত শুকাবে। ধারণাটা সঠিক হলেও, এর ফলাফল খুব বেশি সুখকর নয়। ভেজা চুল শুকাতে গিয়ে তোয়ালে দিয়ে জোরালো হাতে চুল মুছে নেয়া একেবারেই উচিত নয়। ভেজা চুলের গোড়া অত্যন্ত দুর্বল থাকায় তোয়ালে দিয়ে জোরে ভেজা চুল ঘষলে চুলের গোড়ার দিকের কোষগুলোতেও চাপ পড়ে। এক্ষেত্রে অবশ্য আপনার ব্যবহার্য তোয়ালে নিয়েও কিছুটা ভাবার প্রয়োজন আছে। এ কারণে ঠিক কী কাপড়ের আর কোন ধরণের তোয়ালে ব্যবহার করছেন, সেটাও বুঝে নেয়া দরকার। সবচেয়ে ভালো পন্থা, মাইক্রোফাইবার তোয়ালে দিয়ে আলতো হাতে চাপ দিয়ে চুলের বাড়তি পানি শুকিয়ে নেওয়া এবং এরপর বাতাসে চুল শুকাতে দেওয়া।
হিট দেওয়া
চুলের ফ্যাশনের জন্য বর্তমান সময়ে হেয়ার ড্রায়ার, হেয়ার স্ট্রেইটনার ইত্যাদি সরঞ্জামগুলোর ব্যবহার অনেক বেশি বেড়েছে। তবে সময় আর শ্রম সাশ্রয় করে দেয়া এসব জিনিসের ক্ষতিকর দিকও কিন্তু নেহায়েত কম নয়। ব্যস্ততার এই সময়ে অনেকেই এসব সরঞ্জামগুলোর প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে উঠেন। আর যদি আপনার নিজেরও এই ধরণের কোনো অভ্যাস থাকে, তবে তা আপনার জন্য ভালো নয়।
স্ট্রেইটনার বা ড্রায়ার থেকে বেরিয়ে আসা তাপ আমাদের চুলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর ভেজা চুলে এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা আরো ক্ষতিকর। কারণ ভেজা অবস্থায় চুল সবচেয়ে বেশি তাপ শোষণ করে। ফলে চুল পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চুল ভালোভাবে শুকানোর পর এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত।
চুলের যত্নে আমরা যতকিছুই করি না কেন, যদি ভেজা চুলেই সঠিক নিয়ম মেনে না চলি, তাহলে কখনোই চুল সুস্থ থাকবে না। তাই সবার আগে ভেজা চুলের যত্ন নিন। অথেনটিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক