সময়ের পরিক্রমায় স্কিন কেয়ারের ট্রেন্ডে এসেছে পরিবর্তন। ত্বকের যত্নে ক্লেনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং, সান প্রোটেক্টিং এই স্টেপগুলো সম্পর্কে এখন কম বেশি সবাই জানে। স্কিন কেয়ারের বেসিক স্টেপগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ডাবল ক্লেনজিং’। অনেকেরই কনফিউশন আছে এই ব্যাপারে। ডাবল ক্লেনজিং কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে করতে হয়; এই বিষয়ে বেসিক নলেজ শেয়ার করতেই এই আর্টিকেলটি লেখা। কোন বয়স থেকে এটি করা উচিত, একনে প্রন স্কিনে ডাবল ক্লেনজিং করা যায় কিনা, এই প্রশ্নগুলোর উত্তরও থাকছে আজকের আর্টিকেলে।
প্রথমেই জেনে নেই ডাবল ক্লেনজিং কী?
ডাবল ক্লেনজিং হলো একটি ক্লিনিং মেথড, অয়েল বেইজড ক্লেনজার ও ফোম বেইজড ক্লেনজার দিয়ে ফেইসটাকে প্রোপারলি ক্লিন করার একটি পদ্ধতি। এটা আমাদের স্কিন থেকে মেকআপ, ধুলা-ময়লা, এক্সেস অয়েল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ডাবল ক্লেনজিংয়ে দুই ধাপে ত্বক পরিষ্কার করা হয়।
বছরের পর বছর মেকআপ তুলতে আমরা শুধু সাবান দিয়েই মুখ ধুয়ে এসেছি, কিন্তু একটু খেয়াল করলেই মনে পরবে যে সাবান ইউজের ফলে আমাদের স্কিন কতটা ড্রাই হয়ে যেত, রাফ লাগতো! অনেকে তেল ব্যবহার করে মেকআপ তুলে তারপরে সাবান বা ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতো। অনেক তেল আছে, যেগুলো ত্বকের রোমকূপ বা পোরস বন্ধ করে দেয়। এখন স্কিন কেয়ার নিয়ে আমরা সবাই সচেতন। বেসিক্যালি এমন অয়েল বেইজড বা ওয়াটার বেইজড ক্লেনজার ইউজ করতে হবে, যেটা পোর ক্লগড করবে না, বরং ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করবে!
কেন প্রয়োজন দুই ধাপে ত্বক পরিষ্কার করার?
আমরা প্রতিদিনই এমন অনেক রকমের মেকআপ প্রোডাক্টস, সানস্ক্রিন, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি, যেগুলোতে অয়েল সল্যুবল ইনগ্রেডিয়েন্টস থাকে। সহজ করে বললে, কিছু উপাদান থাকে যেগুলো পানিতে দ্রবণীয় না! ফলে শুধু পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে বা ফেইস ওয়াশ ইউজ করতে সেটা কিন্তু পুরোপুরি ত্বককে পরিষ্কার করতে পারে না। সেইক্ষেত্রে ডাবল ক্লেনজিংয়ে একবার অয়েল বেইজড ক্লেনজার এবং পরে ফোম বেইজড ক্লেনজার দিয়ে যখন আপনি মুখ পরিষ্কার করছেন, তখন স্কিনে জমে থাকা ময়লা, এক্সেস সেবাম, ক্রিম এগুলো সবই প্রোপারলি ক্লিন হয়ে যাবে। এতে স্কিনের পোরস ক্লগ হবে না এবং ফ্রেশ দেখাবে।
ডাবল ক্লেনজিং করার নিয়ম
১) প্রথমে অয়েল বেইজড ক্লেনজার দিয়ে মুখে ম্যাসাজ করে নিন। আলতো হাতে ম্যাসাজ করতে হবে। আই মেকআপ, লিপস্টিক চেপে চেপে মুছে নিন। ক্ষেত্রবিশেষে মাইসেলার ওয়াটার বা মেকআপ রিমুভিং ক্লেনজিং অয়েলও ইউজ করতে পারেন। কটন প্যাড ব্যবহার করলে সহজেই মেকআপ রিমুভ করা যাবে।
২) দ্বিতীয় ধাপে সামান্য ফেইস ওয়াশ হাতে নিয়ে ফোম তৈরি করে মুখে ম্যাসাজ করুন। এবার পানির ঝাপটা দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী যেকোনো জেল, ক্রিম বা ওয়াটার বেইজড ক্লেনজার আপনি সিলেক্ট করতে পারেন। এই দুই ধাপে ক্লেনজিং করলে স্কিন প্রোপারলি ক্লিন হবে, ব্রেক আউটের চান্স থাকবে না, স্কিন সফট ও হেলদি থাকবে।
কতবার করতে হবে?
দৈনিক একবার করলেই যথেষ্ট। প্রয়োজন বুঝে দুইবারও করা যেতে পারে। নাইট টাইম স্কিন কেয়ারের প্রথম স্টেপে ডাবল ক্লেনজিং করতে বলা হয়, এতে সারাদিনে যে মেকআপ বা স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ইউজ করা হয়েছে, সেগুলো রিমুভ হয়ে যাবে। ত্বকে জমে থাকা ধুলো-ময়লা, পল্যুশন, এক্সেস অয়েল এগুলোও ভালোভাবে ক্লিন হবে।
কোন বয়স থেকে ডাবল ক্লেনজিং করতে হয়?
টিনেজ থেকেই তো সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে বলা হয়। এই বয়স থেকেই ডাবল ক্লেনজিং করা উচিত। ছেলে-মেয়ে সবারই উচিত ত্বককে পরিষ্কার রাখা। এটা টিনেজ থেকে শুরু করে সব বয়সের সবার জন্যই প্রযোজ্য। হেলদি ও ফ্ললেস স্কিন পেতে প্রথম শর্তটিই হচ্ছে ভালোভাবে ফেইস ক্লিন করতে হবে!
সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ডাবল ক্লেনজিং করতেই হবে?
হ্যাঁ, অবশ্যই করতে হবে! কেননা বেশিরভাগ সানস্ক্রিন ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট, স্কিনের উপর লেয়ার ক্রিয়েট করে ক্ষতিকারক সূর্যরশ্মি থেকে আপনার ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। আবার সময়মতো রিঅ্যাপ্লাই করতেও হয়। শুধু পানি দিয়ে ধুলে তাতে ত্বক পুরোপুরি ক্লিন হয় না। আপনাকে ডাবল ক্লেনজিং মেথড ফলো করতে হবে। এটা মিস করলে স্কিনের নানা রকম ক্ষতি হতে পারে, যেমন- পোরস ক্লগড হয়ে একনে বা পিম্পল ওঠা, ডেড সেলস জমে যাওয়া, স্কিনে ডার্ক প্যাচেস পরা ইত্যাদি।
একনে প্রন স্কিনে করা যাবে?
অবশ্যই করা যাবে! বরং একনে প্রবলেম থাকলে ডাবল ক্লেনজিং তো বেশি দরকার। কেননা পোরস ক্লগড হলে এবং ত্বকের উপরিভাগে ময়লা জমলে সেটা তো ব্রণের প্রাদুর্ভাব আরও বাড়িয়ে দেয়। ঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করলে অয়েল প্রোডাকশন কন্ট্রোলে থাকে এবং একনে প্রবলেম আস্তে আস্তে কমে যায়।
আশা করছি, ডাবল ক্লেনজিং নিয়ে আপনাদের কনফিউশন কিছুটা হলেও ক্লিয়ার করতে পেরেছি। যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, দিন শেষে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। অথেনটিক প্রোডাক্টস কিনতে আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক