বিয়ের পর পরই প্রথম যেই চিন্তা মাথায় আসে, “সন্তান কখন নিবেন?” নতুন দাম্পত্য জীবনে, নিজেদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকাটা খুবই জরুরি। আর্থিকভাবে সচ্ছলতা, ক্যারিয়ার, পড়াশুনার কথা চিন্তা করেই একটি নতুন দম্পতি সন্তান নেয়ার ডিসিশন নিয়ে থাকে। প্ল্যান অনুযায়ী যখন বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করা হয়, তখন অনেক ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সন্তান নেয়ার উপযুক্ত বয়সের উপর ভরসা করেই কিন্তু আপনি কয়টি বাচ্চা নিতে পারবেন সেই ডিসিশন নিতে পারবেন । তাই আজকের আর্টিকেলটিতে কোন বয়সে সন্তান নেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে; তার উত্তর দিতে এই তথ্যগুলো আপনাকে সাহায্য করবে।
বাচ্চা নেয়ার সম্ভাবনা কত বছর বয়স থেকে কমতে থাকে?
নারীদের প্রজনন ক্ষমতা তাদের বয়সের উপর নির্ভর করে। প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মের সময় নারীরা ১০-২০ লক্ষ ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায়, যা বয়সের সাথে সাথে কমতে শুরু করে। বয়স যখন ৩৭ এর কোঠায় গিয়ে পৌছায় তখন ২৫ হাজারে গিয়ে ঠেকে। তাই ডাক্তারদের মতে, ৪০ এরপর কনসিভ করার চিন্তাভাবনা থাকলে সব সময় ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে, কারণ এই সময় বাচ্চা এবং মায়ের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকে অনেক।
অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে, পুরুষেরা শুক্রাণু নিয়ে জন্মায় না। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে আস্তে আস্তে শুক্রাণু তৈরী হতে থাকে। তাই, পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা নারীদের অনেক পরেই কমতে থাকে। বয়স যখন ৪১-৪৫ হয়ে যায়, তখন একজন পুরুষের প্রজনন প্রতি বছর সাত শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
বিয়ের পরপরই বাচ্চা নেয়ার সিদ্ধান্তে উভয়পক্ষের বয়স বিবেচনায় আনতে হবে। জৈবিক নিয়ম অনুযায়ী ২০ এর ঘরের নারী স্বাভাবিক নিয়মে সহজেই গর্ভবতী হতে পারেন তবে তা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমশই বিষয়টি জটিল হতে থাকে। তবুও বাচ্চা জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি অসম্ভব নয়। ৩৫ বছরের পরেও মহিলারা সফলভাবে গর্ভবতী হতে পারে। যদি আপনি দুটি বা তার বেশি সন্তান নিতে চান তবে, আপনার উচিত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি আগে থেকেই শুরু করুন।
কোন বয়সে সন্তান নেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে?
বয়সভেদে সন্তান নেয়ার ক্ষমতায় তারতম্য হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক, কোন বয়সে সন্তান নেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
নারীর ক্ষেত্রে প্রজননের সম্ভাবনা
২০ এর কোঠায় প্রজননের সম্ভাবনা
- বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী এই সময়টি হলো সন্তানধারণের আদর্শ সময়। জৈবিক ঘড়ি অনুযায়ী, মেয়েদের জন্য গর্ভধারণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল ২৪ বছর বয়স।
- এই সময় জেনেটিক সমস্যা কম থাকে।
- সিস্ট, ফাইব্রোয়েট এর মত সমস্যা কম থাকে।
- কিন্তু এই বয়সে অনেকেই শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন না।
৩০ এর কোঠায় প্রজননের সম্ভাবনা
- এই সময় অনেকেই সন্তান নেয়ার জন্য উপযুক্ত সময় মনে করেন।
- শারীরিক ও মানসিকভাবে নারী এই সময় প্রস্তুত থাকেন।
- কিন্তু ৩৫ এরপর থেকেই কিন্তু প্রজনন ক্ষমতা কমতে থাকে।
- ৩৫ বছরের পরে গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে নানান অস্বাভাবিকতার ঝুঁকি থাকে। যেমন, ডাউন সিনড্রোম যুক্ত শিশুর জন্ম হতে পারে। (এরকম শিশুর জন্মের হার প্রতি ১২০০ জনের মধ্যে ১ জন,গর্ভাবস্থায় দম্পতিরা তাই ডাউন সিনড্রোম টেস্ট করিয়ে নিতে পারেন)।
- ৩৫ এরপর গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। তাই ৩০-৩৫ এর মধ্যেই সন্তান নিয়ে নেয়া উপযুক্ত সময়।
৪০ এর কোঠায় প্রজননের সম্ভাবনা
- ডিম্বাণুর গুনাগুন কমে যাওয়ায় এই সময় সন্তান নিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই সময়ে যেকোনো পদক্ষেপ নেয়া ভালো।
- শিশুর জন্মের সময় ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- হাই ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস, প্লেসমেন্ট প্রবলেম প্রভৃতি কারণে গর্ভবতী হওয়া খুব ঝুঁকিবহুল হয়ে পড়ে।
- সহ্যশক্তির মাত্রা কমে যায় তাই সন্তান জন্ম দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
পুরুষের ক্ষেত্রে প্রজননের সম্ভাবনা
পুরুষের যেহেতু ৪৫ বছরের পর প্রজনন ক্ষমতা কমতে থাকে, তাই এই বয়সের পর সন্তান নিতে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে অনেক সময় শিশু অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে। , এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এটা অসম্ভব নয় যে; একজন বয়স্ক মানুষ একটি শিশুর বাবা হতে পারবেন। বাস্তবে; পুরুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রজনন ক্ষমতা তেমনি হ্রাস পায় ঠিক যেমন নারীদের প্রাকৃতিক গর্ভধারণকে আরো কঠিন করে তোলে !
প্রজননের সম্ভাবনা কমে যাওয়ার লক্ষণ
চলুন জেনে নেয়া যাক, নারী ও পুরুষ উভয়ক্ষেত্রে প্রজননের সম্ভাবনা কমে যাওয়ার লক্ষণগুলো!
নারীদের ক্ষেত্রে
নারীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে, যার জন্য পরবর্তীতে কনসিভ করতে সমস্যা হয়। ভয় পাবার কিছু নাই। তবে, নিচের এই সমস্যাগুলো যদি নিজের মধ্যে দেখতে পান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া শুরু করুন। লক্ষণগুলো হলো-
মাসিক অনিয়মিত
- ২১ দিনের কম সময়ে মাসিক শুরু হওয়া।
- লম্বা সময়ের পর পর মানে ৩৫ দিন পর পর যদি মাসিক হয়।
- কয়েক মাস বন্ধ থেকে থেকে যদি মাসিক হয়।
এই রকম সমস্যা দেখা দিলে এটা PCOS (Polycystic Ovary Syndrome) রোগের লক্ষণ। শরীরে অতিরিক্ত লোম হওয়া, মোটা হয়ে যাওয়াও PCOS রোগের লক্ষণ। কিন্তু এই লক্ষণগুলো অনেকের দেখা দেয় আবার নাও দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও ব্যথা
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হলে ও খুব ব্যথা করলে সেটা জরায়ুর ফাইব্রোয়েটে (Uterine Fibroids) বা এক ধরণের টিউমারের লক্ষণ হতে পারে। এই টিউমারের জন্য অনেক সময় ডিম্বাণু জরায়ুর গায়ে বসতে পারে না। ফাইব্রোয়েটের ফলে ডিম্বাণুর মুখ আটকে যায় যার ফলে জরায়ুতে ডিম পৌছায় না।
অন্যান্য-
- এন্ড্রোমেট্রিওসিস নামক রোগ এছাড়াও, আরও অনেক রোগ আছে যার জন্য কনসিভ করার পরে এবং আগে সমস্যা হয়।
- থাইরোইয়েডের সমস্যা বা বেশি ওজন থাকলেও কিন্তু কনসিভ হয়ে সমস্যা হয়।
পুরুষদের ক্ষেত্রে
বাহির থেকে কোন রোগের লক্ষণ পাওয়া না গেলেও, পুরুষদেরও প্রজনন প্রক্রিয়ায় ব্যঘাত ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে ডাক্তাররা কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষা উভয়কেই দিয়ে থাকে। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমেই সমস্যাগুলো ধরতে পারা যায়।
- বংশগত কোন সমস্যা থাকলে।
- হরমোনাল ইমব্যালেন্স।
- লাইফ স্টাইল।
- অস্বাভাবিক স্পার্ম ফাংশন।
কোন বয়সে সন্তান নেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, আশা করি আজকে জানতে পেরেছেন। পরিশেষে, আপনার জীবনের যেকোনো সময়কালে আপনার সন্তান নেওয়ার কারণগুলি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু সন্তানকে বড় করে তোলার বিষয়টি যেন আপনার সুখের সময় হয়; চ্যালেঞ্জ না হয়ে দাঁড়ায়। উপযুক্ত সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত যেন আপনার জীবনকে যেন আরও মধুর করে তোলে। প্রথম বাচ্চা নেয়ার উপযুক্ত সময় আপনাকে সাহায্য করবে; আপনি কয়টি বাচ্চা চাচ্ছেন! একটি, দুইটি বা তিনটি? আজকে তাহলে এই পর্যন্তই। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ছবি- ক্যানভা, পিক্সাবে