তন্বী এখন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে। প্রতিদিন ক্লাসের জন্য রোদের মধ্যে বের হতে হয় বলে স্কিনে বেশ সানট্যান পড়ে গেছে। এই ট্যান রিমুভ করতে অনেক রিসার্চের পর সোশ্যাল মিডিয়ার বেশ হাইপড একটি ফেইস সিরাম পারচেজ করলো তন্বী। সে ভেবেছিলো যেহেতু সেই সিরামের অনেক পজেটিভ রিভিউ আছে, তাই এটি ইউজ করলে স্কিন কন্ডিশন অবশ্যই ইমপ্রুভ করবে। কিন্তু তন্বী অবাক হয়ে দেখলো, যে প্রোডাক্ট ইউজ করে অন্যরা এতো বেনিফিট পেয়েছে, সেই প্রোডাক্ট তার স্কিনে কাজই করছে না; বরং ব্রেকআউটস দেখা দিয়েছে! হাইপড স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট আমার ত্বকে কেন স্যুট করছে না, এই প্রশ্নটা অনেকেরই!
একটু খেয়াল করে দেখুন, এই সিচুয়েশন আরো অনেকেই ফেইস করছে। আসলে বিভিন্ন কারণে হাইপড প্রোডাক্টস, যার অনেক অনেক পজেটিভ রিভিউ আছে, সেগুলো আমাদের স্কিনে প্রোপারলি কাজ করে না। আজকের ফিচারে সেই কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
আমাকে স্যুট না করলেই কি সেই প্রোডাক্টটি নকল?
স্কিন হেলদি রাখতে আমরা বিভিন্ন প্রোডাক্ট স্কিনকেয়ার রুটিনে অ্যাড করি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নামকরা ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট আর অসংখ্য কাস্টমারের পজেটিভ রিভিউ থাকা সত্ত্বেও সেটি আমাদের স্কিনে একেবারেই কাজ করে না। অনেকে ক্লেইম করেন যে তার প্রোডাক্টটি নকল, এই কারণে স্কিনে স্যুট করছে না! এই ধারণাটি সঠিক নয়! কারণ কোনো প্রোডাক্ট আপনার স্কিনে কতটুকু ইফেক্টিভলি কাজ করবে তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। দেখা যায়, আমাদের বিভিন্ন হ্যাবিট, লাইফস্টাইল কিংবা হরমোনাল কারণে হাইপড প্রোডাক্টও সেভাবে বেনিফিট দেয় না আর স্কিনে প্রোপারলি স্যুট করে না!
চলুন এই কারণগুলো সম্পর্কে আরেকটু ডিটেইলে জেনে নেওয়া যাক-
হাইপড স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কাজ না করার কারণ
১) নিয়মিত ব্যবহার না করা
স্কিনকেয়ারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা একটি কথা সবসময় বলে থাকেন, সেটি হলো “Consistency is the Key“, অর্থাৎ যদি আপনি কোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে প্রোপার বেনিফিট পেতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই তা নিয়মিত ধৈর্যসহকারে ইউজ করতে হবে। আমরা অনেকেই পড়াশোনা বা কাজের ব্যস্ততা থাকার ফলে প্রোডাক্ট রেগুলারলি ইউজ করতে ভুলে যাই। এতে গ্যাপ ক্রিয়েট হয়, যার ফলে দেখা যায় সেই প্রোডাক্টটি ইউজ করে সেভাবে কোনো উপকারই হচ্ছে না। কাজের ব্যস্ততা শেষে যতই টায়ার্ড ফিল করুন না কেন, বেসিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট নিয়মিত ইউজ করুন। এতে আপনি নিজেই স্কিন কন্ডিশনে পজিটিভ চেঞ্জ দেখতে পাবেন।
২) স্কিন টাইপ না বুঝে প্রোডাক্ট পারচেজ করা
সব প্রোডাক্ট সবার স্কিনের জন্য স্যুইটেবল হবে না। তাই স্কিন টাইপ বুঝে প্রোডাক্ট পারচেজ করা খুবই ইম্পরট্যান্ট। আমরা কোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের বেনিফিট জানলেই সেটা কিনতে ব্যস্ত হয়ে যাই, অথচ সেই প্রোডাক্টটি আদৌ আমাদের স্কিন টাইপের জন্য স্যুইটেবল কিনা, তা আর জানার চেষ্টা করি না! ফলে দেখা যায় স্কিনের কোনো ইমপ্রুভমেন্ট তো হয়ই না, বরং আরো ক্ষতি হওয়ার পসিবিলিটি থাকে।
যেমন ধরুন, যদি আপনার স্কিন টাইপ ড্রাই হয়, তাহলে অয়েলি স্কিনের জন্য ফর্মুলেটেড ফেইসওয়াশ ইউজ করলে স্কিন আরো বেশি ড্রাই মনে হবে। তাই প্রোডাক্ট কেনার আগে সেটি কোন স্কিন টাইপের জন্য তৈরি করা হয়েছে তা ভালোভাবে জেনে নিন, তাহলেই বেস্ট রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব!
৩) কয়েকদিন ইউজ করার পর ছেড়ে দেওয়া
স্কিনকেয়ারের একটি গ্রাউন্ড রুল হচ্ছে, কোনো প্রোডাক্ট ইউজ করে ভালো রেজাল্ট পেতে চাইলে তা ধৈর্য ধরে ইউজ করতে হয়। এতে সেই প্রোডাক্ট সহজেই আপনার স্কিন কন্ডিশন ইমপ্রুভ করতে ও স্কিন কনসার্ন সল্ভ করতে পারবে। সবসময় মনে রাখবেন, স্কিনকেয়ার একটি লং টার্ম প্রসেস, রেগুলার বেসিক রুটিন আর কী! ভিজিবল রেজাল্ট পেতে যেকোনো প্রোডাক্ট নিয়মিত ২-৩ মাস ইউজ করা উচিত। প্রোডাক্ট ওয়াইজ এটি ভ্যারি করতে পারে। যেমন রেটিনলের ইফেক্টিভনেস বা বেনিফিট পেতে ৬ মাস অপেক্ষা করতে বলা হয়।
৪) একসাথে অনেকগুলো অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ইউজ করা
অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো আমাদের বিভিন্ন স্কিন কনসার্ন যেমন একনে, হাইপারপিগমেন্টেশন অথবা রিংকেলস দূর করতে কাজ করে। কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো রেটিনল, নিয়াসিনামাইড, ভিটামিন সি ইত্যাদি। স্কিনকেয়ার রুটিনে এগুলো অ্যাড করা হলে অ্যামেজিং বেনিফিটস পাওয়া যায় ঠিকই, তবে আপনারা যদি একসাথে অনেকগুলো অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ইউজ করা শুরু করেন, তাহলে কোনোটাই ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। বরং স্কিন ব্যারিয়ার ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। তাই স্কিনকেয়ার রুটিনে সেইম টাইমে মাল্টিপল অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস কখনোই রাখবেন না!
৫) হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন না করা
“এই প্রোডাক্ট ইউজ করে তো আমার স্কিনে কোনো চেঞ্জই আসেনি” এমন কমপ্লেইন অনেকেরই। একটু খেয়াল করে দেখুন তো, আপনার লাইফস্টাইল আর ফুড হ্যাবিট ঠিকঠাক আছে কিনা? অনেকেই নিয়মিত বাইরের অয়েলি ও জাংক ফুড খাচ্ছেন, পরিমাণমতো পানি পান করছেন না, আবার রাতে সময়মতো ঘুমাতেও যাচ্ছেন না! আসলে ফ্ললেস স্কিনের জন্য হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করার কোনো বিকল্প নেই। যত হাইপড প্রোডাক্টই ইউজ করুন না কেন, যদি অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে ইউজ্ড টু হয়ে থাকেন, তাহলে স্কিনকেয়ারের অ্যাকচুয়াল বেনিফিট কখনোই পাওয়া যায় না!
তাই নিজের লাইফস্টাইলে মোডিফিকেশন আনুন। বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার, ফলমূল ও শাকসবজি ডায়েট চার্টে রাখুন। সেই সাথে প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন। ও হ্যাঁ, রাতে অবশ্যই ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন। সেই সাথে প্রোপার স্কিনকেয়ার রুটিন ফলো করুন।
৬) হরমোনাল চেঞ্জ
অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কোনো প্রোডাক্ট নিয়ম মেনে রেগুলারলি ইউজ করার পরেও স্পেসিফিক স্কিন কনসার্ন দূর হওয়ার বদলে আরো বেড়ে যাচ্ছে। হরমোনাল চেঞ্জের কারণে এমন হতে পারে। PCOS থাকলে, প্রেগনেন্সিতে অথবা মেনোপজের আগে স্কিনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আশা করি এখন থেকে আপনারা যেকোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কেনার সময় নিজের স্কিন টাইপ বুঝে কিনবেন, সেগুলো নিয়মিত ইউজ করবেন এবং হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করার চেষ্টা করবেন। আর হ্যাঁ, হাইপড স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট আপনার ত্বকে স্যুট না-ও করতে পারে, স্কিনের কনসার্ন ও ডিমান্ড বুঝে আপনার জন্য বেস্ট প্রোডাক্টটি চুজ করুন।
অবশ্যই অথেনটিক স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট পারচেজ করতে হবে। আমি সবসময়ই কেনাকাটার জন্য সাজগোজের উপর ভরসা রাখি। আপনারাও ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। সাজগোজের বেশ কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। এ শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টারে অবস্থিত। এই শপগুলোর পাশাপাশি চাইলে অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার দরকারি বা পছন্দের সব প্রোডাক্ট।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক