একটা সময় ছিলো যখন বাইরে শুধু পুরুষরা কাজ করতো আর মেয়েরা ঘরের কাজ করতো, চার দেয়ালের মাঝেই ছিল তাদের গোটা দুনিয়া। মেয়েরা শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা, গবেষণা, ব্যবসা, প্রযুক্তি সবকিছু থেকে বঞ্চিত হতো। কিন্তু এখন সময় অনেক বদলে গেছে। মেয়েরা সমঅধিকার পাওয়ার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। ঘর চালানোর সাথে সাথে শিক্ষা, গবেষণা থেকে শুরু করে দেশ চালানোর মতো কাজও করছে মেয়েরা। অনেক মেয়েরাই মোটিভেশনের অভাবে ও সুযোগ না পাওয়ার কারণে আত্মনির্ভরশীল হতে পারছে না। ইচ্ছাশক্তি প্রবল হলে কোনো কিছুই এখন আপনাকে দমাতে পারবে না। ঘরে বসেও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে আপনি আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে পারেন। মেয়েদের আর্থিকভাবে সাবলম্বী অথবা আত্মনির্ভরশীল হওয়া কেন প্রয়োজন সেটা নিয়েই আজকের আর্টিকেল।
মেয়েদের আর্থিকভাবে সাবলম্বী কেন হতে হবে?
নারীদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য কেন এতো লড়াই? অনেক মেয়েরা পড়াশুনার পাশাপাশি অনলাইনে বিজনেস করছে, অনেক মেয়েরাই সংসার সামলে হোমমেড ফুড নিয়ে কাজ করছে, সংসার আর সন্তান সামলিয়ে অফিসে যাচ্ছে এমন মেয়ের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। নিজের একটা পরিচয় হবে, এটাই সবাই চায়। মেয়েদের আর্থিকভাবে সাবলম্বী অথবা আত্মনির্ভরশীল হওয়া কেন প্রয়োজন সেটা জেনে নেই চলুন। এই আর্টিকেল থেকে একজন নারীও যদি মোটিভেটেড হয়, তাহলেই আমার লেখা সার্থক।
১. ভালো জীবনযাপনের জন্য ও পরিবারকে সাপোর্ট করতে
এখন সবাই কিন্তু ভালোমানের জীবনযাপন করতে চায়। সময়ের সাথে সাথে সবকিছুর মূল্য এতো বেড়ে গেছে যে পরিবারে একজন উপার্জনকারী মানুষ থাকলে সব খরচ বহন করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বাড়ি ভাড়া, সন্তানের পড়াশোনার খরচ, চিকিৎসা, খাওয়া দাওয়া এছাড়াও আরো অনেক খরচ থাকে যা একজনের পক্ষে চালানো চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। তাই যেসব পরিবারের নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয় তারা শুধু পরিবারের দৈনন্দিন খরচেই অবদান রাখতে পারেন না, বরং পরিবারের আপদ বিপদের সময়ও এগিয়ে এসে সাহায্য করতে পারে। এজন্য প্রতিটা মেয়ের আত্মনির্ভরশীল হওয়া প্রয়োজন।
২. মনোবল বাড়ানোর জন্য ও নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে
আর্থিকভাবে সাবলম্বী মানুষ তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই ব্যাপারে কারও উপর নির্ভর করতে হয় না। এটি একজন মানুষের আত্মসম্মান বৃদ্ধি করে এবং জীবনে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। আমাদের সমাজের অধিকাংশ নারীর তাদের খরচ এবং প্রয়োজন মেটানোর জন্য স্বামী বা পিতামাতার উপর নির্ভর করতে হয়। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারলে, তারা তাদের নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করতে সক্ষম হবে। সেই সাথে পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারবে। এতে করে মনোবলও বাড়ে। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় যে মেয়েদের কথারও মূল্যায়ন করা হয় না। নিজের একটা পরিচয় থাকলে এই ধরনের সিচুয়েশনে পড়তে হবে না!
৩. পরনির্ভরশীলতা বন্ধ করার জন্য
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েদের বিয়ের পরে আর্থিকভাবে স্বামীর উপর পুরোপুরি নির্ভর করে। অবশ্যই একজন স্বামী তার স্ত্রীর দায়িত্ব নিবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকসময় তারা মানসিক এবং শারীরিকভাবে অত্যাচারিত হলেও কিছু করার থাকে না, কারণ আর্থিকভাবে স্বামীর উপরই ভরসা করতে হচ্ছে। আর্থিকভাবে স্বাধীন হতে পারলে আপনাকে কখনো অসহায় বোধ করতে হবে না। তাই নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে একটু ভাবুন!
৪. একজন রোল-মডেল হতে
একজন নারী যিনি পরিবারের চাহিদাগুলোকে আর্থিকভাবে ও আবেগ দিয়ে পূরণ করতে পারেন, তিনি তার সন্তানদের কাছে একটি রোল মডেল হয়ে থাকেন। সন্তানরা কিন্তু মায়ের মতো আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠবে। শিশুরা যা দেখে তা থেকেই শেখে। যদি বাচ্চারা দেখে যে তাদের মায়েরা আর্থিকভাবে স্বাধীন, তারা অর্থের মূল্যও বুঝতে পারবে এবং বড় হওয়ার পর জীবনে স্বাবলম্বী হবার জন্য অনুপ্রাণিত হবে।
৫. অনিশ্চয়তা দূর করতে
প্রতিটি পরিবারকে সবসময় যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। কারণ এখনকার দিনে অনেক চাকরি-ই আছে, যেগুলো খুব একটা নিরাপদ নয়, চাকরি হারানোর ভয় থাকে এবং জীবনও অনিশ্চিত। স্বামী যদি একমাত্র অর্থ উপার্জনকারী হয়, স্ত্রী এবং বাচ্চারা তার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়, এটা একটা পরিবারের জন্য এটা বেশ চিন্তার কারণ। কোনো কারণে সেই চাকরি চলে গেলে সেটা পুরো পরিবারের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। কিন্তু স্বামীর পাশাপাশি যদি স্ত্রীও উপার্জন করে তাহলে পরিবার এবং সন্তানরা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে না।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ নারীরা আজ আত্মনির্ভরশীল। এই সংখ্যা এখন দিন দিন বাড়ছে। সময়ের সাথে সাথে নারীদের কর্মক্ষেত্রে উন্নয়নের সাথে সাথে নারী উদোক্তার সংখ্যা এখন ক্রমশ বেড়ে উঠছে। উদোক্তা হতে চাই সাহস, সদিচ্ছা আর পরিবারের সাপোর্ট। সব মেয়েদের জন্যই নিজের পায়ে দাঁড়ানো, নিজে ইনকাম করা, নিজের একটা পরিচয় তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক নিরাপত্তা প্রতিটা মানুষেরই থাকা প্রয়োজন। মেয়েদের আর্থিকভাবে সাবলম্বী অথবা আত্মনির্ভরশীল হওয়া কেন প্রয়োজন সেটা নিয়ে কিছুটা হলেও আজ আপনাদের জানাতে পেরেছি। আশা করছি কিছুটা হলেও আপনারা অনুপ্রাণিত হলেন। শুভ কামনা সকলের জন্য।
ছবি- সাজগোজ