স্কিনকেয়ার নিয়ে আলোচনায় আজকাল হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এর নাম প্রায়ই শোনা যায়। সিরাম, ক্লেনজার, লোশন, ক্রিম বা এসেন্স এমন বিভিন্ন প্রোডাক্টে এর উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু আমরা কয়জন জানি এটি আসলে কী বা কীভাবে এটি স্কিনে বেনিফিট দেয়? স্কিনকেয়ার ট্রেন্ডে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড কেন এত পপুলার এবং কেন এটি স্কিনকেয়ার রুটিনে থাকা জরুরি সে সম্পর্কে জানতে হলে আজকের বাকি আলোচনাটা একটু মন দিয়ে পড়তে হবে।
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড কী?
এটি একটি জনপ্রিয় অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট। এটি সাধারণত আমাদের ত্বকের কানেক্টিভ টিস্যুতে থাকে। এটার কারণে আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং ত্বক হয়ে ওঠে ইয়াংগার লুকিং। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে শরীরে এর পরিমাণ কমতে থাকে, যার ফলাফল হিসেবে ত্বকে রিংকেল দেখা দিতে শুরু করে অর্থাৎ এজিং সাইনস চলে আসে। এজিং এর আলোচনা যখন আসে তখন কোলাজেনের নামটা খুব শোনা যায়। কারণ কোলাজেনের মূলেই আছে এই হায়ালুরোনিক অ্যাসিড। এই উপাদানটি কোলাজেন বুস্ট আপ করতে হেল্প করে বলে স্কিন হয়ে ওঠে হেলদি। এছাড়া এর আরও অনেক বেনিফিট রয়েছে। আজ আমরা জনপ্রিয় এই অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টের বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানবো।
স্কিনে কীভাবে কাজ করে?
প্রথমেই বলে নেই এই উপাদানটি আমাদের স্কিনে ঠিক কীভাবে কাজ করে। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড তার নিজের ওজনের চেয়ে প্রায় ১০০০ গুণ বেশি পরিমাণে পানি ধরে রাখতে পারে। যার মানে হচ্ছে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড একটি অসাধারণ হিউমিকট্যান্ট হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ স্কিনের উপরিভাগে পানির কণাকে ধরে রেখে স্কিনকে হাইড্রেটেড ও ইয়ুথফুল দেখায়।
আমরা যখনই খুব ওয়েল ময়েশ্চারাইজড স্কিনের কথা চিন্তা করি, তখনই বুঝি যে স্কিন নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয় উপাদান ধরে রেখেছে। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে স্কিনের এই ক্ষমতা কমতে শুরু করে এবং স্কিন থেকে পানি কমে যেতে থাকে। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এখানে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। স্কিন থেকে পানি বা জলীয় উপাদান শুকিয়ে যাওয়া রোধ করে বলে স্কিন অনেক হেলদি ও ইয়াংগার দেখায়।
স্কিনকেয়ার ট্রেন্ডে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এর বেনিফিটস
এবার আসি হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ত্বকের ঠিক কী কী উপকারে আসে সেই আলোচনায়।
১) হাইড্রেশন ধরে রাখে
স্কিনের হাইড্রেশন ধরে রাখার জন্য হায়ালুরোনিক অ্যাসিড খুবই কার্যকরী। ত্বকের প্রতিটি স্তরে যেয়ে সেলগুলোতে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে বলে স্কিন হয়ে ওঠে হেলদি। উপকারী এই ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত যে কোনো সিরাম, ক্রিম বা লোশন আপনি স্কিন কেয়ার রুটিনে রাখতে পারেন।
২) স্কিন করে তোলে সফট ও প্লাম্পি
আপনার যদি ন্যাচারালি ড্রাই স্কিন হয়ে থাকে তাহলে স্কিনকেয়ার রুটিনে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড রাখাটা মাস্ট। এটি আর্দ্রতা ধরে রেখে স্কিন করে তোলে প্লাম্পি ও সফট।
৩) রিংকেলস ও ফাইন লাইনসের ভিজিবিলিটি কমায়
স্কিনকেয়ারে ব্যবহার করা এই অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টটি স্কিনের সেল রিনিউয়ালে সাহায্য করে। নানা কারণে আমাদের স্কিনে প্রি ম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিতে পারে। যারা রিংকেলস ও ফাইন লাইনসের প্রবলেম থেকে দূরে থাকতে চান তারা অবশ্যই এই ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত প্রোডাক্ট চুজ করবেন। আর যাদের বয়স ত্রিশ ছুঁই ছুঁই তাদের জন্য এটি মাস্ট হ্যাভ। তবে এজিং সাইনস আগেই প্রিভেন্ট করার জন্য বয়ঃসন্ধিকাল থেকে এই উপাদানটি আপনি স্কিনকেয়ার রুটিনে ইনক্লুড করতে পারেন।
৪) সান ড্যামেজ থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়
এই উপাদানটি যে ত্বককে শুধু প্রয়োজনীয় হাইড্রেশন দেয় তাই নয়, এতে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপার্টিজ যা স্কিনকে সান ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। সূর্যরশ্মি থেকে আমাদের স্কিনে যে ফ্রি রেডিক্যালস তৈরি হয় সেগুলোকেও প্রিভেন্ট করতে হেল্প করে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড।
৫) ইরিটেশন কমায়
এই অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টে আছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। স্কিনে যদি কোনো র্যাশ, একনে বা ইরিটেশন হয় সেক্ষেত্রে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড স্কিন সেই এফেক্টড এরিয়াতে বেশি করে ব্লাড ভেসেল তৈরির সিগনাল দেয়, এতে ঐ এরিয়া দ্রুত সেরে যায়।
৬) কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়
বয়সের সাথে সাথে আমাদের স্কিনের কোলাজেন ব্রেকডাউনের হার বেড়ে যায়। যার ফলে দেখা দেয় রিংকেলস ও ফাইন লাইনস। অ্যান্টি-এজিং প্রোডাক্টগুলোর মূল উপাদান হচ্ছে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, যা মূলত আমাদের স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়াতে সাহায্য করে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বিভিন্ন ফর্মে থাকে। তবে সবচেয়ে কমন ফর্ম হচ্ছে সিরাম বা ক্রিম হিসেবে। আবার এসেন্স বা টোনারের উপাদান হিসেবেও থাকতে পারে। হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের মলিকিউলার ওয়েট এর উপরেও কিন্তু এর ত্বকের ভেতরে ঢুকতে পারার ক্ষমতা অনেকটাই নির্ভর করে। মলিকিউলার ওয়েট যত কম সেটা ত্বকের তত বেশি গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে সেটা মাইক্রো বা ন্যানো মলিকিউলার ওয়েট এর হায়ালুরোনিক অ্যাসিড কিনা।
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ত্বক হালকা ভেজা থাকা অবস্থায় টোনার বা এসেন্স হিসেবে ব্যবহার করা। ব্যবহারের পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে সেটাকে সিল করে দিতে হবে।
কোনো সাইড ইফেক্ট আছে কি?
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ব্যবহারের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সাইড ইফেক্ট এর কথা শোনা যায় না। কিন্তু এটি যেহেতু ত্বকের খুব গভীরে প্রবেশ করতে পারে তাই অপরিষ্কার ত্বকে ব্যবহার করলে এর সাথে বাইরের ব্যাকটেরিয়াও ত্বকে প্রবেশ করতে পারে। তাই এটি ব্যবহারের আগে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেয়া জরুরি। আর পিম্পল, অন্য কোনো প্রদাহ বা কাটা-ছেঁড়া যদি থাকে সেক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না।
সাইড ইফেক্ট নেই বলে টিনেজাররাও এই ইনগ্রেডিয়েন্ট যুক্ত ক্লেনজার বা ময়েশ্চারাইজার ইউজ করতে পারেন। পোরস ক্লগ করে না বা ব্রেকআউটস হয় না বলে একনে প্রন স্কিন হলেও এটি ইউজ করা যাবে। ২০ বছর বয়সের পরে HA যুক্ত সিরাম স্কিন কেয়ার রুটিনে অ্যাড করতে পারেন। যদি স্কিন বেশি ড্রাই হয় তাহলে সকালে ও রাতে দুইবার সিরাম অ্যাপ্লাই করা যায়। যদি কোনো কারণে ইরিটেশন হয়, তাহলে ইমিডিয়েট অ্যাপ্লাই করা বন্ধ করে দিতে হবে। সব ধরনের ত্বকেই এটি ব্যবহার করা যাবে।
ত্বকের জন্য নানা উপকারের কারণেই স্কিনকেয়ার ট্রেন্ডে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এখন এত পপুলার। স্কিন হেলদি ও ইয়ুথফুল রাখার জন্য নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেয়া জরুরি। সেই সাথে কনসার্ন বুঝে সিলেক্ট করতে হবে প্রোডাক্ট। আর্দ্রতা হারিয়ে আপনার ত্বক যদি দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে যেতে থাকে তাহলে স্কিন কেয়ার রুটিনে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড যুক্ত প্রোডাক্ট করে নিন। অথেনটিক স্কিন ও হেয়ার কেয়ার এবং মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ, Shopify.com