নারীর ব্যক্তিত্ব আর আভিজাত্যের প্রায় অনেকটাই নির্ভর করে মেকআপকে কেন্দ্র করে। মেকআপের মাধ্যমে আপনার রুচিশীলতা এবং মনমানসিকতা সম্পর্কে স্বচ্ছ একটা ধারণা নিতে পারেন যে কেউ। এ কারণেই কেবল মেকআপের ব্যবহারই না, এর গুণাগুণ নিয়েও সচেতন থাকা দরকার। দীর্ঘদিন ধরে একই মেকআপ ব্যবহার করলে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। সেইসঙ্গে নষ্ট হতে পারে আপনার ন্যাচারাল আউটলুক। কিন্তু ঠিক কখন আর কেন বদলানো দরকার ব্যবহার করতে থাকা মেকআপ প্রোডাক্ট? চলুন জেনে নেই যে ৬টি কারণে পুরনো মেকআপ বদলে ফেলা উচিত।
পুরনো মেকআপ বদলে ফেলা কেন দরকার?
মেকআপ নিয়মিত ব্যবহার করতে করতে সেটা পুরনো হবেই। কিন্তু মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বা ঠিকমতো সংরক্ষণ না করলে সেটা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। পুরনো মেকআপ কেন বদলে ফেলবেন তার জন্য রয়েছে আরও কিছু কারণ। চলুন জেনে নেই সেগুলো-
১) প্রোডাক্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হলে
মেকআপ প্রোডাক্টের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না দেখে যদি ভাবেন যত দিন ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারবেন, তবে কিন্তু ভুল ভাবছেন। স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য সব পণ্যের মতো মেকআপও শুধু একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এরপর ধীরে ধীরে তা কার্যকারিতা হারায়, স্কিনের ক্ষতি করে। যেমন- লিকুইড ফাউন্ডেশনের মেয়াদ সাধারণত ১২ মাস পর্যন্ত থাকে। কিন্তু মাশকারা বা আইলাইনার জাতীয় প্রসাধনী মাত্র তিন মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
ঠোঁটে ব্যবহারের লিপস্টিকগুলোর সাধারণত ২ বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকে। তবে ব্যবহারের মাত্রার উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঠিকমতো সংরক্ষণ করলে কম্প্যাক্ট পাউডারটি দুই বছরের বেশি সময় ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, এগুলোরও কর্মক্ষমতাও সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকে।
২) প্রসাধনীর কার্যকারিতা কমে গেলে
মনে রাখবেন, আপনার মেকআপ পুরোনো হওয়ার সাথে সাথে প্রসাধনীর উপাদানের মধ্যে থাকা রাসায়নিক পদার্থগুলোও ভাঙতে থাকে। এমনকি প্রসাধনীর মধ্যে থাকা প্রিজারভেটিভও সময়ের সাথে ভাঙতে শুরু করে। যার কারণে প্রোডাক্টে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, আপনি যখন বেশি পুরোনো ফাউন্ডেশন ব্যবহার করছেন তখন আপনার স্কিনে ফাউন্ডেশনটি ভালোভাবে বসছে না। এটি মূলত ফাউন্ডেশনের রাসায়নিক পদার্থ অথবা প্রিজারভেটিভ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণেই হয়ে থাকে।
৩) স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়
আমরা অনেকেই ‘অব্যবহৃত’ আর ‘ফ্রেশ’ শব্দ দুটিকে এক করে ফেলি। বিশেষজ্ঞদের মতে, একেবারেই মুখ না খোলা প্রোডাক্টের কেমিক্যালগুলো ধীরে ধীরে ভাঙলেও একবার মুখ খোলার পরই সাধারণত কেমিক্যালগুলো দ্রুত ভাঙতে শুরু করে। এমনকি এদের প্রিজারভেটিভগুলো কখনো কখনো নির্ধারিত সময়ের আগেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই আপনি যদি আপনার ফাউন্ডেশনটির মুখ না খুলেই কয়েক বছর ধরে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে যত্ন করে রেখে দিয়ে থাকেন, তবে এখনই সেটা ফেলে দেওয়া উচিত।
অন্যদিকে মাশকারা, ক্রিম, জেল এবং পাউডারের মতো প্রসাধনী দীর্ঘদিন ব্যবহার করা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কতদিন ধরে এসব সামগ্রী ব্যবহার করছেন তা খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ঠিক যেই মুহূর্তে এসব প্রসাধনী বাতাসের সংস্পর্শে আসে তখন থেকেই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৪) ত্বক ও চোখের ক্ষতি হতে পারে
আপনি যতবার পুরনো লিকুইড ফাউন্ডেশনে হাত দিচ্ছেন ততবারই কৌটায় বাতাস ঢুকছে আর সেই সাথে ব্যাকটেরিয়াও জন্মাচ্ছে। এখান থেকে আপনার ত্বকে ক্ষতির ঝুঁকিও বাড়ছে। এছাড়াও পুরনো আইলাইনার চোখে ব্যবহারের ফলে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এমনকি চোখ ফুলে যাওয়া কিংবা লাল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আর যদি মেয়াদোত্তীর্ণ পাউডার ব্যবহার করে থাকেন তবে ত্বকে জ্বালাপোড়া আর ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
ফাউন্ডেশন আর মাশকারা, এই দুই জিনিস যত তাড়াতাড়ি বদলে ফেলবেন তত ভালো। কারণ এই দুটি প্রোডাক্টেরই মুখ খোলার সাথে সাথে বাতাসের সাথে ব্যাকটেরিয়াও কৌটায় প্রবেশ করে। এরপর যতবারই মুখ খোলা হয় ততবারই বাতাস আর ব্যাকটেরিয়া ভেতরে ঢুকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
এমনকি স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে পুরনো মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও। এজেন্সিটির বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘তিন মাসের মধ্যেই আপনার মাশকারা বদলে ফেলা উচিত। কারণ এটি খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলে চোখে ক্ষত সৃষ্টির ঝুঁকি থাকে।’ এছাড়াও সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন সংস্থাটিও বলছে, ‘যখনই দেখবেন যে মাশকারা ব্যবহারের পর আপনার চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে কিংবা জ্বালাপোড়া করছে তখনই আপনার মাশকারা বদলে ফেলুন।’
কীভাবে পুরনো মেকআপ পরিষ্কার করা যায়?
অনেক টাকা খরচ করে মেকআপের প্রোডাক্ট কিনে পুরোপুরি ব্যবহারের আগেই ফেলে দিতে সবারই কমবেশি খারাপ লাগে। কিন্তু আপনি কি জানেন, কিছু ক্ষেত্রে প্রসাধনী স্যানিটাইজ করে আবার ব্যবহারযোগ্য করে তোলা সম্ভব? আপনি যে পাউডার জাতীয় প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করছেন সেগুলো ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করা যায়। এর জন্য ৭০% রাবিং অ্যালকোহল আইশ্যাডো কিংবা অন্যান্য পাউডার জাতীয় মেকআপের উপর স্প্রে করে দিলেই হবে। একইভাবে আপনার মেকআপ ব্রাশগুলোও স্যানিটাইজ করে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি ব্রাশ ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। এর খাঁজকাটা অংশ দিয়ে ব্রাশের ব্রেসেলসগুলো খুব ভালোভাবে ক্লিন হয়।
মেকআপ প্রোডাক্ট সংরক্ষণ করার উপায়
হাতের কাছে সহজেই খুঁজে পেতে অনেকেই বাথরুমে প্রসাধনী সামগ্রী রাখেন। কিন্তু আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে প্রসাধনী ব্যবহার করতে চান তবে এই অভ্যাসটি আপনার ত্যাগ করতে হবে। কেননা বাথরুমের স্যাঁতস্যাঁতে বাষ্প মেকআপ প্রোডাক্টে আলগা স্তর তৈরি করে। তবে আপনি যদি প্রোডাক্টগুলো বাথরুমে রাখতেই পছন্দ করেন তবে ছোট কৌটার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন যেন বেশিদিন সংরক্ষণ করতে না হয়।
সবশেষে, আপনি কখন বুঝবেন আপনার মেকআপ ব্যাগের প্রসাধনীগুলো বদলে ফেলতে হবে? যখনই প্রোডাক্ট থেকে উটকো গন্ধ বের হবে কিংবা লিকুইড জাতীয় সামগ্রীর কালার বদলে যাবে অথবা মাশকারার ঘনত্ব বেড়ে যাবে তখনই সেগুলো ফেলে দেওয়া উচিত। এই তো জেনে নিলেন, কেন আপনার পুরনো মেকআপগুলো সময়মতো বদলে ফেলা উচিত সে সম্পর্কে। তাহলে এখনও যদি আপনার কাছে পুরনো আর মেয়াদোত্তীর্ণ প্রোডাক্ট থাকে, সেগুলো ব্যবহার করে ত্বকের ক্ষতি করার আগেই বদলে ফেলুন। অথেনটিক স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্টস এর জন্য শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা তাদের চারটি ফিজিক্যাল স্টোর- সীমান্ত সম্ভার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর থেকেও দেখে শুনে কিনে নিতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক