শীতকাল চলছে, দেখতে দেখতে সময়টা চলেও যাবে। বেলা তো আর থেমে থাকার জিনিস নয়। তাই হিমের ভয়ে গুটিয়ে না থেকে কয়টা দিন যদি শীতকে উপভোগ করে নিতে চান, সুযোগ করে নিন এখনই। শীতকালটা বাংলাদেশে খুব বিশেষ, অন্য ঋতুদের চেয়ে বেশ আলাদা আমেজ নিয়ে আসে এই শীত। উৎসবের ধুম তো থাকেই, সাথে থাকে নিজেদের মতো করে উপলক্ষ পালন করার সুযোগ। কেমন হতে পারে সেসব উপলক্ষ? আজকে শীতের সেসব টুকিটাকি উপলক্ষ নিয়েই কথা হবে।
সত্যি কথা বলতে, গ্রামের শীত না দেখলে শীতের পুরো মজা পাওয়া অসম্ভব! এই শহরে এসে শীতও নিজের আসল রূপ হারিয়ে ফেলে। সেই নিরেট কুয়াশার চাদরে ভর করে সকাল আসা, মাঠেঘাটে ঝুপ করে নেমে পড়া সন্ধ্যা, ভোরের শিশিরসিক্ত ঘাস, আহা! সকাল সকাল চুলোর পাশে বসে গরম পিঠার ভোজ, শেষ বিকালের আলোয় পিঠ পেতে দিয়ে চায়ের আড্ডা, এইসব আনন্দযজ্ঞ কই পাবেন গ্রামাঞ্চল ছাড়া? তাই সম্ভব হলে শীত থাকতে থাকতে একবার ঘুরে আসুন গ্রাম থেকে। শীতকালের আদি ও অকৃত্রিম স্বাদ নিয়ে আসুন।
[picture]
খেজুরের রস, গুড়, শীতের অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ। কারো কারো কাছে এই দুই খাদ্যদ্রব্য হচ্ছে শীতকালের অবশ্য প্রয়োজনীয় দুই জিনিস। ভোর বেলা গাছ থেকে হাড়ি নামিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়, সেই কাঁচা রসটা অনেকের কাছেই অমৃতসম। ঐ রসকেই জ্বাল দিয়ে ঘন থেকে শক্ত করে তবে তৈরি হয় গুড়। গুড় ব্যবহার করা হয় ভাপা, পুলি, পাটিসাপটাসহ হরেক রকম পিঠায়। পিঠাপুলি ছাড়া শীত যে বড় পানসে!
পরিবারের সবাই মিলে জমজমাট একটা পিকনিক, দূরে কোথাও দিন কয়েকের ভ্রমণ, দাওয়াতপর্ব সবই যেন শীতের অপেক্ষায় থাকে। বিশেষ করে পিকনিক আর ভ্রমণ, অলিখিত নিয়মেই এগুলো শীতকালের অংশ। এই শীতে এখনো যদি না হয়ে থাকে এমন কোনো আয়োজন, তবে এখন হয়ে যাক? ধারেকাছে দিনব্যাপী পিকনিকটা তো অন্তত হতেই পারে! একটা দিন সবাই মিলে হল্লা করে কাটানোই যায়। আজকালকার জীবনে বন্ধুবান্ধব আর কাজের ভেতর ডুবে গিয়ে কখন যে পরিবার থেকে অনেকটা দূরে সরে যায় মানুষ, নিজেরাও বোঝে না। এই দিনটা অন্তত একটু আবার নিজেদের মানুষগুলোর সাথে বোঝাপড়া হতে পারে। সে বড় ভালো উপলক্ষ। এমন উপলক্ষ হারানো ঠিক নয় কিন্তু!
শেষ কবে দৌড়ঝাঁপ করেছেন? খেলার মাঠে দেখেছেন নিজেকে? মনে পড়ছে না তাই না? জানা কথা! এই ব্যস্ত জীবনে সময় কই খেলাধুলার! তাও আবার গরম, ধুলো ময়লা, এইসব মাথায় নিয়ে খেলা আর হয় না। শীতকাল কিন্তু আপনাকে খানিকটা হলেও সুযোগ দেয় খেলার সাধ মিটিয়ে নেয়ার। পাড়ার মাঠে, রাস্তায়, বাড়ির ছাদে একটা খেলা চলবেই শীত এলে। তা হচ্ছে ব্যাডমিন্টন। আহামরি কিছুই নয়, নিজের একটা ব্যাট থাকলেই কারো সাথে জুটি বেঁধে খেলতে নেমে পড়ুন। নেটের বদলে দাগ কেটেই নয় খেলা হবে। অন্তত ছুটির দিনের বিকাল বা রাতটা খেলাধুলা করে কাটাতেই পারেন। গরমের চিন্তাও নেই। আর রাতের বেলা লাইট জ্বালিয়ে ব্যাডমিন্টন ম্যাচ খেলার সে কী দারুণ আমেজ, তা না খেললে কেমন করে জানবেন?
হিম পড়বে, সবাই কাঁপতে কাঁপতে একাকার হবে আর আগুন জ্বলবে না, তাও কি হয়! কোনো এক তীব্র শীতের রাত বেছে নিন আগুন জ্বেলে আঁচ পোহাতে। সাথে চলতে পারে বার্বিকিউ। বছরের অন্যান্য সময় বার্বিকিউ হলেও শীতের রাতে আগুনের তাপে ভূরিভোজন করার মজা নিশ্চয় আলাদা হবে। একদিকে কুয়াশার জাল, আরেকদিকে অগ্নিশিখা, আড্ডা আর গান, এভাবেই তো লেখা হয় শীত উৎসবের গল্পগুলো। এবার শীতে তাহলে আপনার গল্পেরা কেমন হচ্ছে?
ছবি – ফটোগ্রাফারস ডট ক্যানেভেরা
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব