নারী বললেই সবার প্রথমে ভেসে উঠে মায়ের মুখখানি। মায়ের মায়া ভরা মুখ, ভালোবাসার হাসি আর আদরেই আমাদের সবার বেড়ে ওঠা। আমারও তাই। জ্ঞান বুদ্ধি হবার পরে বড় বোন, খেলার সাথীদের সাথে পরিচয়। এরপর স্কুল কলেজের বন্ধু, অফিসের সহকর্মী, সহধর্মিণী। এভাবেই দৈনন্দিন যাপিত জীবনের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে নারীর সাথে আমার পথচলা।
আমার মা গৃহিণী। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি কি যত্নের সাথেই না সংসারটা আগলে রেখেছে। গোছানো পরিপাটি ছোট্ট সংসার। বাসার কার কি লাগবে, বাজার থেকে কি আনতে হবে, বিকেলের নাস্তা কি হবে সব কিছুই মা সামলেছেন। এখনো সামলাচ্ছেন। মার কাছে কোন কিছু চাইতে হতো না, মা বুঝে যেতেন। মা আমাকে একটা কথা ছোটবেলায় বলতেন, সবাইকে সম্মান করবি, সে তোর ছোট হোক বা বড়, ছেলে হোক বা মেয়ে। এই কথাটা এখনো আমি মেনে চলি।
[picture]
মায়েরা সংগ্রামী হয়। অনেক কষ্টের আর আত্মত্যাগের হয় মায়েদের জীবন। সেই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দিন শুরু হয় তাঁদের, আর বিরতিহীন পরিশ্রমে শেষ হয় রাতের বেলায়। আমি যখন বাসায় ফিরে ক্লান্তিতে শুয়ে থাকি, মা তখন আমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসে। “কিছু খাবি, কিছু খাবি” বলতেই থাকে। যদি বলি “এটা খাবো”, তাহলে সে আবার খুশি মনে নাচতে নাচতে সেটা বানাতে যায়। তাঁর যেন কোন ক্লান্তিই নেই।
আমার বড় বোন আর কয়েকজন সহকর্মীর অবস্থা আরেকটু কঠিন। উনারা কর্মজীবী মা। আর আমাদের সমাজে তো নারী মাত্রই গৃহিণী। তা তিনি কর্মজীবী হোন বা না হোন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানানো থেকে শুরু করে বাচ্চার স্কুলে দেয়া অফিস সবই করতে হয় একে একে। নিজ নিজ পরিবার থেকে সবাই কম বেশি সহযোগিতা পান বটে তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সহযোগিতা তো দূরের কথা, রীতিমত সংগ্রাম করেই ঘর-সংসার-কর্মক্ষেত্র সামলাতে হয়। আমি অবাক হই উনাদের শক্তি দেখে! এতো শক্তি, এতো উদ্যম উনারা পান কোথা থেকে? দশভুজার কাজ মাত্র দুটি হাতেই কি করে সামলে চলেন সবকিছু? তা সে কর্মজীবী নারী হোন বা গৃহিণী।
আমার এক সহকর্মীর বাবা নিজে বাসায় থেকে তাঁর তিন মেয়েকে বড় করে তুলেছেন। উনি ব্যবসায়ী এবং উনার স্ত্রী চাকুরিজীবী। স্ত্রী কে সাপোর্ট দেবার জন্য চিরাচরিত চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে এসে সংসারের ভার নিজের কাধে তুলে নিয়েছেন। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে ঘর সামলানো সব কাজ তিনি ব্যবসার পাশাপাশি একা সামলেছেন। অফিস শেষে স্ত্রী এসে যোগ দিতেন তাঁর সাথে। এ এক অনন্য উধারহণ। বাবাকে দেখেছি মাকে সাধ্যমতন সাহায্য করতে। আমার মা আমাকে রান্না শিখিয়েছিলেন, ঘরের কাজ শিখিয়েছিলেন যেন আমিও আমার স্ত্রীকে সাহায্য করতে পারি।
আমাদের সমাজে পুরুষ আর নারীর বিভাজন খুবই প্রকট। নারীর সম্মান আর স্বাধীনতা এখনো অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্থ। নারী স্বাধীনতা মানে কিন্তু রাতে নাইট ক্লাবে যাওয়া বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছেলেদের সাথে সিগারেট খাওয়া নয়, নারী স্বাধীনতা মানে নিরাপদে যাতায়াত করার নিশ্চয়তা অথবা নিজ পেশা বা পছন্দের কাজটি করার সমর্থন পাওয়া। আমরা কি সব ক্ষেত্রে নারীদের প্রাপ্য সম্মানটা দেই? গৃহবন্দী নারীরা আজ ধীরে ধীরে ঘরের বাইরে এসে নিজের অবস্থান তৈরি করছে, আমাদের পুরুষদেরও তো উচিত তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। নিজ নিজ জায়গা থেকে, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী।
লিখেছেন- অতনু