“উফফ! কি গরম রে বাবা! এত গরমে বেশি বের হব নাহ!”-এ কথা কি আর কর্মজীবী নারীদের মুখে মানায়? তাকে যে এই গরমেও অনেক সকালে উঠে বাড়ির নাস্তা আর দিনের খাবার রেডি করতে সহ্য করতে হয় আগুনের আঁচ। তারপর তড়িঘড়ি করে স্নান সেরেই মুখে কোন রকমে নাস্তা পুরে দৌড়াতে হয় প্রতিদিনকার ৯টা-৫টা দীর্ঘ সময় ধরে অফিস করার জন্য। আরে ভাই, যত সহজে বললাম ব্যাপারটা ততো সহজ নয়। এমন গরমে কর্মজীবীর তৈলাক্ত ত্বক কিভাবেই বা ফ্রেশ থাকবে!
গরমে কর্মজীবীর তৈলাক্ত ত্বক যেভাবে যত্ন করবেন
সূর্যের প্রখর তেজ! গনগনে চারপাশের তাপমাত্রা। এর মাঝেই বেশিরভাগ সময়ই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বাস, রিক্সা বা সিএনজি-এর জন্য। কত জন আর পাঠাও/উবার-এ করে এত ভাড়া দিয়ে অফিস যেতে পারে প্রতিদিন বলেন! বেশিরভাগ ওই রিক্সা/বাসেরই অসহায় যাত্রী। প্রখর রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে, দরদর করে ঘাম ঝড়িয়ে তবেই সে পৌঁছায় অফিসে। প্রতিটা দিন এমন যুদ্ধে জয়ী হন ঠিকই।
কিন্তু বাসায় ফিরে আয়নায় নিজের মুখ আর দেখাতে পারেন না নিজেকেই। ছি! কী তেল চিটচিটে হয়ে থাকে সারাদিন। আর এমন তৈলাক্ত বলেই মুখে বেশি ধুলোবালি জমে। ফলাফলে নির্জীব ত্বক আর তার সাথে জোট বেঁধে ব্রণ-এর সমস্যাও বেড়ে যায়। উপায় কী তবে? উপায়তো অবশ্যই আছে। তবে দেখে নিন গরমে কর্মজীবীর তৈলাক্ত ত্বক কিভাবে যত্ন নেয়া যায়!
১) অফিসে যাবার আগে
জানি অফিস যাবার আগের সময়টা অনেক ব্যস্ততম একটি সময়। কিন্তু ত্বকের একটু যত্ন নিতে সময়তো দিতেই হবে, তাই না?অল্প একটু কষ্ট করতে হবে। একটি ফেইস প্যাক ব্যবহার করলেই হলো! এর জন্য যে যে উপকরণ লাগবে-
- গোলাপের পাপড়ির পেস্ট- ১টি গোলাপ
- গাজরের রস- ১/২ টেবিল চামচ
- তরমুজের রস- ১/২ টেবিল চামচ
- শসার রস- ১ টেবিল চামচ ও
- চালের গুঁড়া- ১ টেবিল চামচ
উপরের সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন! সারাদিন ত্বক ফ্রেশ রাখতে এই প্যাক-টি বেশ কার্যকর।
২) লাঞ্চ ব্রেক-এ
অনেক ধুলোবালি, রোদ, তাপ সহ্য করে ঘেমে-নেয়ে অফিসে এসেছেন। আর রাস্তাঘাটে যে ট্রাফিক জ্যাম থাকে, তাতে একটুখানি আগে এসে যে ফ্রেশ হবেন, তারতো কোন উপায় নেই। ডুবে যেতে হয় কাজের সমুদ্রে। সারা সকাল ব্যস্ত সময় পার করে দুপুরে কিছু সময় পান। হ্যাঁ, সেটা খুব অল্প সময়ই। লাঞ্চ করতে করতেই সময় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মাত্র ৫টা মিনিট সময় ফ্রেশ হবার জন্য রাখুন।
এই গরমে ব্যাগ-এ রোজ ওয়াটার (rose water) আর তুলো রাখুন। ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুয়ে মুছে তারপর রোজ ওয়াটার-এ তুলো ভিজিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। দেখবেন নিজেকে ফ্রেশ লাগার সাথে সাথে মনও ফ্রেশ লাগবে। আর অফিসের পরবর্তী সময়ের জন্য পাবেন কাজের উদ্যমতা।
৩) অফিস থেকে ফিরে
সারাদিনের শেষে বিকেলের দিকে এখন বাড়ি ফেরার সময়। সকালের রোদের তাপ নেই ঠিকই কিন্তু সারাদিনে সূর্যের বিকীর্ণ তাপ ভূ-গর্ভতো গিলছিল। এই বিকেলে সে তা উদগিরণ করে। মানে এই সময়টাতেও অনেক গরমই থাকে। আর সাথে বাড়তি যোগ হয় রাস্তার ধুলোবালি, ময়লা ও জীবাণুগুলো। বাড়ি ফেরার জন্য সকালের ন্যায় দিনের এই যুদ্ধ শেষে বাড়ির ভেতরে এক পা দিতেই যেন গা ছেড়ে দেয়। কী কাহিল যে লাগে তখন!
আরো বেশি খারাপ লাগে তেলতেলে মুখটা দেখে। তাই, ফ্যানের বাতাসে খানিকক্ষণ নিজেকে জুড়িয়ে নিন। আর আজ থেকে অফিস যাবার আগে, এক কাপ পানিতে ও ২ টুকরো পাতি লেবুর রস মিশেয়ে ফ্রিজে রেখে যান। অফিস থেকে ফিরে একটা পাতলা রুমাল ওই পানিতে ভিজিয়ে সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে রাখুন ১০ মিনিট। এতে শরীরের ক্লান্তি দূর হবার সাথে সাথে ত্বক হয়ে উঠবে সজীব ও প্রাণবন্ত।
গরমতো বাড়ছেই! তাই বলে কি ঘরে বসে থাকা যাবে? সেতো কখনোই সম্ভব না। এই গরমে সুস্থ থাকতেও চাই ফ্রেশ থাকা। আর প্রখর রোদের হাত থেকে বাঁচতে সাথে রাখুন রোদ চশমা, ছাতা ও জীবনের অপর নাম পানি! দরকার হলে এক বোতল পানিতে গ্লুকোজ আর লেবু মিশিয়ে ক্যারি করুন। সেই সাথে করুন একটু ত্বক-পরিচর্যা। হাসবে আপনার ত্বক, হাসবেন আপনিও!
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক