সৌন্দর্যচর্চায় বিভিন্ন ধরনের অ্যাসেনশিয়াল অয়েলের গুণাগুণের কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। নানা রকম ফ্লাওয়ার, ফ্রুটস, ট্রি ইত্যাদির নির্যাস থেকেই মূলত অ্যাসেনশিয়াল অয়েল তৈরি হয়। তেমনই একটি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল হচ্ছে ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। কি? নাম শুনে নতুন লাগছে? চিনতে পারছেন না? না চিনতে পারাটাই স্বাভাবিক! এই অ্যাসেনশিয়াল অয়েলের গুণের কিন্তু অভাব নেই। স্কিন ও হেয়ার কেয়ারেও দারুণ কার্যকরী। তাই আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো, ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল এর ৭টি অজানা উপকারিতা সম্পর্কে। তো চলুন জেনে নেই!
ইলাং ইলাং কী?
যেহেতু ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল সম্পর্কে লিখতেই বসেছি, সেহেতু প্রথমেই ইলাং ইলাং সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া ভালো। ইলাং ইলাং হলুদ বর্ণের এক ধরনের স্টার শেইপড ফুল। এই ফুলটি কানাঙ্গা গাছে হয়ে থাকে, যেটা মূলত উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়; যেমন – ইন্ডিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় কিছু অঞ্চল ইত্যাদিতে। এই ফুলের মনমাতানো সুঘ্রাণ আপনার মনকে দিবে প্রশান্তি। হাই এন্ড ব্র্যান্ডের কিছু পারফিউমেও এই ফুলটির নির্যাস ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সাবান, লোশন, ফুড ফ্লেভারেও এটি ব্যবহার করা হয়। আর এই ফুলের নির্যাস থেকেই ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল তৈরি করা হয়।
ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েলের ৭টি উপকারিতা
ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েলের যে কত গুণাগুণ রয়েছে তা জানলে সত্যিই অবাক হবেন। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই।
১. মুড বুস্টিং
এই অ্যাসেনশিয়াল অয়েল আমার মুড বুস্ট করতে বেশ কাজে দেয়। আপনি যদি ডিপ্রেশনে ভুগেন তবে আপনাকে রিলিফ দিতে সাহায্য করবে। এজন্য; এই অয়েল গোসলের পানিতে বা স্পা করার সময় কয়েক ফোঁটা নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। নিমিষেই আপনার মুড ভালো করতে বেশ হেল্প করবে। ট্রাই করে দেখুন!
২. উকুন দূর করতে
এই অ্যাসেনশিয়াল অয়েল চুলের উকুন এবং উকুনের ডিম দূর করতে বেশ কাজে দেয়। যাদের চুলে উকুনের উপদ্রব হয়, তারাই জানেন এই সমস্যা কতটা অসহ্যকর এবং যন্ত্রণাদায়ক। এজন্য-
- ৩ টেবিল চামচ কোকোনাট অয়েল, ৩ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, ৩-৪ ফোঁটা এই অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিক্স করে নিন।
- পুরো চুলে এবং চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন ৩০-৪০ মিনিট।
- এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। আশা করছি ভালো ফল পাবেন।
৩. ইনজুরি রিকোভারিতে
যে কোনো ইনজুরি যেমন- কাটাছেঁড়া, পুড়ে যাওয়া, ছিলে যাওয়া, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ইত্যাদিতে এই অয়েল জাদুর মত কাজ করে। কারণ এতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ দ্রুত ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ক্ষতস্থানকে দ্রুত শুকাতে করতে সাহায্য করে।
৪. পারফিউম হিসেবে
ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েলের স্মেল পারফিউমের মত লং লাস্টিং হয়। তাই এটি দিয়েই চাইলে পারফিউম বানিয়ে ফেলতে পারেন। এজন্যে,
- একটি স্প্রে বোতলে ৬০ এম.এল ডিস্টিলড ওয়াটার নিন।
- এর মধ্যে ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং ৩-৪ ফোঁটা ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল নিয়ে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে মিক্স করে নিন।
- এটিকেই পারফিউম হিসেবে ব্যবহার করুন। এছাড়াও চুলে অনেক সময় ব্যাড স্মেল হয়। তখন চুলের গোড়াতেও স্প্রে করে দিতে পারেন।
৫. ফেইস ও বডি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে
অয়েল-ব্যালেন্সড ও ময়েশ্চারাইজড স্কিন পেতে যেকোনো ফেইস ক্রিমের সাথে ১ ড্রপ ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিক্স করে ফেইসে অ্যাপ্লাই করুন। আপনি চাইলে নিজেও এই অ্যাসেনশিয়াল তেল দিয়ে ময়েশ্চারাইজিং লোশন বানিয়ে নিতে পারেন। এজন্য,
- একটি ব্লেন্ডারে ১/৪ কাপ বডি লোশন, ২ টেবিল চামচ রোজ ওয়াটার, ১ চা চামচ গ্লিসারিন নিয়ে ব্লেন্ড করুন, যতক্ষণ না মিশ্রণটি ক্রিমি হোয়াইট কালারে পরিণত হয়।
- এই মিশ্রণটি একটি গ্লাস জারে নিয়ে নিন। এবার এর মধ্যে ৩-৪ ফোঁটা যোগ করে মিশিয়ে নিন।
- ব্যস! আপনার ময়েশ্চারাইজার রেডি। এটি ঠান্ডা ও শুকনো স্থানে ৩ মাস সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারবেন।
৬. হেয়ার গ্রোথ প্রোমোট করতে
চুল পড়ার সমস্য আমরা সবাই কমবেশি ভুগি। এই অয়েল চুল পড়া বন্ধ করে, হেয়ার গ্রোথ প্রোমোট করতেও দারুণ কাজ করে। এজন্য,
- একটি পাত্রে হাফ কাপ কোকোনাট অয়েল নিয়ে এর মধ্যে ৩-৪ ফোঁটা ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল, ৩/৪ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েল, ৩-৪ ফোঁটা রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল যোগ করুন।
- এবার পুরো মিশ্রণটি একটি কাঁচের বোতলে ভরে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
- গোসলের ২ ঘন্টা আগে এই তেলটি চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। এরপর ১-২ ঘন্টা রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
৭. অ্যান্টি -এজিংয়ে
ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল অ্যান্টি-এজিংয়ে বেশ ভালো কাজ করে। এজন্য-
- যে কোনো ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে মিক্স করে নিন।
- ডেইলি স্কিনে ১-২ বার ম্যাসাজ করুন।
- এতে ব্রণ হবার প্রবণতাও কমবে।
আমার প্রিয় ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কোনটি?
আমি যে ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করি, সেটি হচ্ছে স্কিন ক্যাফে ১০০% ন্যাচারাল ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল।
এতে আছে-
- অ্যান্টি -অক্সিডেন্ট,
- অ্যান্টি -ফাংগাল,
- অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল,
- অ্যান্টি -ইনফ্ল্যামেটরি,
- অ্যান্টি -সেপটিক ও
- অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট প্রোপার্টিজ।
এই অ্যাসেনশিয়াল অয়েল চুল ও ত্বক উভয়ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতে পারেন। আর এটি একদম ১০০% ন্যাচারাল। সব থেকে দারুণ ব্যাপার হচ্ছে এটা সব ধরনের স্কিনে স্যুইটেবল।
কেন আমার ফেবারিট?
প্যাকেজিং সম্পর্কে যদি বলি, এটি একটি ১০ মিলিলিটারের কাঁচের বোতলে থাকে, সাথে একটি ড্রপার থাকে।
- ড্রপারের সাহায্যে অনায়াসে পরিমাণমতো অয়েল ড্রপ আকারে হাতের তালুতে নেয়া যায়।
- মনে প্রশান্তি দেয়ার মতো সুঘ্রাণ।
- প্যাকেজিং ও বোতল উভয়ের গায়ে স্টোরেজ কন্ডিশন ও সতর্কতা সম্পর্কে লেখা আছে।
- এছাড়াও খোলার পর কত মাস ব্যবহার করা যাবে, তা উল্লেখ করা থাকে।
স্টোরেজ কন্ডিশন
- শক্তভাবে বোতলের মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে।
- সূর্যের আলো ও তাপ থেকে দূরে রাখতে হবে।
- অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।
- খোলার পর ১২ মাস ব্যবহার করা যাবে।
সতর্কতা
- শুধুমাত্র বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করুন।
- বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখুন।
- সরাসরি চোখের সংস্পর্শে আনবেন না।
- ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নেয়া ভালো।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েলের স্মেল একটু স্ট্রং। তাই এটি খুব বেশি পরিমাণে ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। কয়েক ড্রপস যথেষ্ট প্রতিবার ব্যবহারের জন্য। যদি আপনি যেকোনো ক্যারিয়ার অয়েল; যেমন- কোকোনাট, আমন্ড, অলিভ অয়েল ইত্যাদির সাথে ব্যবহার করতে চান, তবে প্রতি চা চামচের জন্য এক ফোঁটা এই অ্যাসেনশিয়াল অয়েল নিবেন। গোসলের পানিতে ব্যবহারের জন্য কয়েক ফোঁটা অয়েল পানিতে ঢেলে নিলেই হবে।
ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল এর ৭টি উপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জেনে নিলেন। আশা করছি, আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য হেল্পফুল ছিল। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
ছবি- সাজগোজ