নিজেকে চিনে নিন প্রথমে। সব মানুষের শরীরের আকৃতি তো মোটেও এক রকম নয়। নানা ডিজাইনের নানা ফ্যাশনের পোশাকে মেয়েরা ভিন্ন ভাবে সাজতে পছন্দ করে। আর সৌন্দর্য বর্ধনে নিঃসন্দেহে পোশাকের ভূমিকা সবার আগে। আপনার শরীর কোন আকৃতির, সেই ‘বডিশেপ’ টা বুঝে নিয়ে, তবেই পোশাক পরবেন। পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের আগ্রহ বরাবরই বেশি। তাই সুন্দর পোশাকে নিজের সৌন্দর্য বাড়াতে মেয়েরা যথেষ্ট সচেতন সর্বদাই।
প্রত্যেকেরই নিজস্ব শারীরিক গঠন অনুযায়ী সঠিক পোশাক নির্বাচন করা উচিত এবং রঙ ও ধরন বুঝে পোশাক নির্বাচন করা উচিত। সঠিক আকৃতি ও নকশা মেনে পোশাক পরলে স্লিম মেয়েদের পাশাপাশি মোটা মেয়েদেরও যেকোনো পোশাকে চমৎকার লাগবে। কিন্তু মোটা বা তুলনামূলকভাবে গড়নে ভারী মেয়েরা আবার সব ধরনের পোশাক পরতে পারেন না। তারা হিনমন্যতায় ভোগেন এই ভেবে যে, কোন পোশাকেই হয়তো তাদের মানাবে না, বাজে দেখাবে। কিন্তু এ ধারনাটা একদমই ঠিক নয়। আপনাকে নিজ গড়ন অনুযায়ী পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ ব্যাপার মনে রাখতে হবে, আর তা হলো –
• আপনার উচ্চতা কম হলে সালোয়ার বা প্যান্ট খুব বেশি ঢোলা পরবেন না, তাতে আরও খাটো দেখাবে আবার খুব লম্বা, ঝোলা টাইপের কামিজ পরবেন না। এতে আপনাকে আরও মোটা লাগতে পারে। আবার খুব খাটো পোশাক পরলেও কিন্তু দৃষ্টিকটু লাগবে। উচ্চতা কম হলে বা শরীরের নিম্ন অংশ তুলনামূলক ছোট হলে পরার জন্য বেঁছে নিন লম্বায় মাঝারি সাইজের পোশাক।
• ছেলেরা এবং মেয়েরা উভয়েই লম্বালম্বি সরু স্ট্রাইপের পোশাক বেঁছে নিন। ওজন কম মনে হবে আবার লম্বাও দেখাবে বেশ। কামিজে কাজ থাকলে তা যেন লম্বালম্বি হয়। আড়াআড়ি নকশাযুক্ত পোশাক এড়িয়ে চলুন । নকশার কারণে পোশাক ভারী লাগে দেখতে, আর ভারী গড়নের শরীরে তা মানায়ও না।
• যাঁদের শরীরের নিচের অংশ উপরের তুলনায় বেশি ভারী, তাঁরা এমন পোশাক পরলে ভালো দেখায় যা ভারি অংশটি একেবারেই ঢেকে ফেলে। এক্ষেত্রে কামিজ বা পাঞ্জাবী পরুন একটু লম্বা ঝুলের এবং গাঢ় রঙের। সালোয়ারের ক্ষেত্রে ঢিলেঢালার পরিবর্তে মাঝারি রকমের চাপা সালোয়ার পরুন । সামনে-পেছনে অল্প কুঁচি দিতে পারেন তাহলে বেশি চাপাও হবেনা, আবার খুব ঢিলাও লাগবে না। নিচে চওড়া নকশার কাজ এড়িয়ে চলুন। একই রঙের কামিজ ও পায়জামা পরুন এতে আপনার মোটা গড়ন অনেকটাই ঢাকা পড়বে।
• বড় ঘেরের কামিজ এড়িয়ে চলুন। স্ট্রেইট অল্প ঘেরের কামিজ পরলে তত মোটা মনে হবে না। মোটা মানুষেরা আড়াআড়ি স্ট্রাইপ বা বড় প্রিন্টের পোশাক পরবেন না একেবারেই। অপরদিকে যারা বেশি চিকণ বা লম্বা, তাঁরা পরুন আড়াআড়ি স্ট্রাইপ বা বড় প্রিন্টের পোশাক। এতে আপনাকে তুলনামূলকভাবে মোটা দেখাবে।
• জিন্স পরতে চাইলে স্ট্রেইট কাটের, ন্যারো কাট একদম পরবেন না। টাইটস, লেংগিস বা জেংগিস পরতে পারেন কামিজের সাথে। স্লিভলেস না পরাই ভালো। ছোট হাতার কামিজের পরিবর্তে থ্রি কোয়ার্টার পরুন, মোটা কম লাগবে। এটা ফ্যাশনেবলও, দেখতে স্মার্ট লাগবে।
• শাড়ি অনেকেরই পছন্দের পোশাক। একটু মোটা মেয়েরা শাড়ি পরতে অস্বস্তি বোধ করেন। ভাবেন শাড়ি পরলে বোধহয় আরো মোটা লাগবে! পাতলা ধরনের কাপড়ের শাড়ি পরুন। যেমন সফট সিল্ক, ক্রেপ সিল্ক বা জর্জেট। অফিস বা অন্য কাজের জায়গায় অনায়াসে পরতে পারেন এসব শাড়ি। উত্সব বা পার্টিতে ভারী শাড়ি পরতে চাইলে তসর সিল্ক বা সিল্ক বেনারসি পরতে পারেন।
• মোটা হাতের মেয়েরা শাড়ি পরলে স্ট্রেইট হাতের ব্লাউজ পরুন। ছোট হাতার একরঙা ব্লাউজ না পরে ছোট ছোট প্রিন্টের বা চেকের ব্লাউজ পরুন। এতে হাত কম মোটা দেখাবে। কামিজ বা ব্লাউজের গলা পেছনে খুব বড় করে কাটা না পরাই ভালো। কলারওয়ালা পোশাকের ক্ষেত্রে সামনের গলা হতে পারে ভি, ইউ দিতে পারেন । পেছনে উঠানো গলা দিতে না চাইলে একটু লো কাট দিতে পারেন কিন্তু তা যেন বেশি না হয়, নাহলে দেখতে খারাপ লাগবে।
• থ্রি কোয়ার্টার রয়েছে হাল ফ্যাশনের হাতায়। তাই মোটা মেয়েরা নিশ্চিন্তে পরুন থ্রিকোয়ার্টার হাতার পোশাক, হতে পারে সেটা কামিজ, ফতুয়া বা টপস।
নিজেকে আরেকটু ‘স্টাইলিশ’ রূপে দেখতে চাইলে পরুন বেল বা ডিভাইডার হাতার পোশাক। ডিভাইডার হাতার সৌন্দর্য বাড়াতে এতে যোগ করতে পারেন ফিতা। খুব মোটা কাপড় অথবা ভারী কাজের কামিজ বা টপস না ব্যবহার করাই ভালো । চেষ্টা করবেন হালকা ডিজাইনের পাতলা সুতি কাপড় পরতে।
• শার্ট পরতে চাইলে একরঙা অথবা লম্বা বা কোনাকুনি স্ট্রাইপের শার্ট ভালো লাগবে। সাথে গাঢ় রঙের প্যান্ট পরবেন। সেই সাথে একেবারে পাতলা ফিনফিনে শার্ট বা টি শার্টও এড়িয়ে চলুন।
• ফুলহাতা পরতে চাইলে নেটের হাতা পরুন। চুড়িদার হাতার জামা পরলেও ওজন কম লাগবে, হাত-ও চিকন দেখাবে। স্কার্ফ ব্যবহার করতে চাইলে সেটা ভি অথবা ওয়াই ম্যাপে বাঁধুন । লং স্কার্ট পরতে চাইলে এক রঙা পরবেন সাথে মানানসই রঙের টপস। কনট্রাস্ট কম্বিনেশন এড়িয়ে চলুন।
বললাম তো শুধু মাত্র ভারী গড়নের মেয়েদের পোশাক নির্বাচনের কথা। এখন দোকান গুলোয় প্রত্যেকের-ই উপযুক্ত কাট আর ফিটিংসের পোশাক থাকে। তাই শুধু পোশাকটি ভালো দেখতে লাগছে বলে, বা মলের ছেলে বা মেয়েটি কেনানোর জন্য সব কিছুতেই মাথা নাড়ছে বলে, হুট করে অন্য কারও পোশাক কিনে বসবেন না । পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই বিশেষ ব্যাপার গুলো মাথায় রেখে শপিং করুন। দেখবেন কিছু দিনের মধ্যে নিজেরই ফিটিংস আর কাট সম্পর্কে একটা ধারনা হয়ে গিয়েছে।
লিখেছেনঃ বৈশাখী
মডেলঃ পিংকি পল চৌধুরী