অনিয়মিত মাসিক নিয়ে মেয়েদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই ৷ অনিয়মিত মাসিক এবং বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ পলিসিস্টিক ওভারি ৷ মেয়েদের হরমোনাল সমস্যার মধ্যে ৫-১০% এই পলিসিস্টিক ওভারি ৷ এই রোগটি যখন অনেকগুলো উপসর্গ নিয়ে দেখা দেয় তখন একে বলা হয় পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ৷ সংক্ষেপে PCOS ৷ চলুন জেনে নেওয়া যাক পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা
পলিসিস্টিক ওভারি কী?
নাম থেকে আমরা বুঝতে পারি এটা ওভারি বা ডিম্বাশয়ের রোগ৷ এই রোগে ওভারিতে সিস্ট তৈরি হয় ৷ তবে সবক্ষেত্রেই যে এমনটি হবে তা নয়৷ এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ক্লিনিক্যাল ডায়াগনসিস করে থাকেন৷
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের লক্ষণসমূহ
১. অনিয়মিত মাসিক।
২.কম বা অতিরিক্ত দীর্ঘ পিরিয়ড।
৩. মুখে, গলায় বুকে অতিরিক্ত লোম।
৪. বেশি ওজন।
৫.গলায় কালো ছোপ।
৬.চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
৭. অতি উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা।
এছাড়াও অতিরিক্ত ওজনের কারণে রোগী ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এবং রক্তে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরলজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসতে পারে ৷
কাদের হয়?
নারীদের রিপ্রোডাকটিভ এইজ বা প্রজননক্ষম বয়সে রোগটি হয় ৷ সাধারণত ১৫-৪৫ বছর বয়সে রোগটি বেশি হয় ৷
কেন হয়?
এই রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও, ধারণা করা হয় যে হরমনের ভারসাম্যহীনতা এবং বংশগতি অন্যতম কারণ৷ যেই পরিবারের কোনো সদস্যদের বিশেষ করে মা বা বোনের এই রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কিছুটা বেশি৷ মেয়েদের শরীরে অতিরিক্ত এন্ড্রজেন (পুরুষ হরমোন) তৈরি হওয়াকেও এই রোগের কারণ হিসেবে ধরা হয়৷
প্রয়োজনীয় টেস্ট
যেহেতু টেস্টগুলোর বাংলা নাম কখনই ব্যবহার করা হয় না, তাই এইক্ষেত্রেও সেই নিয়ম অনুসরণ করা হলো।
– thyroid function test
-fasting glucose test
-lipid level
-ultrasonogram
-serum FSH / LH
-serum testosteron level
রোগের চিকিৎসাসমূহ
১. সর্বপ্রথম নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস এবংপরিমিত ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে আনুন ৷ পরিমিত ওজন আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাবে এবংমাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করবে ৷
২. যারা এখনই গর্ভবতী হওয়া নিয়ে ভাবছেন না, বিশেষ করে যারা অবিবাহিত তাদের ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বেশ কার্যকরী৷ পিল সেবনে মাসিক নিয়মিত হয়৷ রক্তে পুরুষ হরমনের মাত্রা কমে , অতিরিক্ত লোম এবং ব্রণের সমস্যাও কমে ৷
৩. যারা সন্তান ধারণে আগ্রহী বা বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী ovulation inducing drug যেমনঃ clomiphene citrate , FSH প্রেসক্রাইব করে থাকেন ৷
৪. Metformin: রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় এবং hirsutism বা অতিরিক্ত লোমের সমস্যাও কমায় ৷ অনেক সময় metformin এবং clomiphene citrate একসাথে ব্যবহার করা হয় ৷
৫. Anti-androgen: পুরুষ হরমোন কমায় ৷ ফলে অতিরিক্ত লোমের সমস্যা কমায়৷ তবে যারা গর্ভধারণে আগ্রহী তাদের জন্য এই ওষুধ নয়৷
৬. Surgery: এইক্ষেত্রে চিকিৎসক lapaoscopy এর মাধ্যমে “ovarian driling” করে থাকেন ৷
গর্ভকালীন অতিরিক্ত সতর্কতা
PCOS এর রোগীর ক্ষেত্রে মিসক্যারিজ, মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তান প্রসবের মত জটিলতা দেখা দিতে পারে।
আপনি যদি পলিসিস্টিক ওভারির রোগী হন, তবে গর্ভধারণকালীন সময়ে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ৷ নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন এবং চেকআপ করাবেন ৷
এই রোগের কারণে কী কী জটিলতা দেখা দিতে পারে?
-উচ্চ-রক্তচাপ।
-রক্তে উচ্চ-মাত্রায় কোলেস্টেরল।
-ডায়াবেটিস।
-endometrial carcinoma: (এক রকম জরায়ু ক্যান্সার)।
– হার্ট এ্যাটাক।
-স্লিপ এপ্নিয়া: (ঘুমের ভিতর নিশ্বাস আটকে যাওয়া)।
-ব্রেস্ট ক্যান্সার: (স্তন ক্যান্সার)।
-অতি উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা।
যত দ্রুত আপনার রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা হবে, রোগের জটিলতার ঝুঁকি ততটাই কমবে ৷ তাই যদি এই রোগের উপসর্গগুলো আপনার সাথে মিলে যায় , তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন ৷ সুস্বাস্থ্য ও শুভকামনা রইলো সবার
প্রতি ৷
ছবিঃ কিডসহেলথ.অর্গ, সাজগোজ.কম