হিট স্ট্রোক | কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে কতটুকু জানেন?

হিট স্ট্রোক | কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে কতটুকু জানেন?

heat

হিট স্ট্রোক গরমের সময় বেশ কমন। আমাদের দেশে এপ্রিল থেকে জুন/জুলাই মাস পর্যন্ত এই রোগটি আকস্মিকভাবে ঘটার সম্ভাবনা থাকে। প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবন এখন ওষ্ঠাগত! যেহেতু হিট স্ট্রোক হুট করেই হতে পারে, তাই এর সম্পর্কে ধারণা থাকলে সহজেই সেই পরিস্থিতি সামলানো যায়। চলুন আজকে হিট স্ট্রোক-এর কারণ, লক্ষণ ও এর প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক!

 হিট স্ট্রোক-এর কারণ, লক্ষণ ও এর প্রাথমিক চিকিৎসা

হিট স্ট্রোক কী?

হিট স্ট্রোক (Heat stroke) বা সান স্ট্রোক (sun stroke) এক ধরনের অসুস্থতা, যা অত্যধিক গরমের কারণে হয়ে থাকে। এই অসুখে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ᱸ ফারেনহাইট-এর বেশি এবং সাথে শারীরিক মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ হিট স্ট্রোক-এ মারা যায়। অনেক সময় ধীরে ধীরে এটি ঘটে থাকে, যদিও হুট করে ঘটার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। আমাদের দেশেও এই রোগ এখন প্রায়ই দেখা দেয় কারণ প্রতিনিয়তই পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে।

Sale • Talcum Powder, Deodorants/Roll-Ons, Toiletries

    হিট স্ট্রোক হবার কারণ

    হিট স্ট্রোক কয়েকটি কারণে হতে পারে। তবে চলুন এবার কারণগুলো দেখে নেই-

    • পারিপার্শ্বিক উচ্চ তাপমাত্রা
    • শরীরে পানিশূন্যতা বা মিনারেলস (minerals)- এর অভাব
    • কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায়, যেমন- ডাই-ইউরেটিক্স (diuretics), বিটা ব্লকারস (beta blockers), অ্যালকোহল (alcohol)
    • হার্ট (heart)-এর বা স্কিন (skin)-এর অসুখে

    লক্ষণ বা উপসর্গ

    হিট স্ট্রোক-এ প্রাথমিক কিছু লক্ষণ বা  উপসর্গ থাকে। গরমে হিট স্ট্রোক-এর প্রাথমিক পর্যায়ে এটি ধরতে পারলে অনেক জটিল অবস্থা থেকে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। সাধারণত নিচের লক্ষণগুলো হিট স্ট্রোক-এ দেখা যায়-

    • শরীরের অত্যধিক তাপমাত্রা
    • মাথাব্যথা
    • দুর্বলতা
    • ঝিমুনি
    • বমি বমি ভাব
    • হার্টবিট বেড়ে যাওয়া

    হিট স্ট্রোক-এর লক্ষণসমূহ - shajgoj.com

    তবে রোগীর অবস্থা  ক্রমশ খারাপের দিকে গেলে আরো কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন-

    • চামড়ার রং লালচে হয়ে যাওয়া
    • মানসিক ভারসাম্যহীনতা
    • হাঁটতে অসুবিধা হওয়া
    • চোখের মণি বড় হওয়া
    • বমি হওয়া
    • ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া
    • খিঁচুনি
    • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

    প্রাথমিক চিকিৎসা

    প্রথম পরামর্শ, এই গরমে কড়া রোদ ও ভিড় এড়িয়ে চলুন। যেহেতু এটি একটি জরুরি অবস্থা, তাই এর চিকিৎসাও দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। এই রকম পরিস্থিতিতে প্রথমেই যা করা দরকার তা হলো, রোগীর শরীর ঠান্ডা করা এবং খোলা বা ফাঁকা স্থানে নিয়ে যাওয়া। ভারি পোশাক পরে থাকলে সেটা চেঞ্জ করে পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরিয়ে দিন। ঠান্ডা বাতাসের ব্যবস্থা করুন, প্রয়োজন মনে হলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিন।

    রোগীর সুস্থ হতে কয়েকদিন পর্যন্ত সময় লাগবে সেটা এর তীব্রতা বা ধরনের উপর নির্ভর করে। যদি সঠিক চিকিৎসা করা না হয় তাহলে হিট স্ট্রোক রোগীর মস্তিষ্ক (brain), পেশী (muscles), কিডনি (kidney) এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোকেও দীর্ঘমেয়াদী  ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা শুধুমাত্র শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য কিছু না করে বরং পানি বা লিকুইড (liquid) জাতীয় খাবার গ্রহণের উপর জোর দিতে বলেন।

    হিট স্ট্রোক

    প্রতিকার

    ১) হেলদি ও লিকুইড খাবার রাখুন ডায়েটে

    আমাদের মধ্যে যারা বাইরে রোদে কাজ করি বা এক ঘন্টার বেশি ব্যায়াম (exercise) করি তাদের হিট স্ট্রোক এড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে লিকুইড জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। বিশুদ্ধ পানির কোনো বিকল্প নেই। ডাবের পানি, ফ্রেশ জুস, ঠান্ডা শরবত এগুলোও পান করতে পারেন। ভাজাপোড়া, মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। লাইট ও হেলদি ফুড বেছে নিন যাতে হজমে সমস্যা না হয়।

    ২) ব্যায়াম ভোরবেলায় করুন

    তাপদাহ বিদ্যমান থাকলে ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ অবশ্যই সূর্যোদয়ের আগে বা খুব ভোরে করতে হবে।

    ৩) অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন

    গরমের দিনগুলোতে অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। কারণ, অ্যালকোহল বা সুগার ড্রিংকগুলো শরীরে ডিহাইড্রেশন (dehydration) বা পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে।

    অনেক সময় শরীরে লবণ বা মিনারেলস-এর ঘাটতি দেখা যায়। সেই সময়ের জন্য সবচেয়ে উপকারি হলো ওরস্যালাইন (orsaline)। রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হলে মুখে খাওয়া সম্ভব না হলে শিরার মাধ্যমে দেওয়া হয়। কিন্তু হাইপারটেনশন (hypertension) বা উচ্চ রক্তচাপ (high blood pressure) রোগীদের ক্ষেত্রে সবসময় এটা নিরাপদ নাও হতে পারে। কারণ, স্যালাইনের সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিন সাথে সাথেই।

    শিশু ও বয়স্কদের জন্য টিপস

    সব বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোক এক রকম হলেও, বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি আলাদা নজর রাখা জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে যেন তাদের শরীরে কোনভাবেই পানিশূন্যতা দেখা না দেয়। যেহেতু ১-২ বছর বয়সী শিশুরা নিজেদের শারীরিক অসুবিধাগুলোর কথা বলতে পারে না। তাই গরমের দিনে তাদের বার বার পানি বা শরবত দিতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়তে দেয়া যাবে না। তাদের খোলামেলা জায়গায় বা প্রচুর বাতাস আছে এরকম জায়গায় রাখতে হবে।

    শিশুদের মতো বয়স্কদের জন্যও খোলামেলা স্থান বাছাই করা উচিত। যাদের ডায়াবেটিস (diabetes)– এর সমস্যা রয়েছে তাদের শরবত বা মিষ্টি জুস না দিয়ে পানি, ডাবের পানি এগুলো দিতে হবে।

    এই গরমে আমি বা আপনি যেকোনো সময়ে হিট স্ট্রোক-এ আক্রান্ত হতে পারি। তৎক্ষণাৎ প্রতিরোধের বা মোকাবেলার উপায়গুলো জানা থাকলে আমরা খুব সহজেই এই পরিস্থিতি থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারি। সবাই সুস্থ থাকুন, এই কামনা রইলো।

    ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক

    33 I like it
    6 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort