পাত্র বা পাত্রী দেখতে গেলে প্রথমেই যে কথাগুলো আসে তার মাঝে একটি হলো হাইট। আবার লম্বা চওড়া স্বাস্থ্যের অধীকারীদেরই সুন্দর বা সুন্দরীর তকমা দেয়া হয়। তাই অনেকেই লম্বা হওয়ার প্রচুর চেষ্টায় থাকে। এর জন্য যেকোন কাজই তারা করতে চান। অথচ ভুল কাজই করে থাকেন অনেকে। তাই আজ হাইট বা লম্বা নিয়ে কিছু তথ্য শেয়ার করতে চাই। সাধারণত একজন মানুষ কতটুকু লম্বা হবে তা নির্ধারণ করে আমাদের শরীরে থাকা জিন। অর্থাৎ জেনেটিক ফ্যাক্টর প্রধান ভূমিকা বা শতকরা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভুমিকা পালন করে থাকে। আমাদের গ্রোথ এর জন্য পিটুইটারী (pituitary) নামক গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত গ্রোথ হরমোন প্রধান ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কিছু ফ্যাক্টর আছে যা হাইটকে প্রভাবিত করে। যেমন- পরিবেশগত, খাদ্যাভাস ইত্যাদি প্রভাব।
সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৬ আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৮ বয়সের পর লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে বলা হয়ে থাকে ২০ বছরের পর আর লম্বা হয় না। কারো কারো মতে ২৫ এর পর গ্রোথ আর হয় না। বন্ধ হয়ে যায়। সত্যি বলতে কি লম্বা হওয়াটা যেহেতু বংশগত বা জেনেটিক ফ্যাক্টর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং বয়স যদি ২৫ এর বেশি হয়ে থাকে তবে বিশেষ কিছু করার থাকে না। তবে যদি বয়স ২০ এর নিচে হয় , বিশেষ করে যারা শিশু বা বয়ঃসন্ধিকাল চলছে যাদের, তাদের জন্য কিছু ডায়েট বা ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া সম্ভব। তাই যাদের বংশে খাটো হওয়ার প্রবণতা আছে তাদের বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে যত্ন নেয়া উচিত। আজকে আমরা আপনাদের জানাবো লম্বা হতে কি ধরনের ব্যায়াম করবেন কি খাবেন তা নিয়ে কিছু টিপস।
লম্বা হতে কিছু কার্যকরী ব্যায়াম ও টিপস
(১) সুষম খাদ্য গ্রহণ করা
একজন লোক অনেক খাটো দেখায় যদি তার শরীর ফাঁপা থাকে। তাই ফিট থাকতে হয় সঠিক খাবার খেয়ে।
- প্রচুর পরিমাণে লীন প্রোটিন খেতে হবে। যেমন সাদা ফার্মের মুরগীর মাংস, মাছ ও দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর লীন প্রোটিন থাকে। যা পেশী গঠনে সাহায্য করে ও হাড্ডির ক্ষত পূরণ করে।
- কার্বোহাইড্রেট খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। যেমন – ভাত, আলু, কেক ইত্যাদি। অতিরিক্ত মিষ্টি ও সোডা থেকে দূরে থাকুন।
- প্রচুর ক্যালসিয়াম খান যা সবুজ শাকসবজীতে পাওয়া যায়। দুধ, দই -এ প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
- যথেষ্ট পরিমাণে জিংক থেতে হবে। জিংক পাওয়া যায় কুমড়া, ওয়েস্টার ও গম, ও চিনাবাদামে।
- ভিটামিন ডি খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। এটি পেশী ও হাড্ডি গঠনে ভূমিকা পালন করে। এর অভাবে শিশুদের গ্রোথ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং তরুণীদের ওজন বাড়ে। মাছে, মাশরুমে ও সূর্যের আলোতে পাওয়া যায় ভিটামিন ডি।
(২) ব্যায়াম
তরুণরা বিশেষ করে বয়ঃসন্ধি কালে হাইট বাড়ানোর ব্যায়াম করে। লাফান, যেমন – দড়ি লাফান, সাঁতার কাটুন, সাইকেল চালান, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট। জিমে জয়েন করুন পারলে। খেলাধুলা করুন।
(৩) ঘুম
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান প্রতিদিন। ঘুমের সময় শরীর বাড়ে। তাই পর্যাপ্ত ঘুমালে শরীর লম্বা হওয়ার মতো সময় পায়। কমপক্ষে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমান যদি আপনার বয়স ২০ এর কম হয়। শরীরের হরমোন গভীর ঘুম এর সময় উত্পন্ন হয়। পিটুইটারী গ্লান্ড থেকে গ্রোথ হরমোন বের হতে সাহায্য করে।
গ্রোথ যেসব কারণে প্রভাবিত হয় তা পরিহার করার চেষ্টাকরুন। আপনার ন্যাচারাল হাইট যাতে পরিবেশ গত কারণে না কমে তার চেষ্টা করবেন। এলকোহল বা স্মোকিং করা যাবেনা। এগুলো কম বয়সে খাওয়া উচিত্ নয়। যারা অপুষ্টিতে ভোগেন তাদের স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি খাটো দেখায়। যারা একটু খাটো তারা সোজা হয়ে থাকার চেষ্টা করবেন সব সময়। কুঁজো হয়ে হাঁটবেন না। ঘাড়টা একটু পেছনে বাঁকিয়ে সোজা হয়ে হাঁটার অভ্যেস করুন। এতে কিছুটা লম্বা লাগবে। একটু টাইট কাপড় পরার চেষ্টা করবেন। নিজেকে চিকন দেখাতে পারলে কিছুটা লম্বা লাগবে। ডার্ক রঙের ড্রেস যেমন – কালো, নীল, সবুজ পরার চেষ্টা করবেন। মেয়েরা বাইরে গেলে হাইহিল পরবেন।
এছাড়া ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, যদি দেখেন যে আপনার সন্তানের সঠিক গ্রোথ হচ্ছেনা। ডাক্তার রা অনেক রকম টিট্টমেন্ট দিয়ে থাকেন। গ্রোথ হরমোন থেরাপি ছোট বেলায় নিলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। তাই আপনার শিশুর সঠিক গ্রোথ হচ্ছে কিনা তা জানতে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ রাখুন।
কিছু ব্যায়াম
ছোট বেলা থেকে এ ব্যায়াম গুলো নিয়মিত করা ভালো। তবে দেখা যায় আমরা অনেকে ব্যায়াম করি টানা ১সপ্তাহ, অতিরিক্ত করে অল্প সময়ে ফল পেতে চাই। এটা ঠিক না। অল্প অল্প করে প্রতি দিন ব্যায়াম করা উচিত্। আর যেকোন ব্যায়াম করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত্। আর ব্যায়াম করার আগে শরীর গরম করে নেয়া উচিত। নিচে কয়েকটি সহজ ব্যায়ামের উপায় দেয়া হলো।
(১) মেঝেতে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে শরীরের উপরের অংশটি আস্তে আস্তে তুলুন। মেরুদন্ড বাঁকা করে মাথাটা পেছনের দিকে যতটা পারা যায় বাঁকান।
(২) হাঁটু ভাঁজ করে, হাতের তালু ও হাঁটুতে ভর দিয়ে বিড়ালের মত হোন। মাথা উপরের দিকে বাঁকিয়ে পিঠ নিচের দিকে বাঁকিয়ে নিন। এরপর মাথা নিচু করে মেরুদন্ড বা পিঠ উপরের দিকে বাঁকা করুন। ৮ সেকেন্ড পর এভাবে কয়েকবার করুন।
(৩) মেঝেতে বসুন। দু পা দুদিকে ছড়িয়ে দিন। এরপর ডান হাঁটু তে নাক লাগানোর চেষ্টা করুন, হাঁটু ভাঁজ না করে যতটা পারা যায়। ৮ সেকেন্ড থাকুন এভাবে। এরপর বা পায়ে একই ভাবে করুন।
(৪) উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর হাতের তালু ও পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে শরীরটি উপর দিকে বাঁকিয়ে উঁচু করে তুলে ধরুন মাথা নিচে রেখে। এভাবে ৮ সেকেন্ড থাকুন।
(৫) মেঝেতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাটু ভাঁজ করে পায়ের গোড়ালী নিতম্বের কাছে নিয়ে আসুন। এরপর গোড়ালী হাত দিয়ে ধরুন। এরপর কোমড় সহ নিতম্ব উপরের দিকে উঠান। মাথা নিচে থাকবে। এভাবে ১০ সেকেন্ড থাকুন।
কনফিডেন্ট থাকুন। মনে রাখবেন মানুষের শারীরিক গঠনটাই মূখ্য নয়। মানুষ হিসেবে আপনি কেমন তাই মূখ্য। কোন বিষয় নিয়েই ছোট হবেন না। নিজেকে মূল্য দিন। ভালোবাসতে শিখুন নিজেকে।
ছবিঃ সাটারস্টক