যুগ বদলাচ্ছে, সেই সাথে বদলাচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রাও। জীবনের ব্যস্ততা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। আর এই ব্যস্ত সময়ে বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার সময় কোথায়? আর এজন্যই এখন সব পড়াই উঠে এসেছে ই-বুকের পাতায়। কিন্তু তাই বলে কি পৃষ্ঠা উল্টে বই পড়ার আবেদন হারিয়ে গিয়েছে? মোটেও না! বরং যারা হাতে নিয়ে পড়তে পছন্দ করেন তাদের কাছে বই এখনও ভালোবাসার জায়গা। নিজের ঘরে শেলফ জুড়ে পছন্দের বই সংগ্রহে রাখতে ভালোবাসেন এমন অনেকেই আছেন। তবে বইয়ের সংগ্রহ যত বাড়তে থাকে তত যেন গুছিয়ে রাখা কঠিন মনে হয়। সেই সাথে বইয়ে ধুলো জমে, ছিঁড়ে যায়, পোকা কেটে ফেলে এমন অনেক সমস্যা হয়। বই পড়তে ভালোবাসেন? চলুন তাহলে জেনে নেই পছন্দের বইগুলো যত্নে রাখার ১০টি উপায় সম্পর্কে।
বই পড়তে ভালোবাসেন কিন্তু গুছিয়ে রাখতে পারছেন না?
বইপড়ুয়ারা বই সংগ্রহ করতে ভালোবাসেন। কিন্তু গুছিয়ে না রাখার কারণে বেশিরভাগ সময়ই বই এলোমেলো থাকে, ধুলো জমে বা নষ্ট হয়ে যায়। কীভাবে যত্ন নিলে বই ভালো থাকবে চলুন জেনে নেই তার ১০টি উপায়-
১) শেলফে গুছিয়ে রাখুন বই
বইপড়ুয়াদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের কাছে অনেক বই তো আছে, কিন্তু গুছিয়ে রাখার জন্য শেলফ নেই। যার কারণে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। এতে ঘর দেখতে যেমন অগোছালো লাগে, তেমনই বইয়েরও যত্ন হয় না। তাই বই ভালো রাখার জন্য সবার আগে একটি বুকশেলফ প্রয়োজন। আপনার কাছে যত সংখ্যক বই আছে, সে অনুযায়ী বুকশেলফ কিনে ফেলুন। সহজেই যেন খুঁজে পাওয়া যায় সেজন্য একাডেমিক বা অফিসিয়াল বইগুলো সবার সামনে রাখতে পারেন। এরপর উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, রান্নার বই, ছবির বই—এভাবে সাজিয়ে রাখতে পারেন। অথবা লেখকের নামানুসারেও রাখতে পারেন। চাইলে বইয়ে লেবেল ও ট্যাগ লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। শেলফ থেকে নামানোর সময় পুরো বই ধরে নামান। শুধু ওপরের অংশ ধরে টানলে বই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
২) সূর্যের আলো ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা থেকে দূরে রাখুন
বই সংরক্ষণের বিষয়টি অনেকটা দামি পেইন্টিং সংরক্ষণের মতোই। কোন পরিবেশে বই রাখছেন তার উপর নির্ভর করছে আপনার বই ঠিক কতটুকু ভালো থাকবে। সরাসরি সূর্যের আলো এসে পড়ে এমন জায়গাতে বই রাখা উচিত নয়। আবার একদম অন্ধকার জায়গাতেও বই রাখবেন না। আলো বাতাসযুক্ত শুকনো স্থানে বই রাখুন। স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালের কাছেও কখনও বই রাখা উচিত নয়। কারণ কাগজ খুব দ্রুত পানি শোষণ করে নেয়। এতে বই দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই কড়া রোদ বা স্যাঁতস্যাঁতে ভাব আছে এমন দুই জায়গা থেকেই বই দূরে রাখুন। অনেকের বুকশেলফে কাঁচের দরজা থাকে। এতে বই ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেলেও পর্যাপ্ত বাতাসের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। তাই বুকশেলফ থেকে মাঝে মাঝে বই বের করে রোদে রাখতে হবে।
৩) বইয়ের মলাট লাগিয়ে নিন
বই কেনার পর তাতে মলাট লাগিয়ে নিলে নতুন বই অনেকদিন ভালো থাকে। যে কোনো পেপার দিয়েই মলাট করা যায়। তবে বইয়ের প্রচ্ছদ যেন দেখা যায় সেজন্য ট্রান্সপারেন্ট পেপার ইউজ করা যায়। মলাট করার পর বই ধরার সময় হাত যেন নোংরা বা ভেজা না থাকে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
৪) কাগজের বুকমার্ক ব্যবহার করুন
অনেকেই বই পড়ার মাঝে বিরতি দিয়ে পৃষ্ঠা ভাঁজ করে রাখেন অথবা পেপার ক্লিপ ইউজ করেন। দুটোই বইয়ের জন্য খারাপ। পেপার ক্লিপে জং ধরে পৃষ্ঠা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর ভাঁজ করলে ভেঙে যেতে পারে। তাই বইয়ের জন্য কাগজের বুকমার্ক সবচেয়ে ভালো। চাইলে পালক, রেশমের ফিতা বা শার্টিনের কাপড়ও বুকমার্ক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
৫) পোকা থেকে সুরক্ষিত রাখুন
সঠিকভাবে যত্ন না নিলে বইয়ে পোকা ধরে, বইয়ের পৃষ্ঠায় দুর্গন্ধ হয়, ধুলো জমে। এসব সমস্যা কমানোর জন্য বইয়ে জমে থাকা ধুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বইয়ের ভিতর নিমপাতা, তেজপাতা বা ল্যাভেন্ডার ফুল রাখতে পারেন। বইয়ের তাকে কর্পূর বা ন্যাপথলিন রাখুন। এগুলোর গন্ধে বইয়ে পোকা ধরবে না। অনেকে বইয়ের ভেতর ফুল বা পাতা রাখেন। এতে কিন্তু পৃষ্ঠার রঙ নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফুল বা পাতা সংরক্ষণ করতে চাইলে সেগুলো আলাদাভাবে ডায়েরিতে রাখতে পারেন।
৬) খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন
অনেকে খাওয়ার সময় বই পড়েন। কিন্তু এটা মোটেও করা উচিত নয়। কারণ বইয়ে খাবার লেগে পরবর্তীতে পোকা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বই পড়তে ভালোবাসেন? তাহলে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে খাবার লেগে পছন্দের বইটি নষ্ট হয়ে যাক! বইয়ের যত্ন নেয়ার জন্য তাই খাওয়ার সময় বই পড়া থেকে বিরত থাকা উচিত। অনেকে পড়ার সময় হাতে চা বা কফি নিয়ে বসেন। তাই সাবধান হতে হবে এ সময়েও।
৭) পড়ার সময় সতর্ক থাকুন
অনেকেই বই ভাঁজ করে বা এক হাতে বই পড়ার চেষ্টা করেন। দুটো উপায়ের কোনোটাই বই ভালো রাখার জন্য ভালো নয়। বই অবশ্যই দুই হাত দিয়ে ধরে পড়ুন। সম্ভব হলে কুশনের উপর রেখে বই পড়ুন। এতে মোটা বা ভারী বই হলে ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
৮) দীর্ঘদিন একইভাবে বই ফেলে রাখবেন না
বই কেনা হলেও সেটা হয়তো অনেকদিন পড়া হচ্ছে না। এমন হলে অন্তত চেষ্টা করুন বইয়ের ধুলো ঝেড়ে রাখতে। মাঝে মাঝে বইগুলোকে বের করে মুছে রাখুন, রোদে দিন। বইয়ের ভেতর নিমপাতা বা বুকশেলফে ন্যাপথলিন রেখে দিন। এক কথায়, দীর্ঘদিন একইভাবে বই ফেলে রাখবেন না। বইয়ের সাথে সাথে বুকশেলফও ক্লিন রাখতে হবে।
৯) বই ধার দিলে লিখে রাখুন নাম ও তারিখ
ধার দিয়ে বই ফেরত পান না এমনটি প্রায়ই হয়। আবার ফেরত পেলেও দেখা যায় বইয়ের অবস্থা আগের মতো থাকে না। তাই যাকে বই ধার দিচ্ছেন তাকে অবশ্যই বইয়ের যত্ন নেয়ার ব্যাপারে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিন। আর দেয়ার সময় নাম ও তারিখ টুকে রাখুন। যেন সময়মতো ফেরত নেয়া যায়। বই দিতে দেরি হলে নিজেই যোগাযোগ করুন।
১০) বইয়ে আঠার ব্যবহার করবেন না
বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে গেলে সাময়িকভাবে আঠা দিয়েই লাগিয়ে নেয়াটা সহজ মনে হয়। তবে লং টার্মের জন্য এটা উচিত নয়। এছাড়া আঠার সাথে পোকা আটকে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। অনেকে স্কচটেপ দিয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা বা মলাট ঠিক করার চেষ্টা করেন। সেটাও উচিত নয়। বইয়ের বাইন্ডিং ছুটে গেলে দক্ষ কারিগরের কাছে নিয়ে সেলাই করে নেয়াই ভালো।
বইপড়ুয়াদের কাছে বই মানেই ভালো কিছু মুহূর্ত কাটানোর উপায়। সত্যি বলতে বই কিন্তু আমাদের অনেকের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। তাই যত্নের অভাবে বই নষ্ট হয়ে যাক এমন নিশ্চয়ই আমরা কেউই চাই না, তাই না? নিজের সংগ্রহে রাখা বইগুলোর তাই নিয়মিত যত্ন নিন। এতে অনেকদিন পর্যন্ত বই ভালো রাখা সম্ভব হবে।
ছবিঃ Better Homes & Gardens, সাটারস্টক