বলা হয়, মানুষের মাথার চুল মুখের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। চুল সুন্দর না হলে সৌন্দর্য ততটা খোলে না। সঠিক পুষ্টি পেলে আমাদের চুলের জেল্লা ঠিক থাকে। আর না হলে রুক্ষ, ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে পড়তে শুরু করে। চুলে খুশকিসহ নানা সমস্যা দেখা যায়। চুলের পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে চুল যেমন পড়ে যায়, তেমনই সঠিক ডায়েট মেনে না চললেও চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়।
স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে যেমন আমরা সুস্থ থাকি, তেমনি ত্বকও সুন্দর হয়- এটা মোটামুটি সবাই জানে। কিন্তু এটা জানেন কী, চুলের ওপরেও খাবারের প্রভাব পড়ে ব্যাপকভাবে? শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার-এর পাশাপাশি আপনি কী খাচ্ছেন তাও কিন্তু চুলের জন্য সমান জরুরি! বিশেষজ্ঞরা বলেন, খাবারের পুষ্টিগুণ চুলের উপাদান ও মাথার ত্বকের ওপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। জেনে নিন চুলের জন্য উপকারী কিছু খাবারের কথা।
[picture]
ডিম
এটি প্রোটিনের একটি বড় উৎস। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক, সেলেনিয়াম, সালফার ও আয়রন। আয়রন চুলের গোড়ায় রক্ত ও অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করে। এছাড়া আয়রনের অভাবে উদ্ভুত রোগ যেমন এনেমিয়া নারীদের চুল পড়ে যাবার একটি বড় কারণ।
ডাল
ডাল উদ্ভিজ্জ প্রোটিন যা আমাদে দেহের কোষ বৃদ্ধিতে কাজ করে। এটি চুলের কোষ বৃদ্ধিতে অনেক সহায়তা করে। এতে চুল দ্রুত বাড়ে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ও রুক্ষতা দূর হয়। তাই খাদ্য তালিকায় ডাল রাখুন।
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, যা চুলকে করে তোলে শক্ত ও মজবুত। সামুদ্রিক প্রায় সব মাছেই রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সার্ডিন মাছ, ট্রাউট মাছ, স্যামন মাছ, টুনা মাছ ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩। অ্যাভোকাডো ও মিষ্টি কুমড়ার বীজেও রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড।
হাঁস-মুরগীর মাংস
এসব মাংস প্রোটিনের উত্তম উৎস। এছাড়াও এতে রয়েছে চুলের স্বাস্থ্য উপযোগী উপাদান যেমন জিংক, আয়রন এবং ভিটামিন-বি।
পালং শাক
পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ফোলাইট। এই সবুজ শাকটি নিয়মিত খেলে আমাদের দেহে হিমোগ্লোবিন-এর মাত্রা বাড়ে এবং এতে চুলের ফলিকল-এ অক্সিজেন পৌঁছায়। এতে করে আমাদের চুল দ্রুত বাড়ে এবং মাথার ত্বক ঠিক থাকে।
গাজর
গাজরেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ যা চুলের পক্ষে উপকারী। নিত্যদিনের ডায়েটে গাজর রাখলে চুল পড়ার সমস্যায় লাগাম পড়ানো যায়।
পাকা টমেটো
টমেটোতে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা মাথার স্ক্যাল্প-এর রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। এর কারণে চুলের ফলিকল স্টিমুলেটেড হয়। একটি পাকা টমেটো দিয়ে জুস বানিয়ে খেয়ে নিন।
আমলকী
আমরা সবাই চুলের যত্নে আমলকীর গুঁড়া ব্যবহার করি। তবে লবণ দিয়ে চার থেকে পাঁচটি আমলকী চিবিয়ে খেলেও চুল পড়া অনেকাংশে রোধ হবে। আমলকীতে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা নতুন চুল গজাতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি চুল পড়া রোধ করে। এ ছাড়া চুল ঘনও হয়।
শসা
শসাতে আছে যথেষ্ট পরিমাণে সিলিকা, সালফার এবং ভিটামিন-এ। এই উপাদান চুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং চুল পড়া বন্ধ করে। কাঁচা শসার জুস স্বাস্থ্যকর এবং চুল গজাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন খোসাসহ একটি কচি শসা খেলে নতুন চুল গজাবে।
ক্যাপসিকাম
লাল, হলুদ এবং সবুজ ক্যাপসিকাম ভিটামিন-সি এর খুব ভালো উৎস। ভিটামিন সি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং চুলের ভঙ্গুরতা দূর করতে সাহায্য করে। চুলের সুস্থতায় সালাদ এবং রান্নায় ক্যাপসিকাম রাখার অভ্যাস করুন।
মটরশুঁটি
চুলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান কেরাটিন। মটরশুঁটি ও ডাল এই প্রোটিনে সমৃদ্ধ। শক্তপোক্ত চুলের জন্য নিয়মিত মটর ও ডাল খেতে পারেন। এতে চুলের বৃদ্ধি যেমন হবে, তেমনি চুল থাকবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও ঝলমলে।
বাদাম
বাদামে বায়োটিন উপাদান আছে যা চুল দ্রুত বৃদ্ধি করে চুলের গোড়া মজবুত করে থাকে। কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, চিনা বাদাম, পেস্তা বাদাম- এসবে বেশি পরিমাণে বায়োটিন আছে। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এক কাপ বাদাম রাখুন। কয়েক মাসের মধ্যে আপনি আপনার পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
আখরোট
আখরোটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ অ্যাসিড, বায়োটিন এবং ভিটামিন-ই, যা চুলের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। আখরোট চুলের প্রতিরক্ষক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া আখরোটে রয়েছে তামা, যা আপনার চুলের প্রাকৃতিক রং ধরে রাখতে সাহায্য করে। চুলের যে ঝলমলে ভাব, তা ধরে রাখতেও আখরোট সাহায্য করে।
লেবু
শরীরে প্রতিদিন ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণে লেবু, কমলালেবু বা এই জাতীয় ফল খেতে হবে। লেবু ভাতের সাথে অথবা পানিতে মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। দ্রুত চুল গজাতে এটি অনেক কার্যকর।
পেয়ারা, পেঁপে ও কমলা
এসব ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি। ভিটামিন-সি চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন করার কাজে কৈশিক-জালিকা বা সরু রক্তনালীকে সহায়তা করে। যা চুলের ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি ও ই এবং ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যা চুলের আগা ফাটা ও চুল পড়া রোধ করে। এর সাথে চুলের গোড়া মজবুত করে তোলে।
নাশপাতি
সুন্দর চুল, শরীরে রক্তের প্রবাহ ঠিক রাখা, রক্তে পিএইচ–এর মাত্রা ঠিক রাখা, এসবে নাশপাতির জুড়ি নেই। তাই সকালের খাদ্য তালিকায় অথবা দিনের যে কোনো সময় এটা খেতে পারেন।
ব্লুবেরি
ব্লুবেরি আমাদের দেশে খুব বেশি পরিচিত ফল না হলেও এ ফলটি চুলের জন্য খুব উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা চুলের পুষ্টির জন্য খুবই জরুরি। এটি মাথার ত্বকের রক্তের সঞ্চলন ঠিক রেখে চুলে পুষ্টি যোগায়। ভিটামিন সি-এর অভাব দেখা দিলেই চুল রুক্ষ ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। এ ছাড়া কিউই ও স্ট্রবেরিতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু ভিটামিন-এ ও মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় তেল তৈরিতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ-এর অভাব দেখা দিলে মাথার ত্বকে চুলকানি ও খুশকির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। গাজর, আম, মিষ্টি কুমড়া, অ্যাপ্রিকট ও বাঙ্গিও ভিটামিন এ-এর চমত্কার উত্স।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরায় থাকা অ্যামাইনো এসিড, প্রোটিন, মিনারেল ও ভিটামিন, বিশেষ করে এ, সি ও ই ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য প্রয়োজন। অ্যালোভেরার পাতার ভিতরের শাঁস দিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন।
শস্যদানা
বায়োটিনে থাকে আয়রণ, জিংক এবং ভিটামিন। বায়োটিন সেল গঠনে এবং অ্যামাইনো এসিড তৈরিতে ভূমিকা রাখে, যা সুন্দর চুলের জন্য আবশ্যক। তাই শস্যদানা খেয়ে বায়োটিনের চাহিদা পূরণ সম্ভব।
পনির, দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার
এসব খাবারে আছে প্রোটিন, ভিটামিন বি-৫ এবং ভিটামিন-ডি। আধুনিক গবেষণা প্রমাণ করে যে, ভিটামিন-ডি চুলের গোড়ার সঠিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
ওটস
ওটসে রয়েছে প্রোটিন, তামা, দস্তা ও ভিটামিন বি-এর মিশ্রণ। প্রাতঃরাশে ওটস খেলে চুল পড়াও কমবে, শরীরও ভালো থাকবে।
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য জল-তেলের পরিচর্যা তো চাইই; সঙ্গে চাই প্রয়োজনীয় খাবারদাবার। চুল যদি শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাড় করতে না পারে, তা হলে মাথায় কেবল তেল মেখে আর শ্যাম্পু করে চুল ঠিকঠাক রাখা যাবে না। তাই হেলদি খাবার খান, চুলের যত্ন নিন।
লিখেছেন- লিন্নি
সূত্র- স্টাইলকেস্টার.কম
ছবি- ইমেজেসবাজার.কম