কালপুরুষ | সমরেশ মজুমদারের ত্রিরত্নের তৃতীয় সৃষ্টি

কালপুরুষ | সমরেশ মজুমদারের ত্রিরত্নের তৃতীয় সৃষ্টি

বুক সেলফে কালপুরুষ - shajgoj.com

বই : কালপুরুষ

ধরন: উপন্যাস।

Sale • Bath Time, Split Ends, Sun Protection

    লেখক : সমরেশ মজুমদার

    প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা।

    প্রচ্ছদঃ- সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ ১৯৮৫।

    কালপুরুষ উপন্যাসের লেখক পরিচিতি

    কালপুরুষ উপন্যাসের লেখক সমরেশ মজুমদার - shajgoj.com

    সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১৯৪২ সালে, বাংলা ১৩৪৮সালের ২৬শে ফাল্গুন। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা বাগানে। ছাত্রজীবন কেটেছে জলপাইগুড়িতে। তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়েছে ১৯৬৭ সালে। প্রথম উপন্যাস দৌড় প্রকাশিত হয়েছে ১৯৭৫ সালে। তার প্রতিটি গল্প উপন্যাস গতানুগতিকতার একঘেয়েমি থেকে মুক্ত। এ কারণেই বাংলা সাহিত্যের পাঠক পাঠিকারা তার প্রথম আবির্ভাবেই তাকে সাদরে বরণ করে নিয়েছেন। তাঁর বিভিন্ন পুরষ্কার- আনন্দ পুরষ্কার, চলচিত্র পুরষ্কার, একাডেমী পুরষ্কার অনন্য সাহিত্য-কৃতিরই অকুন্ঠ স্বীকৃতি।

    কালপুরুষ উপন্যাস পর্যালোচনা

    কালপুরুষ একটি ত্রয়ী উপন্যাস - shajgoj.com

    কালপুরুষ সমরেশ মজুমদারের ট্রিলোজি সিরিজের শেষ বই। উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষ বই তিনটা নিয়ে এই ট্রিলোজি সিরিজ। কালপুরুষ উপন্যাসে অনিমেষ আর মাধবীলতার ভালোবাসার ফুল ফুটফুটে অর্ক’র জন্ম হয়। অর্ক নামটা মা মাধবীলতার দেয়া। অর্ক মানে সূর্য। অর্ক যেন তাদের নিস্তব্ধ জীবনে একফালি সূর্য।

    অর্ক

    ঈশ্বরপুকুর লেনের ঘুপচি ঘরে আশেপাশের শত কদর্যতার মাঝে বেড়ে ওঠা অর্ককে নিয়ে সবসময়ই ভয়ে থাকে মাধবীলতা। বস্তিতে থাকার মাশুল অবশ্য দিতেই হয় অনিমেষ আর মাধবীলতাকে। সংসার চালানোর চাপ আর ঋণের জালে জর্জরিত মাধবীলতা, পুলিশের অত্যাচারে পঙ্গু অসহায় অনিমেষের শত সতর্কতার পরও অর্ক আস্তে আস্তে বস্তির পরিবেশে আসক্ত হতে থাকে। মুখের ভাষা হয়ে যায় খিস্তি মেশানো। বন্ধু-বান্ধবদের প্ররোচনায় একসময় ভুল পথে পা বাড়ায় অর্ক। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সারাদিন রকে আড্ডা আর বখাটেপনা করে বেড়ানোই তার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়ায়। বাবা অনিমেষকে কথায় কথায় অপমান করতেও ছাড়ে না অর্ক। বাবাকে এমন সব কথা সে বলে যা ছেলে হিসাবে কখনোই বলা উচিত নয়। অবশেষে অর্ক বিলুর সাথে ব্ল্যাক টিকেটের ব্যবসা শুরু করে।

    রাজনৈতিক পথ পরিক্রমা

    কালপুরুষ বই উল্টে রাখা - shajgoj.com

    অনিমেষ, মাধবীলতা ও অর্ক

    সত্তর দশকের অপরিনামী রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় শেষ পর্বে কালবেলার নায়ক অনিমেষ মিত্র ছিলেন একজন নকশাল আন্দোলনকারী। ভার্সিটি জীবনের শেষ দিকে দেশটাকে বদলানোর উদ্দেশ্যে নকশাল আন্দোলনে যোগদান করে। যার ফলস্বরূপ তার ঠিকানা হয়ে উঠে কারাগার। জীবন থেকে আটটি বছর ছুড়ে ফেলে দিতে হয়, বেছে নিতে হয় পঙ্গুত্ব। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে সে কারো বোঝা হতে চায় নি। কিন্তু তার প্রিয়তমা মাধবীলতা তাকে ছেড়ে যেতে নারাজ। মাধবীলতা চায় নি তাদের পুত্র অর্ক, পিতৃ পরিচয় ছাড়া বেঁচে থাকুক। সে কাগজে-কলমে বিয়ে করে তাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাসটাকেও অপমান করতে চায় নি।

    বন্ধ কালপুরুষ বই - shajgoj.com

    অনিমেষের চিকিৎসার খরচসহ তিনজনের ছোট্ট পরিবারটার সমস্ত খরচ মাধবীলতা একাই বহন করে চলে। মাধবীলতা একটা স্কুলে মাস্টারি করে। বাড়তি কিছু আয়ের জন্য টিউশনি করায়। সেই টাকা দিয়েই তাদের তিন জনের সংসার চলে কোনমতে। তাছাড়া অনিমেষকে সুস্থ করতেও মাধবীলতা প্রচুর টাকা খরচ করে। কিন্তু অনিমেষ সুস্থ হতে পারে না তেমন। অনিমেষের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ঋণও হয়ে যায়। মাধবীলতা নিজেকে পরিবারের জন্য উজাড় করতে থাকে। তাই না চাইতেও তাদের ঠিকানা হয়ে উঠে বস্তিতে। অনিমেষ আশা করেছিলো তার পুত্র অর্ক তার সমাজতান্ত্রিক আদর্শের নিশানটি শক্ত হাতে বয়ে নিয়ে চলবে। কিন্তু সমকালীন অন্তঃসারহীন কুটিল রাজনীতি এবং পঙ্কিল সমাজব্যবস্থা অর্ককে করে তুলেছিল অন্ধকার অসামাজিক রাজত্বের প্রতিনিধি। কিন্তু যেহেতু তার রক্তের মধ্যে ছিল অনিমেষের সুস্থ আদর্শবাদ এবং তার মা মাধবীলতার দৃঢ়তা ও পবিত্রতার সংমিশ্রিত উপাদান, সেই হেতু তার বোধোদয় ঘটতে বিলম্ব হয় নি।

    অর্কর পরিবর্তন

    একটা ঘটনায় সমাজের উচু তলার কিছু মানুষগুলোর আসল চেহারাটা সামনে আসে অর্কর। এইসব দেখেশুনে তীব্র প্রতিবাদে মুখরিত হয়ে ওঠে অর্ক। নিজের সাথে নিজেই প্রতিজ্ঞা করে সমাজের এসব অসঙ্গতির সাথে কখনোই তাল মেলাবে না। সত্যকে সত্য, অন্যায়কে অন্যায়ই বলবে। বস্তির লোকজনকে সাথে নিয়ে নতুন এক আন্দোলনে সামিল হয় সে। এক পরিবার এক হাড়ি হিসেব করে পুরো বস্তিকে সাথে নিয়ে শুরু করে এক বিরল ধরনের কাজ। নির্দিষ্ট একটা অর্থের বিনিময়ে সারা মাস তিনবেলা সবাইকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নেয় সে।

    সাজানো কালপুরুষ বই - shajgoj.com

    এসব দেখেশুনে আশার সঞ্চার হয় অনিমেষ মাধবীলতার মনে। অর্কও আদর্শবান হয়ে উঠেছিল। এক ভিন্ন মানসিকতার সে আহ্বান শুনেছিলো চিরকালীন মানবতার। একদিকে সু্যোগসন্ধানী রাজনৈতিক দল এবং অপরদিকে সুবিধাবাদী সমাজব্যবস্থার যুপকাষ্ঠে নিষ্পেষিত ও নিপীড়িত কিছু মানুষ। অর্ক তাদের একত্রিত করে উদ্বুদ্ধ করেছিলো নতুনভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। তাদের সামনে তুলে ধরেছিলো আগামী পৃথিবীর সুন্দরতম এক মানচিত্র। কিন্তু ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দল ও সমাজ অর্ককে অর্গলবদ্ধ করে সেই পৃথিবীর স্থানটি ভেঙে চুরমার করতে দ্বিধাবোধ করে নি। কিন্তু অর্ক যার অপর নাম সূর্য- তার আবির্ভাবকে কি চিরকালের মতো রুদ্ধ করে রাখা যায়?

    পরিশেষ

    কালপুরুষ উপন্যাসের সমাপ্তিতে মানবতার আহ্বানের প্রতিধ্বনি স্পষ্টতর। আর তাতেই উপন্যাসটি পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আবিষ্ট হয়ে থাকতে হয় প্রতিটি পাঠকে। বইটি এখনো যারা পড়েন নি তারা সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন। খুব ভালো সময় কাটবে আপনার কালপুরুষ-এর সাথে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়!

    ছবি- সংগৃহীত: শিফাত আরা সঞ্চা, বিডি প্রতিদিন.কম

    20 I like it
    3 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort