ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন নিতে খেয়াল রাখুন ৯টি বিষয়ে

ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন নিতে খেয়াল রাখুন ৯টি বিষয়ে

2

খুব শখ করে পছন্দের ইনডোর প্ল্যান্টস এনে ঘর সাজালেন। কিছুদিন গাছ ভালো থাকলেও অল্প দিনেই কেমন যেন গাছ দুর্বল হয়ে পাতা ঝরতে লাগলো, ডাল মরে গেলো কিংবা গাছ বড়ই হলো না। এদিকে আপনিও বুঝতে পারছেন না কী সমস্যা হয়েছে গাছে। কারণ গাছ নিয়মিত সার, পানি সবই পাচ্ছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? যারা নিয়মিত গাছের যত্ন নেন, তাদের কাছে এসব সমস্যা খুব বেশি না হলেও যারা একদম নতুন অথবা ব্যস্ততার কারণে গাছকে সময় দিতে পারেন না তাদের ইনডোর প্ল্যান্টস নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়। চলুন জেনে নেই কীভাবে ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন নিলে ভালো থাকবে-

ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন নিতে যে ৯ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবেঃ

নিয়মিত গাছে পানি দেওয়া

গাছের কিন্তু নিয়মিত ময়েশ্চারাইজেশন প্রয়োজন। এজন্য মাটিকে একদম শুকনো না রেখে কিছুটা ময়েশ্চারড রাখতে হবে। মাটি যদি খুব বেশি শুকনো অথবা অতিরিক্ত ভেজা থাকে, তাহলে গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেবে। আবার একদম কম পানি এবং অতিরিক্ত পানিও গাছের ক্ষতি করে। ওয়াক্সি বা লেদার ধরণের পাতা আছে এমন গাছের চেয়ে পাতলা পাতা ও ঘন ঝোপের গাছে পানি বেশি লাগে। যদি মাটির উপরিভাগে অথবা গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকে তবে বুঝতে হবে গাছে অতিরিক্ত পানি দেওয়া হয়েছে। এমন হলে গাছ মরে যেতে পারে। তাই পানি জমা দেখলেই বাড়তি পানিটুকু ফেলে দিতে হবে। মাটি দেখে যদি শুকনো মনে হয় অথবা মাটির সাধারণ রং বদলে গেছে এমন লাগে তাহলে অবশ্যই গাছে পানি দিতে হবে। প্রতিদিন অল্প করে যদি সম্ভব না হয় তাহলে একদিন পর পর পানি দিলেও হবে।

Plant 3

মাটির অবস্থা বোঝা

মাটির অবস্থা বোঝার জন্য একটি আঙুলের উপরিভাগ মাটির ভেতর আলতো করে ঢুকিয়ে দিন। যদি আঙুলে মাটির ময়েশ্চার বোঝা যায়, তাহলে গাছ ভালো আছে। কিন্তু যদি ড্রাই মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে গাছে পানি প্রয়োজন। গাছের ধরন বুঝে একেক গাছে ভিন্ন পরিমাণ পানি প্রয়োজন হয়। যেসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার গাছ কেমন আছে-

  • যদি গাছের পাতার রং বদলে যায়, পাতার গ্রোথ বন্ধ হয়ে যায়, পাতা ঝরতে থাকে, পাতা যদি পচে যেতে থাকে তবে বুঝতে হবে গাছ ওভার হাইড্রেটেড হয়েছে। পরিমিত পানি এ মুহূর্তেই প্রয়োজন।
  • গাছের পাতার বৃদ্ধি যদি ধীর হয়, পাতা যদি বাদামী বা শুকিয়ে যায়, গাছের নিচের অংশের পাতা যদি হলুদ বা কুঁচকে যায়, তবে বুঝতে হবে গাছ ডিহাইড্রেটেড হয়ে আছে। এমন হলে অবশ্যই গাছের ধরন বুঝে পানি দিতে হবে।

একদম ঠান্ডা বা গরম পানির ব্যবহার নয়

অনেকেই ভাবেন, গরমের সময় গাছেরও ঠান্ডা বা শীতের সময় কিছুটা উষ্ণ পানি প্রয়োজন। এমন ভুল কখনো করবেন না। গাছের বেঁচে থাকার জন্য এ দুই ধরনের পানির প্রয়োজন হয় না। গাছের জন্য সব সময় রুম টেম্পারেচারের পানি ব্যবহার করতে হবে। গরম বা ঠান্ডা পানি গাছের কী ক্ষতি করতে পারে-

  • গরম পানি গাছের শিকড়ের ক্ষতি করে, এমনকি গাছ মারাও যেতে পারে।
  • যত্ন বুঝে গাছ সব সময় নিজের মতো করে বড় হয়। কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি গাছের বড় হওয়ার জন্য যে স্বাভাবিক নিয়ম তাতে বাধা দেয়। এ কারণে গাছের গ্রোথ কমে যায়।

Plant 3

পর্যাপ্ত সূর্যের আলো

গাছের জন্য এমন জায়গা বেছে নিতে হবে যেখানে গাছ পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায়। কেন গাছের সূর্যের আলো প্রয়োজন? কারণ-

  • ফটোসিন্থেসিসের মাধ্যমে গাছ খাবার তৈরি করে। তাই সূর্যের আলোর পরিমাণ, সময়, তীব্রতা গাছের বৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলে।
  • গাছ কখনো সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখবেন না। ঘরেই এমন জায়গায় রাখুন যেখানে খুব কড়া নয়, তবে পর্যাপ্ত রোদের আলোটুকু আসে।
  • লাইটের আলো অথবা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন অনেক গাছের জন্য সূর্যের আলোর বদলে ব্যবহার করা যায়।
  • ফুল গাছের জন্য দিনের ১২-১৬ ঘন্টা আলোর প্রয়োজন।
  • পাতার গাছগুলোর জন্য ১৪-১৬ ঘন্টা আলো প্রয়োজন প্রতিদিন।

গাছ বারবার নড়াচড়া করা যাবে না

অনেকেই গাছ এক জায়গায় কিছুদিন ভালো না লাগলে আবার অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যান। এমন কাজ বারবার করা যাবে না। কারণ-

  • একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে গাছও নিজেদেরকে মানিয়ে নেয়। বারবার জায়গা পরিবর্তনের কারণে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। কারণ নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে গাছেরও বেশ খানিকটা সময় লাগে।
  • গাছ যদি কিছুটা অন্ধকার জায়গায় বড় হয়ে থাকে, তবে হুট করেই তাকে প্রচুর আলোতে নিয়ে যাবেন না।
  • গাছকে যদি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতেই হয় সেক্ষেত্রে শুরুর দিকে কিছুদিন ঘন্টাখানেক তাকে নতুন জায়গায় রেখে আসুন। এভাবে সময় ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। এডজাস্ট হয়ে গেলে এরপরই গাছ নতুন জায়গায় একবারে নিয়ে আসুন।

plant 1

রুমের হিউমিডিটি বাড়িয়ে দিন

গাছের জন্য সব সময় পর্যাপ্ত আর্দ্রতার প্রয়োজন। যেভাবে ঘর আর্দ্র রাখতে পারেন-

  • ঘরে যদি পর্যাপ্ত আলোর বদলে একদম শুষ্ক বাতাস থাকে, তাহলে গাছের বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে। এমন হলে ঠান্ডা রাখতে ঘরের জন্য রুম হিউমিডিফায়ার প্রয়োজন।
  • ঘরের এমন জায়গায় সেটি রাখুন যেন বাতাস থেকে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা নিতে পারে। তবে এটি যেন গাছের পাতা বা ফুল একদম ভিজিয়ে না ফেলে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
  • যদি হিউমিডিফায়ার কেনা সম্ভব না হয়, তাহলে নুড়ি পাথরও ব্যবহার করতে পারেন। একটি ট্রেতে বেশ কয়েকটি নুড়ি পাথর নিন। পানি দিয়ে নুড়িগুলো ভিজিয়ে রাখুন। এই পানি বাষ্পীভূত হয়ে ঘর আর্দ্র রাখবে।
  • একটি স্প্রে বোতলে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে গাছে স্প্রে করে দিন। এতেও গাছ ময়েশ্চার পাবে।
  • গাছের পাতা আর ফুলের কুঁড়ি যদি বাদামি রঙের হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছে আর্দ্রতার অভাব রয়েছে।
  • কয়েকটি গাছ একসঙ্গে রাখলেও নিজেদের মধ্যে আর্দ্রতা ছড়াবে। এতে ভালো থাকবে গাছ।

মাটিতে পর্যাপ্ত সার

বেশিরভাগ গাছে ১০-১০-১০ পরিমাণে সার প্রয়োজন হয়। ইনডোর প্ল্যান্টে মাটি ও সারের নির্দিষ্ট পরিমাণ রাখতে হয়। গাছ লাগানোর সময় যে বিষয়গুলোতে খেয়াল রাখতে হবে-

  • প্রথমে নাইট্রোজেন, এর উপর ফসফরাস, তার উপর পটাশিয়াম দিয়ে নিতে হবে। সহজে মনে রাখার জন্য আপনি N-P-K ফর্মুলাটি মনে রাখতে পারেন।
  • ফুল গাছের জন্য পটাশিয়াম অত্যাবশ্যক একটি সার।
  • পাতাবাহার জাতীয় গাছে নাইট্রোজেন খুব ভালো কাজ করে।

Plant

  • ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট জাতীয় গাছ মরুভূমির মতো শুকনো বালি ও পাথুরে মাটি পছন্দ করে। তাদের জন্য প্রয়োজন আলাদা ধরনের ড্রেইনেজ সিস্টেমের পটিং। খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি নিষ্কাশনের জন্য পটের নিচে ফুটো থাকে। না হলে গাছ অতিরিক্ত ময়েশ্চার ধরে রাখবে যা গাছের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  • একেক গাছের জন্য বেড়ে ওঠার জন্য একেক ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আপনার গাছের জন্য কোনটি প্রয়োজন অবশ্যই কেনার আগে সেটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেবেন।
  • গাছের অতিরিক্ত শাখা আর ঝোপ ছেটে দিন। এতে গাছে পোকার আক্রমণ হবে না। গাছে থাকা মরা পাতা ছিঁড়ে ফেলতে হবে যেন সেগুলো অন্য পাতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

পাতা থেকে ধুলো পরিষ্কার

গাছে কিন্তু শুধু পানি দিলেই তার যত্ন শেষ হয়ে যায় না। গাছের পাতায় ধুলো জমে। এতে গাছ মলিন দেখায়। তাই রুম টেম্পারেচার থাকা পানি নিয়ে পরিষ্কার নরম কাপড় বা ব্রাশ দিয়ে গাছের পাতা পরিষ্কার করে দিতে হবে। যেসব গাছে বেশি পাতা অথবা লম্বায় বেশ বড়, সেগুলো সম্ভব হলে সপ্তাহে একবার বাথরুমে নিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

Indoor Plants care

পোকা দূর করা

ঘরের গাছের আরও একটি বড় সমস্যা পোকার আক্রমণ। মিলিবাগের মতো ছোট ছোট সাদা পোকা বা অন্যান্য পোকার আক্রমণ হতে পারে গাছে। এমন হলে নার্সারিতে খোঁজ নিয়ে পোকা দূর করার ওষুধ এনে স্প্রে করতে হবে। অথবা পোকার আক্রমণ বুঝলে শুরুতেই ফার্মাসি থেকে রাবিং অ্যালকোহল নিয়ে আসুন। এবার সেটি কটন বল বা কাপড়ে লাগিয়ে পোকা ধরা ডাল বা পাতা মুঝে নিন। পোকা দূর হয়ে যাবে।

বাইরের পরিবেশের চেয়ে ঘরের গাছ বাঁচিয়ে রাখা কিছুটা কঠিন। এ জন্য পর্যাপ্ত খেয়াল রাখতে হয়। গাছের যেমন যত্ন নেবেন, সেও ঠিক ততটাই ঘরকে স্নিগ্ধ রাখবে। তাই নিয়মিত গাছের যত্ন নিন, ভালো থাকুক আপন ঘর।

SHOP AT SHAJGOJ

     

    ছবিঃ অরনীর, সাটারস্টক

    18 I like it
    9 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort