একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর নিয়মিত ফেসিয়াল করাটা জরুরী। কিন্তু সময়ের অভাবে বা অতিরিক্ত খরচের কথা ভেবে পার্লারে যাওয়া হয় না। কিন্তু এই তাল বাহানায় ত্বকের তো বারোটা বেজে যায়। তাই আপনাদের সুবিধার্থে, আপনাদের সুবিধা মত সময়ে স্বল্প খরচে ত্বকের যত্নে গোল্ড আর সিলভার ফেসিয়াল করার উপায় বলে দিচ্ছি। এই ২টি ফেসিয়াল কিটের জন্য ভালো ব্র্যান্ড হলো শেহনাজ হুসাইন, ন্যাচারস, বায়ো ফ্রেশ, ভিএলসিসি। জোভসটাও ভালো কিন্তু পাওয়াটা একটু কষ্টসাধ্য। এই সবগুলোই পেয়ে যাবেন ৬০০-১৫০০ টাকার মধ্যে। ব্র্যান্ড অনুযায়ী দামের ভিন্নতা রয়েছে।
ফেসিয়াল ২টি ৩৫+ হলে ব্যবহার করা ভালো তবে আপনার ত্বক যদি একান্তই আপনার অবাধ্য হয়ে যায় তাহলে আগেই করতে পারেন, তবে সেটা ২৮ এর আগে করবেন না।
ত্বক ভেদে ফেসিয়াল
রুক্ষ বা শুষ্ক ত্বক হলে গোল্ড ফেসিয়াল, নরমাল অথবা তৈলাক্ত ত্বক হলে আপনি করবেন সিলভার ফেসিয়াল। সবার ত্বকের ধরন এক না, কারোটা তৈলাক্ত আবার কারোটা স্বাভাবিক। বুঝতে পারছেন না আপনার ত্বকের ধরন কোনটি? চিন্তার কোন কারণ নেই। আমি বলে দিচ্ছি কীভাবে যাচাই করবেন আপনার ত্বকের ধরন।
ত্বকের ধরন যাচাই এর উপায়
রাতে মুখে কিছু লাগাবেন না। সকালে উঠে মুখ না ধুয়ে হাতে কিছু টিস্যু পেপার নিয়ে সোজা আয়নার সামনে চলে যান। এবার টিস্যু পেপার মুখে চেপে ধরুন যদি পেপার শুষ্ক থাকে তাহলে বুঝবেন আপনি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী। যদি তেল তেলে হয় তবে বুঝবেন আপনার ত্বক তৈলাক্ত। স্বাভাবিক ত্বক হলে পেপার শুকনো থাকবে কিন্তু আপনি নিজেই এক ধরনের মসৃণ ভাব অনুভব করবেন। টিস্যু পেপারে যদি কিছু জায়গায় তেল, কিছু জায়গায় শুষ্ক থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার ত্বক মিশ্র।
এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক বাসায় গোল্ড ও সিলভার ফেসিয়াল করার উপায়।
গোল্ড ও সিলভার ফেসিয়াল করার উপায়
গোল্ড ফেসিয়াল
এই ফেসিয়ালে ২৪ ক্যারাট সোনা যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করা হয় যা সহজেই ত্বক ভেদ করতে পারে। ত্বকের পুরনো লাবণ্য, উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে গোল্ড ফেসিয়ালের জুড়ি নেই। ত্বকে লুকিয়ে থাকা ধূলো ময়লা, বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনার ক্ষমতা সোনার অসীম। নতুন কোষ জন্মানোর জন্য সোনার অবদান অনেক। ৩৫ এর উপরে বয়স হলে এই ফেসিয়াল করলে যৌবনের সেই নরম তুলতুলে ত্বক ফিরে পাবেন । এবার জেনে নিন কিভাবে ঘরে বসেই করবেন এই ফেসিয়াল।
একটি গোল্ড ফেসিয়াল কিটে থাকে গোল্ড ক্লিনজার, গোল্ড ফেসিয়াল স্ক্রাব, গোল্ড ফেসিয়াল ক্রিম বা জেল, গোল্ড ফেসিয়াল মাস্ক।
- প্রথমে গাঁদা ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি গোল্ড ক্লিনজার দিয়ে মুখ ক্লিন করুন তারপর গোল্ড ফেসিয়াল স্ক্রাব দিয়ে মুখের সব মরা কোষ দূর করুন। ৩০ সেকেন্ড ধরে সার্কুলার মুভমেন্টে (Circular Movement) স্ক্রাব করুন। তারপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- এবার গোল্ড ক্রিম দিয়ে মুখ ম্যাসাজের (Massage) পালা। এতে আছে গোল্ড ফয়েল (Foil), গোল্ড পাউডার, মধু, স্যাফ্রন (Saphren), এলোভেরা আর চন্দন, যা আপনার ত্বকে বুলিয়ে দেবে কোমল পরশের ছোঁয়া। হালকা হাতে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- এবার ধীরে ধীরে গোল্ড ফেসিয়াল মাস্ক পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। আর অপেক্ষা করুন মাস্ক শুকানো পর্যন্ত। তারপর ভেজা কটন প্যাড (Cotton Pad) দিয়ে মাস্ক তুলে ফেলুন। মাস্কে বিদ্যমান হলুদ, গোল্ড ফয়েল আর এলোভেরা আপনার ত্বকে এনে দেবে সোনালী আভা। এই ফেসিয়াল করার পর ৩০% পর্যন্ত পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
সিলভার ফেসিয়াল
চেহারায় তাৎক্ষণিক জৌলুস আনতে সিলভার ফেসিয়ালের সমকক্ষ আর কোন ফেসিয়াল নেই। এই ফেসিয়াল শুধু পিএইচ (ph) এর ভারসাম্য বজায় রাখে না সেই সঙ্গে ব্ল্যাকহেডস (Blackheads) দূর করে। আসুন দেখি সিলভার ফেসিয়াল কিট দিয়ে কীভাবে বাসায় সিলভার ফেসিয়াল করবেন।
- প্রথমে সিলভার আ্যাশ আর কমলার তেল সমৃদ্ধ সিলভার ক্লিনজার দিয়ে মুখের সব ধূলো ময়লা পরিষ্কার করবেন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ৫-১০ মিনিট ধরে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে সিলভার স্ক্রাব লাগাবেন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলবেন। সিলভার আ্যাশ আর ওয়ালনাট সমৃদ্ধ স্ক্রাব ব্ল্যাকহেডসকে নরম করে আর মৃত কোষ দূর করে।
- এবার ১০-১৫ মিনিট ধরে সিলভার আ্যাশ আর অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি ম্যাসাজ ক্রিম দিয়ে মুখ ম্যাসাজ করুন। এই ক্রিম গায়ের রঙ উজ্জ্বল, মসৃণ করে তোলে।
- সিলভার জেল আয়ুরবেদিক ফর্মুলায় তৈরি। এই জেল সানটান (Suntan) এর প্রভাব কিছুটা কমিয়ে আনে। সিলভার ম্যাসাজ ক্রিমের পর সিলভার জেল দিয়ে ৪-৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- এবার সিলভার প্যাক লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন আপনাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার জন্য। এতে আছে সিলভার আ্যাশ (Ahes) আর কাওলিন (Caulein) যা ত্বককে সুগঠিত করে ও চেহারায় আনে অন্যরকম উজ্জ্বলতা।
তাহলে আর অপেক্ষা কেন? গোল্ড ও সিলভার ফেসিয়াল করার মাধ্যমে পুরনো সব জীর্ণ মলিনতা ভুলে আবার নিজেকে মেলে ধরুন নতুন আঙ্গিকে।
ছবি- সংগৃহীত: কাদিনিমমুতলুয়াম.কম,ওয়ার্ডপ্রেস.কম,সাটারস্টক