সবসময় তো হেয়ার প্রবলেমের সল্যুশন বা হেয়ার কেয়ার টিপস নিয়ে আলোচনা করি। এবারের টপিকটা একটু ভিন্ন! পারফেক্ট হেয়ার স্টাইল ছাড়া আপনার ওভারঅল লুকটা কিন্তু ইনকমপ্লিট থেকে যায়। নিজের ব্যক্তিত্বকে পুরোপুরিভাবে ফুটিয়ে তুলতে মানানসই হেয়ার স্টাইলিং কিন্তু মাস্ট। আমরা জানি যে, মুখের গড়নের সাথে ঠিকঠাক হেয়ার কাট বা স্টাইল সিলেকশনের একটা সম্পর্ক আছে। কোন বিষয়গুলো মাথায় রেখে নিজের জন্য মানানসই হেয়ার কাট সিলেক্ট করতে হয়, সে বিষয়ে কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না! ফেইস শেইপ অনুযায়ী পারফেক্ট হেয়ার কাট ও স্টাইল বেছে নেওয়াটা কিন্তু বেশ জরুরি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
মুখের গড়নের সাথে মানানসই হেয়ার স্টাইল
এই বিষয়টি একদমই পারসোনাল চয়েজ। কিন্তু ফেইসের শেইপ অনুযায়ী হেয়ার কাট সিলেক্ট করলে সেটা আপনার ন্যাচারাল বিউটিকে আরও এনহ্যান্স করবে। হালের ফ্যাশনে তাল মেলাতে কিংবা ট্রেন্ডি স্টাইলে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে, যেটাই আপনার করতে ইচ্ছা হোক না কেন; সেটা হওয়া উচিত ফেইস শেইপের সাথে মিলিয়ে! এর জন্য প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে আপনার ফেইস শেইপ কেমন।
ফেইস শেইপ ও হেয়ার কাট
প্রথমেই আপনার সমস্ত চুল মুখের উপর থেকে সরিয়ে আঁচড়ে বেঁধে নিন। এবার আয়নার সামনে সোজা হয়ে দাঁড়ান, আর খেয়াল করুন আপনার মুখের আকৃতি কেমন। পারফেক্ট হেয়ার স্টাইল পাওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে মানানসই হেয়ার কাট করানো। চুলের ভলিউম এবং লেন্থ কেমন, সেটার উপরও হেয়ার কাট ডিপেন্ড করে। জেনে নিন কোন ধরনের ফেইসে কোন হেয়ার কাট মানাবে।
১) রাউন্ড শেইপের জন্য
গোল শেইপের ফেইসের সাথে মিডিয়াম টু লং লেন্থের হেয়ার সবথেকে ভালো মানায়। এমন হেয়ার কাট সিলেক্ট করুন যাতে মুখের দুই পাশের অংশ কম ফোলা লাগবে। আপনার যদি রাউন্ড শেইপের ফেইস কাটিং হয় তাহলে লং বব কাট, সাইড লেয়ার, ব্যাংস কাট খুব ভালো মানাবে।
২) ওভাল শেইপের জন্য
ওভাল বা ডিম্বাকৃতির ফেইস শেইপে প্রায় সব ধরনের হেয়ার কাট স্যুট করে। আপনার চুল যদি স্ট্রেইট হয়, সেক্ষেত্রে বব কাট, ভলিউম লেয়ার, ফ্রন্ট ব্যাংস বা ফুল লেয়ার কাট দিতে পারেন। আর যদি কার্লি হেয়ার হয়, তাহলে পেছনের দিকে স্টেপ কাট বা ইউ শেইপে চুল ছেঁটে নিতে পারেন।
৩) স্কয়ার শেইপের জন্য
স্কয়ার শেইপের ফেইসে চুল একদম ছোট করে ফেললে মুখ আরও বেশি চওড়া দেখাবে। শোল্ডার লেন্থ যেকোনো কাটের সাথে সাইড ব্যাংস কাট দিন। এটা আপনার জ-লাইনকে ঢেকে দিতে সাহায্য করবে। লং লেয়ার বা ব্লান্ট কাট ইজিলি ক্যারি করতে পারেন, এতে মুখের স্কয়ার ভাবটা কম দেখাবে।
৪) লম্বাটে ফেইস শেইপের জন্য
লম্বাটে মুখ এমনিতেই একটু শুকনো দেখায়, গালে ফোলাভাব থাকে না। সেজন্য হেয়ার কাটিং এমন হতে হবে যাতে করে মুখ কিছুটা ভারী লাগে। এক ছাটের লম্বা চুলে এই ধরনের ফেইস আরও বেশি ফ্ল্যাট লাগবে। সাইড সোয়েপ্ট লং হেয়ার এড়িয়ে চলুন। আপনার চুল শোল্ডার লেন্থে রেখে সাথে লেয়ার বা স্টেপ কাট দিয়ে নিতে পারেন।
এগুলো সাধারণ কিছু গাইডলাইন মাত্র। আপনি যেকোনো হেয়ার কাট-ই ট্রাই করতে পারেন। কনফিডেন্টলি ক্যারি করতে পারলে সব কিছুই মানিয়ে যাবে।
হেয়ার স্টাইলিং টিপস
আপনার রুচি ও আভিজাত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে আপনি নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করেছেন সেটার মাধ্যমে। কোন কোন বিষয় খেয়াল রেখে চুল বাঁধবেন বা আপনার ওভারঅল লুকটাকে কমপ্লিট করবেন, সেটা এখন জেনে নিন। স্টাইলিংটা এমন হওয়া উচিত যেটা আপনার পারসোনালিটিকেও পুরোপুরি কমপ্লিমেন্ট করবে। আপনি কোন প্রফেশনে আছেন, বয়স, আপনার আশেপাশের পরিবেশ সবকিছুই বিবেচনায় রাখবেন।
ইউনিভার্সিটি বা অফিসে যাওয়ার জন্য পনিটেল ও ফ্রন্ট পাফ অনেকেই প্রিফার করেন। একটু ক্যাজুয়াল থাকতে চাইলে মেসি বান বা সাইড ব্রেইড করে নিতে পারেন। আবার ছোট চুল থাকলে ছেড়েও রাখতে পারেন। আপনি যেই স্টাইলই পিক করুন না কেন, সেটা যেন আপনার কাজে বাঁধা সৃষ্টি না করে, বরং আপনার নিজস্ব স্টাইল ও ব্যক্তিত্বকে যাতে ফুটিয়ে তোলে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে এটি যেন কমফোর্টেবল হয়! এই ছোটখাটো বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে এলিগেন্ট ও ক্ল্যাসি ওয়েতে আপনি নিজেকে প্রেজেন্ট করতে পারবেন।
বিবেচনায় রাখুন আপনার বয়স
হেয়ার সেটিং করার সময় আপনার বয়সকে সবসময়ই প্রাধান্য দিতে হবে। টিনেজের হেয়ার স্টাইলের সাথে মধ্যবয়সী একজনের হেয়ার সেটিং কিছুটা হলেও আলাদা হওয়া উচিত। টিনেজাররা হেয়ার নিয়ে বিভিন্ন রকম এক্সপেরিমেন্ট বা ফিউশন স্টাইলিং করতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে একটু মোডেস্ট লুকে বেশি ক্ল্যাসি লাগে।
পোশাকের সাথে মানানসই হেয়ার স্টাইল
আউটফিটকে কমপ্লিমেন্ট করে এমন হেয়ার মেকওভার সিলেক্ট করতে হবে। শাড়ীর সাথে বা ট্র্যাডিশনাল লুকের সাথে খোঁপা, ব্রেইড হেয়ার স্টাইল খুব ভালো মানায় অথবা চুল স্ট্রেইট করে ছেড়েও রাখতে পারেন। কামিজ ও ওয়েস্টার্ন আউটফিটের সাথে লুজ কার্ল, সাইড বান, ফ্রেঞ্জ বেনি করতে পারেন কিংবা সুন্দর একটা হেয়ার কাট দেওয়া থাকলে খোলা চুলেই ভালো লাগে দেখতে।
অকেশন বুঝে হেয়ার সেটিং
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোন অকেশনের জন্য আপনি হেয়ার স্টাইলিং করছেন, সেটাও বিবেচনায় রাখুন। কোনো গ্ল্যামারাস পার্টি হলে হেয়ার ড্রেসিংয়ে আপনি আপনার লুকে ইনোভেশন বা বৈচিত্র্য আনতে পারেন। আপনার যদি স্টেইট হেয়ার হয়, তাহলে কার্ল করে নিয়ে স্টাইলিং করুন আর যদি এমনিতেই আপনার চুল কোঁকড়া হয়, তাহলে স্টেইটনার দিয়ে একটু টেনে নিন, চটজলদি লুকে একটা চেঞ্জ চলে আসবে।
ফ্রন্ট হেয়ার কীভাবে সেট করবেন?
ফ্রন্ট হেয়ার সেটিং কিন্তু খুবই ইম্পরট্যান্ট। সময় কম থাকলে পাফ করে নিয়ে ছেড়ে রাখুন বা ব্লো ড্রাই করে নিন। নানা ধরনের স্টাইলিশ হেয়ার ব্যান্ড বা অ্যাকসেসরিজ দিয়েও চুলের সাজে ভিন্নতা আনা যেতে পারে। তবে ফেইস শেইপ অনুযায়ী ফ্রন্ট হেয়ার সেট করুন। যেমন রাউন্ড শেইপের ফেইস হলে সামনের চুল পাফ করে বাঁধলে, এতে মুখ আরও গোল লাগবে। সেক্ষেত্রে জাস্ট এক সাইডে সিঁথি করে চিরুনি দিয়ে সামনের চুল সেট করে নিতে পারেন, অপরদিকে টুইস্ট করে ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে নিলে বেশ ভালো লাগবে। কপাল ছোট হলে ফ্রন্ট পাফ করতে পারেন, কপাল যদি চওড়া হয় তবে ব্যাংস কাট দিয়ে চুল খোলা রাখুন। এতে কপালের কিছু অংশ ঢেকে থাকবে, তার দেখতেও ভালো লাগবে।
তাহলে জেনে নিলেন, ফেইস শেইপ অনুযায়ী পারফেক্ট হেয়ার কাট ও স্টাইল নিয়ে দারুণ কিছু টিপস! যেকোনো স্টাইলই ট্রাই করতে পারেন, কনফিডেন্টলি ক্যারি করতে পারলে তাতেই আপনাকে লাগবে গর্জিয়াস। আর অন্যদের কাছেও হয়ে উঠবেন ফ্যাশন আইকন।
ছবি- সাজগোজ