ব্ল্যাকমেইল (Blackmail) কী তা আমরা সবাই জানি। সাদা বাংলায় বলতে গেলে, আপনার ব্যক্তিগত এমন কোন তথ্য বা চিত্র যদি কারো কাছে থাকে যেটি প্রকাশ পেলে আপনার সামাজিক মান-মর্যাদার হানি হবে এবং সেটি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে কেউ যদি আপনাকে ইচ্ছার বিরূদ্ধে কোন কাজ করাতে চায়, তাকেই বলে ব্ল্যাকমেইল। আপনি কি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন? তবে আর্টিকেলটি আপনার জন্যই! ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলে আইনি বিষয়গুলো কি হবে তা নিয়ে জানানোর আগে পুলিশি অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটা বিষয় শুরুতেই জানিয়ে দেই।
পুলিশি অভিজ্ঞতা
১) আমাদের সমাজে এমন কাউকে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ যার বাইরের রূপের ভেতরেও আরেকটা রূপ নেই। এই রূপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব একটা গৌরবের নয়। আমরা মানুষ, আমাদের প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত জীবন আছে – এই ব্যক্তিগত জীবনে কখনো কখনো আমরা এমন অনেক কিছু করে ফেলি যেগুলো প্রচলিত সামাজিক রীতিবিরূদ্ধ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অন্যায়ের সামিল।
২) বয়স বা মতিভ্রমের কারণে নিজেদের করা এই কাজগুলো নিয়ে আমরা অনুতপ্ত হই এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ভুলগুলো এড়িয়ে জীবনের যাত্রায় নতুন করে সামিল হই।
৩) সমস্যাটা তখনই হয়, যখন অতীতের করা এই ভুলগুলোর সুযোগ নিয়ে কোন নরাধম আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎকে তছনছ করে দিতে চায়। এটা কখনো কখনো ঘটে অর্থের লোভে, অথবা ঘটে নিতান্তই হিংসা চরিতার্থ করতে।
৪) আমাদের সমাজও হিপোক্রেসি-তে পরিপূর্ণ। অতীতের ভুলের সুযোগ নিয়ে ওই হতভাগ্যকে মাটির তলে পিষে ফেলতে আমরা সবাই মুখিয়ে থাকি। একটাবারের জন্যেও ভাবি না, এরকম ভুল আমি নিজে না করলেও আমারই পরিবারের কেউ করে ফেলতে পারে।
৫) এ ধরণের ব্ল্যাকমেইল-এর শিকার হয়ে আত্মহত্যা আমাদের দেশে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। অতীতের তথাকথিত ভুলের প্রায়ঃশ্চিত্ত কী নির্মম ভাবেই না করে ওই হতভাগ্য!
ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলে করণীয়
এবার কাজের কথায় আসি। আপনি যদি এ ধরণের ব্ল্যাকমেইল-এর শিকার হন, তবে নিম্ন লিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুনঃ
ক) শুরুতেই যে কথাটি মনে রাখবেন সেটি হচ্ছে- আপনি অপরাধী নন, ভিকটিম। ইটস নট ইয়োর ফল্ট। মাথা উঁচু রাখুন। আপনার অতীতকে আপনি পেছনে ফেলে এসেছেন, সেটাকে খুঁচিয়ে বের করে কোন কাপুরুষ বর্বর যদি ফায়দা লুটতে চায় সেটা আপনার দোষ না।
খ) দেশের প্রচলিত আইন সম্পূর্ণরূপে আপনার পক্ষে। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৮৩ ধারা অনুযায়ী সাদা বাংলায় বললে, যে কোন ধরণের ব্ল্যাকমেইল-কে এক্সটরশন বা চাঁদাবাজির আওতায় ফেলা যাবে, ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী এর শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড, সেটি জরিমানাসহ বা ব্যতীরেকে।
ইন্টারনেট/ফেইসবুক-এর মাধ্যমে কেউ যদি আপনার ক্ষতি করতে চায় সেক্ষেত্রে আইনটি দেখুন –
ICT (Amendment) Act-2013
According to the Section 57 of the ordinance, if any person deliberately publishes any material in electronic form that causes to deteriorate law and order, prejudice the image of the State or person or causes to hurt religious belief the offender will be punished for maximum 14 years and minimum 7 years imprisonment. It also suggested that the crime is non-bailable.
আপনি ঠিক দেখেছেন। ফেইসবুকে কেউ আপনার আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করলে সাহস করে মামলা করে দিন, প্রমাণ হলে বাছাধন ন্যুনতম ৭ বছর “রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায়” ফ্রিতে থাকা খাওয়ার সুবিধা পাবে। এটা জামিনের অযোগ্য অপরাধ। ই-মেইলে অভিযোগ জানাতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়। প্রয়োজনবোধ করলে চলে আসতে পারেন ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের Cyber Crime Unit অফিসে। ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আলামতের স্ক্রীনশট, লিংক, অডিও/ভিডিও ফাইল অথবা রিলেটেড ডকুমেন্টস লাগবে, তাই Address Bar এর URL সহ স্ক্রীনশট নিয়ে রাখুন।
গ) যখন বুঝতে পারবেন আপনি ব্ল্যাকমেইল-এর শিকার হচ্ছেন, ভয় না পেয়ে কাছের মানুষজনের সহায়তা নিন। প্রয়োজনে পরিবারকে জানান। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারকে জানাতে দ্বিধা করেন। জেনে রাখুন, আপনার চরম দুঃসময়ে আপনার পরিবারই আপনার সবচাইতে বড় ভরসা। তারা হয়তো আপনার অতীতের ভুলের কারণে কষ্ট পাবেন, কিন্তু প্রাথমিক ধাক্কাটা কেটে গেলে আপনার সাহায্যে তারা এগিয়ে আসবেন এটা মোটামুটি ১০০ ভাগ নিশ্চিত।
ঘ) শুরুতে যা বলেছি সেটা আবারো বলি, মনের জোর হারাবেন না বা নিজেকে দোষ দেবেন না। ব্ল্যাকমেইলিং একটি জঘন্য অপরাধ, তথাকথিত সমাজ আপনাকে যতই ছোট করতে চাক না কেন আইন অনুযায়ী আপনি সহায়তা পাবেন। সমাজের মুখোশধারী মুরুব্বিদের চোখ-কপালে তোলাকে অগ্রাহ্য করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন, আইনের সহায়তা নিন।
মনে রাখবেন, “Every saint has a past and every sinner has a future.” একজন সুনাগরিক হিসেবে আপনার সচেতনতা ও সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।
ছবিঃ সাটারস্টক